Advertisement
০৬ মে ২০২৪
JU Student Death

ফোন পেয়ে হস্টেলে এসে প্রথমেই গেট বন্ধ করেন জয়দীপরা, সে দিন আর কে কে ছিলেন? সন্ধানে পুলিশ

জয়দীপের কাছে ফোন আসে ঘটনার দিন রাত ১১টা ৪৫ মিনিট নাগাদ। দ্বিতীয় বর্ষের এক পড়ুয়া জয়দীপকে জানান, মেন হস্টেলের তিনতলা থেকে প্রথম বর্ষের এক ছাত্র পড়ে গিয়েছেন।

জয়দীপ ঘোষ।

জয়দীপ ঘোষ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০২৩ ১৯:০৮
Share: Save:

ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বলছে হস্টেলের বারান্দা থেকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথমবর্ষের ছাত্রটি ঝাঁপ দিয়েছিলেন ১১টা ৪৫ মিনিট নাগাদ। পুলিশ রবিবার জানতে পেরেছে, ওই একই সময় ফোন গিয়েছিল হস্টেলের প্রাক্তনী জয়দীপ ঘোষের কাছেও। যাঁকে ইতিমধ্যেই হস্টেলের গেট বন্ধ করার ঘটনায় হেফাজতে পেয়েছে পুলিশ। তদন্তে জানা গিয়েছে, গত ৯ অগস্ট রাতে ওই ফোন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই হস্টেলে চলে এসেছিলেন জয়দীপ। আর তার পরই গেট বন্ধ হয়ে যায় হস্টেলের।

পুলিশ জানতে পেরেছে, ‘দাদা’ বলেই হস্টেলের জুনিয়ররা কথা শুনত জয়দীপের। তাই জয়দীপ এবং তার মতো অন্য ‘দাদা’দের নির্দেশেই হস্টেলের গেট বন্ধ করা হয়। কিন্তু গেট বন্ধ করার নেপথ্যে জয়দীপ ছাড়া আর কারা ছিলেন, আপাতত তাঁদেরই সন্ধানে রয়েছে পুলিশ।

যাদবপুরকাণ্ডে পুলিশকে হস্টেলে ঢুকতে বাধা দেওয়ার অভিযোগে শনিবারই গ্রেফতার করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী জয়দীপকে। ‘আন্তর্জাতিক সম্পর্ক’ বিভাগের ছাত্র জয়দীপের বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামে। যদিও গত কয়েক বছর ধরে তিনি বিক্রমগড়ের একটি ভাড়াবাড়িতে থাকতেন। সে জন্যই ৯ অগস্ট রাতে ফোনে দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই হস্টেলে চলে আসতে পেরেছিলেন।

পুলিশ জেরা করে জানতে পেরেছে, জয়দীপের কাছে ফোন আসে গত ৯ অগস্ট রাত ১১টা ৪৫ মিনিট নাগাদ। সেই সময় দ্বিতীয় বর্ষের এক পড়ুয়া জয়দীপকে জানান, তিনতলা থেকে প্রথম বর্ষের এক ছাত্র পড়ে গিয়েছে। শুনেই তিনি চলে আসেন। এর পরই বন্ধ করিয়ে দেওয়া হয় হস্টেলের মেন গেট। পুলিশ জেরা করে জানতে পেরেছে, যাতে হস্টেলে পুলিশ বা অন্য কেউ সেই সময় ঢুকতে না পারেন, সে জন্যই ওই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। এমনকি, পরে হাসপাতালে গিয়েও যাদবপুরের বাংলা বিভাগের ওই প্রথম বর্ষের ছাত্রের সঙ্গে পুলিশ দেখা করতে পারেনি বলে অভিযোগ। পুলিশ সূত্রে খবর, হাসপাতালে পুলিশকে না ঢুকতে দেওয়ার নেপথ্যেও জয়দীপদের মতোই কয়েকজন যুক্ত। তাদের জন্যই পুলিশ হাসপাতালে ওই ছাত্রের বয়ান রেকর্ড করতে পারেনি।

শনিবার রাতে গ্রেফতারির আগে জয়দীপকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। হস্টেলের গেট বন্ধ করে কর্তব্যরত পুলিশকর্মীকে কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করা হয় জয়দীপের বিরুদ্ধে। রবিবার জয়দীপকে আদালতে তোলা হলে ২৪ অগস্ট পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেয় আদালত।

গত ৯ অগস্ট রাতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলের এ২ ব্লকের নীচে রক্তাক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের এক ছাত্রকে। আঠারো বছরের গণ্ডি না পেরনো ওই ছাত্রটি দিন কয়েক আগেই থাকতে এসেছিলেন হস্টেলে। পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে জানতে পারে হস্টেলের তিন তলার বারান্দা থেকে কোনও ভাবে পড়ে যান ছাত্রটি। পরে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে ১০ অগস্ট তাঁর মৃত্যু হয়। এর পরেই এই ঘটনার তদন্তে নামে পুলিশ। হস্টেল আঁকড়ে পড়ে থাকা প্রাক্তনীদের উপর ছেলের মৃত্যুর দায় চাপান মৃত ছাত্রের বাবা-মা। র‌্যাগিংয়ের অভিযোগও করেন। পুলিশ একে একে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী এবং ছাত্র মিলিয়ে গ্রেফতার করে জয়দীপ-সহ ১৩ জনকে

পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনার দিন রাত ১২ নাগাদ দু’জন যাদবপুর থানায় আসেন। তাঁরা নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া এবং হস্টেলের আবাসিক বলে পরিচয় দেন। তাঁরা জানান, তার কিছু ক্ষণ আগে এক জন পড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন। এর পরেই যাদবপুর থানার পুলিশ হস্টেলের উদ্দেশে রওনা দেয়। গেটের কাছে গিয়ে পুলিশকর্মীরা জানতে পারেন, এক জনকে জখম অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এর পরে পুলিশ হস্টেলে ঢুকতে চাইলে তাদের বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। পুলিশ সূত্রে খবর, যাঁরা সেদিন পুলিশকে হস্টেলে ঢুকতে বাধা দিয়েছিলেন সেই রাতে, তাঁদের মধ্যেই জয়দীপ অন্যতম। পুলিশকে বাধা দেওয়ার অভিযোগের ভিত্তিতে পৃথক মামলাও রুজু হয়। সেই মামলায় চার জনকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় শনিবার। তার পরেই জয়দীপকে গ্রেফতার করা হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE