Advertisement
E-Paper

ইংরেজিতে কথা বলে সরকারি ভবনে হাতসাফাই ‘বই বিক্রেতা’র!

চেহারায় তেমন জেল্লা নেই ঠিকই। কিন্তু বাকচাতুর্য এমনকি চোস্ত ইংরেজিতে কথা বলে অন্যকে বশ করার প্রতিভা তার সাংঘাতিক।

শিবাজী দে সরকার

শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৯ ০০:৩৬
সৌরভ সরকার

সৌরভ সরকার

চেহারায় তেমন জেল্লা নেই ঠিকই। কিন্তু বাকচাতুর্য এমনকি চোস্ত ইংরেজিতে কথা বলে অন্যকে বশ করার প্রতিভা তার সাংঘাতিক। কাঁধে ব্যাগ নিয়ে বছর চল্লিশের ‘বই বিক্রেতা’টি এক বার যে সরকারি অফিসে যেতেন, সেখানে আর দ্বিতীয় বার পা রাখতেন না। আর সেখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরে লোকজন বুঝতে পারতেন কারও ল্যাপটপ কিংবা কারও মোবাইল ফোন গায়েব হয়ে গিয়েছে। শেষে ভবানীপুর এলাকার দু’টি চুরির ঘটনায় শেষ পর্যন্ত ঘুঘু ফাঁদে পড়ল।

ভবানীপুর থানার পুলিশ জানাচ্ছে, বছর চল্লিশের ওই ব্যক্তির নাম সৌরভ সরকার। বই বিক্রেতা সেজে কাঁধে বইয়ের ব্যাগ নিয়ে সে চিত্তরঞ্জন ক্যানসার হাসপাতাল, গুজরাটি এডুকেশন সোসাইটি, সল্টলেকের অরণ্য ভবনে ঢুকে লোকজনের চোখে ‘ধুলো’ দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছে মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ। যেগুলি চাঁদনি এলাকার একটি দোকান থেকে পুলিশ উদ্ধার করেছে।

তদন্তকারীরা জানান, চিত্তরঞ্জন ক্যানসার হাসপাতালের গবেষকদের দু’টি ল্যাপটপ, গুজরাতি এডুকেশন সোসাইটি থেকে দু’টি মোবাইল, অরণ্য ভবন এবং ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ফর জুরিডিক্যাল সায়েন্সেসের কর্তাদের ল্যাপটপ চুরিরও অভিযোগ রয়েছে সৌরভের বিরুদ্ধে। পুলিশের দাবি, টালিগঞ্জের এক বেসরকারি হাসপাতালে চুরির ঘটনাতেও সে জড়িত।

কী ভাবে সৌরভ ঢুকে পড়ত সরকারি ভবনে?

পুলিশ জানায়, বই বিক্রেতা সেজে সে সরকারি অফিস কিংবা শিক্ষা কেন্দ্রের নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে। কেতাদুরস্ত চলনবলনের মধ্য দিয়ে সে সহজেই নিজেকে নিরাপত্তারক্ষীদের সন্দেহের ঊর্ধ্বে নিয়ে যেত। মূলত দুপুরে অফিসে যখন ‘লাঞ্চ টাইম’ চলে, সেই সময় সে ওই সব জায়গায় যাতায়াত করত। নানা কথায় নিরাপত্তারক্ষীদের ভুলিয়ে সে পৌঁছে যেত গবেষক কিংবা শিক্ষাবিদের ফাঁকা চেম্বারে। তার পরে তাঁদের টেবিল থেকে ল্যাপটপ বা মোবাইল নিজের ঝোলায় ভরে নিয়ে মওকা বুঝে সেখান থেকে সরে পড়ত বলে অভিযোগ।

এ ভাবেই প্রতারণা ও হাত সাফাইয়ের কাজ সৌরভ ভালই চালাচ্ছিল। কিন্তু ভবানীপুর এলাকায় গত মাসের মাঝামাঝি দু’টি চুরির ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে সিসিটিভির ফুটেজে সৌরভের ছবি প্রথম দেখেন তদন্তকারীরা। কিন্তু স্থানীয় দুষ্কৃতীরা তাকে চিহ্নিত করতে না পারায় প্রথমে সমস্যায় পড়ে পুলিশ।

তদন্তকারীরা জানান, চিত্তরঞ্জন ক্যানসার হাসপাতালের চুরির ঘটনায় সেখানকার নিরাপত্তারক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদের সময় এক রক্ষীর মুখে উত্তম বৈদ্য নামে সৌরভের এক আত্মীয়েরা কথা জানা যায়। ভোটার তালিকা ধরে ওই নাম খুঁজতে বেশ কয়েক জন উত্তম বৈদ্যকে প্রথমে বাছা হয়। তাতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মৈপিঠে এক উত্তমের সন্ধান মেলে। পুলিশ জানায়, ছবি দেখে সৌরভকে চিনতে পারেন উত্তম। পুলিশ জানিয়েছে, ক্যানিংয়ে সৌরভের বাড়ি থাকলেও সে বারুইপুরের কাছে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকছিল। শুক্রবার সেখান থেকেই তাকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের দাবি, ২০০২ সালে গড়িয়াহাটের একটি লুটের ঘটনা-সহ কিছু অপরাধে জড়িত থাকায় পুলিশ সৌরভকে গ্রেফতার করেছিল। ছাড়া পেয়ে নিজের ভোল বদল করে নতুন কায়দায় অপরাধের জগতের সঙ্গে মিশে যায় সৌরভ।

Crime Police Thief
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy