Advertisement
E-Paper

ভুল কেন্দ্রে ছাত্রী, বাইকে বসিয়ে ছুটল পুলিশ

হাতের ঘড়িতে অফিসার দেখলেন, পরীক্ষা শুরু হতে বাকি মাত্র ১০ মিনিট। সঙ্গে থাকা অন্য অফিসারদের সঙ্গে কথা বলে তিনি স্থির করেন, যে ভাবেই হোক ওই ছাত্রীকে ঠিক পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া হবে। দ্রুত ব্যবস্থা করা হল পুলিশের মোটরবাইকের।

শিবাজী দে সরকার

শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৮ ০৩:৩০
সাইরিন ও তার বাবাকে ঠিক পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়ার জন্য রওনা হচ্ছে পুলিশ। সোমবার, খিদিরপুরে। নিজস্ব চিত্র

সাইরিন ও তার বাবাকে ঠিক পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়ার জন্য রওনা হচ্ছে পুলিশ। সোমবার, খিদিরপুরে। নিজস্ব চিত্র

মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হতে তখনও খানিকটা দেরি। সব ঠিক আছে কি না দেখতে পরীক্ষা কেন্দ্রগুলি ঘুরে দেখছিলেন পুলিশ অফিসারেরা। টহল চলাকালীন খিদিরপুরের একটি পরীক্ষা কেন্দ্রের সামনে এসে তাঁরা দেখেন, স্কুলের পোশাক পরা এক ছাত্রী কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে আসছে। সন্দেহ হওয়ায় অফিসার ছাত্রীটিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারেন, ওই পরীক্ষা কেন্দ্রে তার সিট পড়েনি। ভুল করে সে ওখানে চলে এসেছে।

হাতের ঘড়িতে অফিসার দেখলেন, পরীক্ষা শুরু হতে বাকি মাত্র ১০ মিনিট। সঙ্গে থাকা অন্য অফিসারদের সঙ্গে কথা বলে তিনি স্থির করেন, যে ভাবেই হোক ওই ছাত্রীকে ঠিক পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া হবে। দ্রুত ব্যবস্থা করা হল পুলিশের মোটরবাইকের। এক পুলিশকর্মী ওই পরীক্ষার্থী ও তার বাবাকে নিয়ে ছুটলেন পরীক্ষা কেন্দ্রে। একের পর এক সিগন্যাল সবুজ রেখে ‘গ্রিন করিডর’-এর মধ্যে দিয়ে ঝড়ের গতিতে পৌঁছল পুলিশের বাইক। স্কুলে পৌঁছতেই পরীক্ষা শুরুর কুড়ি মিনিটের মধ্যে পরীক্ষার্থীর প্রয়োজনীয় যাবতীয় ব্যবস্থা হয়ে গেল।

পুলিশ জানায়, সোমবার দুপুরে এ ভাবেই গ্রিন করিডর তৈরি করে ওই ছাত্রীকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেয় কলকাতা পুলিশ। যোগ্য সঙ্গত করলেন স্কুল কর্তৃপক্ষও। এর আগে দুর্ঘটনার শিকার হওয়া জখম ব্যক্তির চিকিৎসার জন্য বা অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য শহরের রাস্তায় গ্রিন করিডর করা হয়েছে। কিন্তু পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীকে পৌঁছে দিতে গ্রিন করিডর প্রথম করা হল বলেই দাবি করেছেন পুলিশের একাধিক কর্তা।

আরও পড়ুন: ‘পুড়ে গিয়েছে সব, তবু হাল ছাড়ব না’

পুলিশ জানায়, শুরুটা হয়েছিল ওয়াটগঞ্জ থানা এলাকার মোহন চাঁদ রোডে। ওয়াটগঞ্জ থানার ওসি অমিত বিশ্বাস টহল দিতে সেখানে পৌঁছন সকাল ১১টা ৫০ মিনিট নাগাদ। সঙ্গে সাব ইনস্পেক্টর তথাগত সাধু। তাঁরা দেখেন, এক পরীক্ষার্থী স্কুল থেকে বেরিয়ে আসছে কাঁদতে কাঁদতে। ঘটনার গুরুত্ব আঁচ করে অমিতবাবু পৌঁছে যান তার কাছে। জানতে পারেন, সাইরিন নাজ নামে ওই পরীক্ষার্থীর সিট পড়েছে বেলেঘাটা এলাকার মল্লিক গার্ডেন রোডের রামমোহন বিদ্যামন্দির গার্লস হাইস্কুলে। কিন্তু সে ভুল করে বঙ্কিম ঘোষ মেমোরিয়াল গার্লস স্কুলে চলে এসেছে।

লালবাজার সূত্রে খবর, তখনই ঘটনাস্থলে পৌঁছন ছাত্রীর বাবা আতাউর রহমানও। ওসি দ্রুত মোটরবাইকের ব্যবস্থা করে তথাগতবাবুকে বলেন, মেয়েটিকে ঠিক কেন্দ্রে পৌঁছে দিতে। পুলিশকর্তারা জানিয়েছেন, মেয়েটিকে মোটরবাইকে তুলে দিয়েই ক্ষান্ত হননি অমিতবাবু। লালবাজার কন্ট্রোল রুম, ট্র্যাফিক কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগও করেন যাতে খিদিরপুর থেকে বেলেঘাটা পর্যন্ত প্রায় ১৫কিলোমিটার রাস্তায় দ্রুত গ্রিন করিডর তৈরি করা যায়। যোগাযোগ করা হয় বেলেঘাটা থানার সঙ্গেও। পাশাপাশি কন্ট্রোল রুম ট্র্যাফিক গার্ডগুলিকে জানিয়ে দেয় বেলেঘাটা পর্যন্ত পরপর সিগন্যালগুলি যাতে কোনও অবস্থাতেই লাল না হয়, সবুজই থাকে। এজেসি বসু রোড, এজেসি বসু রোড উড়ালপুল, ইএম বাইপাস হয়ে চিংড়িঘাটা মোড় পেরিয়ে ১২টা ২২মিনিট নাগাদ পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছয় সাইরিন।

তার আগেই লালবাজারের নির্দেশে রামমোহন বিদ্যামন্দির গার্লস হাইস্কুলে পৌঁছে যান বেলেঘাটা থানার অফিসারেরা। পুলিশের কাছে খবর পেয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষও আগেভাগেই সব ব্যবস্থা করে রাখেন। স্কুলে পৌঁছনো মাত্রই সাইরিনকে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রায় ২৫ মিনিট পরে পরীক্ষা দিতে শুরু করে সে। ছাত্রীর বাবা আতাউর রহমান বলেন, ‘‘এ দিন মেয়েকে বাংলা পরীক্ষা শেষ করার জন্য অতিরিক্ত ৩০ মিনিট সময় দেওয়া হয়েছে।’’

পুলিশ জানায়, পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে খুশি সাইরিন। সে জানিয়েছে, নিজের অ্যাডমিট কার্ডটি সে দেখিয়েছিল পাড়ার এক মহিলাকে। তিনিই বলেছিলেন, খিদিরপুরের ওই স্কুলে তার সিট পড়েছে। পরীক্ষা আর দেওয়া হবে না ভেবে যখন সে প্রায় ভেঙে পড়েছিল তখনই পুলিশকাকুরা আসে। ছাত্রীর বাবা কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, পুলিশ না থাকলে তাঁর মেয়ের পরীক্ষা দেওয়াই হত না।

মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের যাতে কোনও অসুবিধা না হয় পর্ষদ সেটাই চায়। এ ক্ষেত্রে পুলিশ যা করেছে, তা খুবই প্রশংসনীয়।’’

Madhyamik Madhyamik Exam exam centre
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy