E-Paper

দেওয়াল ভাড়ায় নিয়ে অফিস! গার্স্টিন প্লেসের বাড়ি যেন জতুগৃহ

এই ভবনের এ হেন শোচনীয় অবস্থা অফিসপাড়ার অন্যান্য বহুতলগুলিতে নিরাপত্তার বন্দোবস্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। জানা যাচ্ছে, এই ভবনে ছিল না কোনও আধুনিক অগ্নি-নির্বাপণ বন্দোবস্ত।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০২৪ ০৭:২৯
রবিবার সকালেও গার্স্টিন প্লেসের বাড়ি থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখা গিয়েছে।

রবিবার সকালেও গার্স্টিন প্লেসের বাড়ি থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখা গিয়েছে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

ভাড়ায় নেওয়ার মতো ঘর আর অবশিষ্ট নেই। সবই ভর্তি। তবে দেওয়াল তো আছে! বর্গফুট মেপে বাড়ির দেওয়াল-ই দেওয়া হয়েছে ভাড়ায়। এর পরে সেই দেওয়ালের সামনে টেবিল-চেয়ার পেতে চালু হয়ে গিয়েছে আস্ত অফিস! যাতায়াতের পথ জুড়ে এমন ভাবেই দিনের পর দিন চলেছে পাঁচ নম্বর গার্স্টিন প্লেসের পুরনো ভবনের ব্যবসায়িক কাজকর্ম। অভিযোগ, আগুন লাগলে বা মাত্রাতিরিক্ত ভারে পুরনো ভবনটি ভেঙে পড়লে কী হবে, তা নিয়ে ভাবা হয়নি কিছুই। শনিবার ভোরে ওই ভবনে অগ্নিকাণ্ডের পরে এমনই নানা তথ্য সামনে আসছে। রবিবারও সেখানে ধোঁয়া দেখা গিয়েছে। ঘটনাস্থলে মোতায়েন রাখা হয়েছে দমকলের গাড়ি।

তবে এই ভবনের এ হেন শোচনীয় অবস্থা অফিসপাড়ার অন্যান্য বহুতলগুলিতে নিরাপত্তার বন্দোবস্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। জানা যাচ্ছে, এই ভবনে ছিল না কোনও আধুনিক অগ্নি-নির্বাপণ বন্দোবস্ত। ফলে জরুরি সময়ে প্রয়োজনে উদ্ধারকাজ করাও কঠিন হয়ে দাঁড়াত। শহরের অফিসপাড়ায় নিয়মিত যাতায়াতকারীদের দাবি, ওই চত্বরের বহু পুরনো ভবনেরও একই অবস্থা। নিয়মিত নজরদারি তো দূর, কবে সেগুলি ভেঙে পড়ে বিপদ ঘটবে, তা নিয়েও কারও মাথাব্যথা নেই। কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, শহরে এমন বিপজ্জনক ব্যবসায়িক বহুতল রয়েছে অন্তত ১৮টি। এর মধ্যে ছ’টিতে ‘কালবিলম্ব না করে’ সংস্কার শুরু করা প্রয়োজন। রাজ্যের দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু বলেন, ‘‘দফতরের সব আধিকারিকদের কড়া নির্দেশ পাঠিয়েছি। দ্রুত পরিদর্শনের পরে পদক্ষেপ করতে বলেছি। এর পরেও কেউ বসে থাকলে ব্যবসায়িক লাইসেন্স ধরে তলব করা হবে। গার্স্টিন প্লেসের ঘটনা দেখে অন্তত চোখ খোলা উচিত।’’

শনিবার ভোর সাড়ে ৪টে নাগাদ আগুন লাগে গার্স্টিন প্লেসের পাঁচ নম্বর বাড়িটিতে। ছাদ ভেঙে পড়ে পুরনো ওই চারতলা বাড়িটির। সেখানে রয়েছে অন্তত ১৭ জন আইনজীবীর অফিস, প্রায় ২০টি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ঘর। ছাদের উপরে ঘর করে সেখানে থাকার জন্যও ভাড়া দেওয়া ছিল। এখানেই অফিস থাকা ব্যাঙ্কশাল আদালতের আইনজীবী জয়িতা চক্রবর্তী বললেন, ‘‘৫০ বর্গফুট জায়গা ভাড়া নিয়ে আমি অফিস করেছি। অনেকে একটা ঘর তিন-চার জন মিলেও নিয়েছেন।’’ জয়িতা জানান, আগে তাঁর অফিস ছিল এই ভবনেরই দোতলায়। ১২০ বর্গফুটের জায়গায় তিন জন টেবিল পেতে বসতেন। অনেকেই জায়গা ভাড়া নিয়ে মাঝখানে কাঠ বা বোর্ড বসিয়ে পৃথক চেম্বার করে নেন। এই পথেই এই ভবনের বারান্দা, সিঁড়ি দিয়ে উঠে যাতায়াতের জায়গার দেওয়ালও ভাড়া নেওয়া হয় বলে খবর। এমনই দেওয়াল নিয়ে অফিস বানানো এক ব্যক্তি বলেন, ‘‘দেওয়াল মেপে মাসে দেড়-দু'হাজার টাকা ভাড়া হয়। দিনে অন্তত হাজার দু’য়েক লোক এখানে আসেন। এত ব্যস্ত জায়গায় ঘর পাওয়া-ই তো মুশকিল।’’

এখানকার এক বাসিন্দার আবার অভিযোগ, সময়ের সঙ্গে লোকের সংখ্যা এত বেড়েছে যে, যে যার খুশিমতো মেজ়নাইন তল তৈরি করে নিয়েছে। পুরনো দিনের বাড়ি হওয়ায় সিলিংয়ের উচ্চতা অনেকটাই বেশি। তারই মাঝে যেমন খুশি সিঁড়ি বা তল তৈরি করা হয়েছে। এলাকাটি কলকাতা পুরসভার ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। এখানকার কংগ্রেস পুরপ্রতিনিধি সন্তোষ পাঠকেরও অফিস রয়েছে এই ভবনে। তাঁর দাবি, ‘‘এখানেও বাড়িওয়ালা-ভাড়াটে সমস্যা রয়েছে। এক এক জন এত কম টাকায় ভাড়া নিয়ে রয়েছেন যে, সংস্কারের কাজ করা মুশকিল। আলাদা করে সংস্কার করার জন্য তাঁরা টাকাও দিতে চান না। পুড়ে যাওয়ার পরে নিশ্চয়ই এই বাড়ির হাল ফিরবে।’’

তবে নিজেকে বাড়িটির বর্তমান মালিক বলে দাবি করে অরিজিৎ ঘোষ নামে এক ব্যক্তি বললেন, ‘‘পুরনো বাড়ি যেমন ভাবে পেয়েছিলাম, তেমনই আছে। তেমন কোনও সংস্কার করা হয়নি। এর পরে নতুন ভবন উঠলে ভাড়াটেরা না আবার অনৈতিক কিছু দাবি করতে থাকেন!’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Fire Accident Garstin Place Fire Kolkata BBD Bagh

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy