Advertisement
E-Paper

অটোর চাপে কি পুলিশও জুজু, প্রশ্ন ভুক্তভোগীর

হাতিবাগান-খন্না এলাকায় অটোচালকদের দাদাগিরি নিয়ে সরব হয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তিনি। অভিযোগ, উদাসীন থেকেছে পুলিশ। মাস ছয়েক না-কাটতে সেই বেপরোয়া অটোর ধাক্কাতেই তিনি এখন শয্যাশায়ী।

তিয়াষ মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:১৮
অমিত সেনগুপ্ত। -নিজস্ব চিত্র।

অমিত সেনগুপ্ত। -নিজস্ব চিত্র।

হাতিবাগান-খন্না এলাকায় অটোচালকদের দাদাগিরি নিয়ে সরব হয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তিনি। অভিযোগ, উদাসীন থেকেছে পুলিশ। মাস ছয়েক না-কাটতে সেই বেপরোয়া অটোর ধাক্কাতেই তিনি এখন শয্যাশায়ী। অভিযোগ জানিয়েছেন পুলিশে। অভিযোগ, এ বারও পুলিশ একই রকম উদাসীন।

তিনি ৭৪ বছরের এক বৃদ্ধ, অমিত সেনগুপ্ত। নলিন সরকার স্ট্রিটের বাসিন্দা। বিছানায় শুয়ে অসহায় অমিতবাবুর একটাই আর্তি, ‘‘ঘটনার পরে দিন দশেক কেটে গিয়েছে। আর কোন থানায় অভিযোগ জানাতে হবে, সেটাই বুঝে উঠতে পারলাম না। বুড়ো বয়সে আমার পা-টা যে ভেঙে দিল, তার শাস্তি কি আদৌ হবে?’’

আর হাতিবাগান-খন্না অঞ্চল? সেখানে গিয়ে দেখা গেল, অটোরাজ চলছে আগের মতোই। প্রশাসনও আগের মতোই উদাসীন। ওই এলাকায় অটোর দাপট নিয়ে অভিযোগ জানিয়ে তিনিই কলকাতার পুলিশ কমিশনারের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন মাস ছয়েক আগে। বৃদ্ধের অভিযোগ, সে চিঠির প্রেক্ষিতে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি পুলিশের তরফে। তার মধ্যেই এই ঘটনা।

কী ঘটেছিল সে দিন?

অমিতবাবু জানান, গত মাসের ২৮ তারিখ দুপুরে তেঘরিয়ায় চোখের ডাক্তার দেখিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। তাঁর অভিযোগ, খান্না-হাতিবাগানের মাঝে ডালিমতলা স্টপেজে বাস থেকে নামার সময়ে বাঁ দিক থেকে আসা একটি অটো জোরে ধাক্কা মেরে চলে যায়। খানিক দূরে ছিটকে পড়েন তিনি। নম্বর দেখার আগেই চম্পট দেয় অটোটি। লোকজন জড়ো হয়ে যায়। ‘‘কিন্তু পা ভেঙে যাওয়ায় আমি দাঁড়াতেই পারছিলাম না, আশপাশের কয়েক জনই ধরাধরি করে আমায় বাড়ি নিয়ে যান,’’ বিছানায় শুয়ে বলছিলেন অমিতবাবু। পরে, শহরের বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের জন্য কলকাতা পুলিশের বিশেষ প্রকল্প ‘প্রণাম’-এর স্বেচ্ছাসেবীর সাহায্যে হাসপাতালে গিয়ে পায়ে প্লাস্টার করান তিনি। অমিতবাবুর অভিযোগ, ‘‘অত ক্ষণ রাস্তায় পড়ে থাকলাম। এক জন পুলিশ বা ট্র্যাফিক সার্জেন্টও এলেনও না। যা করার পথচারীরাই করলেন।’’

ঘটনার পরে তিনি উল্টোডাঙা ট্র্যাফিক গার্ডে যোগাযোগ করেন। এক সার্জেন্ট বাড়িতে এসে তাঁকে দেখেও যান সে দিন। তবে অভিযুক্ত অটোর বিরুদ্ধে কী করা যায়, বা দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য তিনি কী করতে পারেন, সে বিষয়ে তেমন সাহায্য পাননি বলেই দাবি অমিতবাবুর। ‘প্রণাম’-এর সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করলেও তাঁকে বলা হয়, ‘‘এ রকম বহু অভিযোগ নিয়ে নাস্তানাবুদ আমরা। যতটা সম্ভব সাহায্য করেছি।’’

দুর্ঘটনার ধকল কিছুটা সামলে নিয়ে পরের দিন, ২৯ জানুয়ারি গোটা ঘটনা জানিয়ে স্থানীয় শ্যামপুকুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন অমিতবাবু। তাঁর দাবি, এর পরেও পুলিশ কিছু করেনি। প্রশাসনের কেউ তাঁর কাছে এসে বা টেলিফোন করে বিষয়টি জানতেও চাননি। এর পরে তিনি বারবার টেলিফোন করে থানায় খবর নিলেও, ইতিবাচক তথ্য মেলেনি। বরং বিষয়টি বারবারই এড়িয়ে গিয়েছে পুলিশ বলে অভিযোগ তাঁর।

অমিতবাবু বয়সের ভারে ন্যুব্জ। তার উপরে পায়ে প্লাস্টার হওয়ায় একেবারে ঘরবন্দি। তাঁর ৬৭ বছরের স্ত্রী, তিনটি স্ট্রোক হওয়ার পরে শয্যাশায়ী। তাঁদের মেয়ে সল্টলেকের শ্বশুরবাড়ি থেকে সপ্তাহে এক দিন করে এসে রান্না করা খাবার ফ্রিজে রেখে দিয়ে যান। তা খেয়েই গোটা সপ্তাহ কাটান বৃদ্ধ দম্পতি। এই অবস্থায় বারবার থানায় গিয়ে খোঁজ নেওয়াটাও তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি বলে জানালেন অমিতবাবু।

কিন্তু থানা কিছুই খবর না দেওয়ায় বাধ্য হয়ে তিনি বিষয়টি লালবাজারের ট্র্যাফিক কন্ট্রোল ও ডিসি ট্র্যাফিককে জানান। ওই এলাকার লাগামছাড়া অটোর দৌরাত্ম্য নিয়েও অভিযোগ করেন। এতে যে যাত্রীদের অবস্থা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে, জানান সে কথাও। তাতে কিছুটা হলেও নড়ে বসে প্রশাসন। গত মঙ্গলবার দুপুরে তাঁর বাড়িতে উল্টোডাঙা ট্র্যাফিক গার্ডের সার্জেন্ট এসে ফের দেখা করেন। ঘটনাটি শুনে, অভিযোগপত্র এবং চিঠি দেখে সার্জেন্ট নয়া বিধান দেন। জানান, দুর্ঘটনাটি যেখানে ঘটেছে, সেটা বড়তলা থানার অধীনে। শ্যামপুকুর থানায় নয়। সে কারণেই কোনও পদক্ষেপ করা যাচ্ছে না।

শ্যামপুকুর থানার পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, অভিযোগকারীকে প্রথম দিনই বলা হয়েছিল এটা এই থানার বিষয় নয়। কিন্তু তিনি যেহেতু এই থানা এলাকাতেই থাকেন, তাই এখানেই অভিযোগ দায়ের করতে চান। বৃদ্ধ ভদ্রলোকের অসুবিধার কথা ভেবে অভিযোগ নিয়ে নেন তাঁরা।

শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার দুপুরে অমিতবাবুর মেয়ে যান বড়তলা থানায় নতুন করে অভিযোগ দায়ের করাতে। অমিতবাবু জানান, সেখানে বলা হয়েছে, অজ্ঞাতপরিচয় অটোচালকের বিরুদ্ধে ব্যাঙ্কশাল আদালতে মামলা দায়ের হবে। সেখানে নিয়মিত হাজিরা দেওয়ার কথা বলা হয়। অমিতবাবু জানান, শরীরের এই অবস্থায় তাঁর পক্ষে সম্ভব নয় নিয়মিত আদালতে যাওয়া। তাই মামলা করেননি তিনি।

Auto Police Auto oppression
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy