নিউ টাউন থানায় সুমন মুখোপাধ্যায়। ছবি: শৌভিক দে।
পুলিশকে তাঁরা কোনও রিপোর্টই দেননি বলে হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছেন। অথচ মেডিক্যাল রিপোর্টের কথা উল্লেখ করেই পুলিশ নতুন করে জেরা করল পরিচালক-অভিনেতা সুমন মুখোপাধ্যায়কে।
পুলিশ জানায়, গত ২৩ মে রাজারহাটের একটি হোটেলে আহত হন অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। পরে তাঁর এক বন্ধু তাঁকে ভর্তি করিয়ে দেন একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানে স্বস্তিকা জানান, কাচের উপরে পড়ে গিয়ে তাঁর হাত কেটে গিয়েছে। পুলিশের দাবি, ওই হাসপাতালের চিকিৎসকের রিপোর্টে জানা গিয়েছে, দুর্ঘটনায় স্বস্তিকার হাত কাটেনি। তিনি নিজে বা অন্য কেউ তাঁর হাত কেটে দিয়েছেন। যদিও বাইপাসের লাগোয়া যে-হাসপাতালে স্বস্তিকা ভর্তি ছিলেন, তাদের তরফে বৃহস্পতিবার বলা হয়, তারা পুলিশকে কোনও ডাক্তারি রিপোর্ট দেয়নি।
ওই হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপার পার্থ ভট্টাচার্য এ দিন বলেন, “হাসপাতালের নিয়ম অনুযায়ী কোনও রোগী বা তাঁর বাড়ির লোকের অনুমতি ছাড়া তাঁর চিকিৎসা সংক্রান্ত কোনও রিপোর্ট বাইরের কাউকে দেওয়া হয় না। এ ক্ষেত্রে পুলিশ রিপোর্ট চেয়েছিল ঠিকই। আমরা রোগীর অনুমতি চেয়েছিলাম। কিন্তু তিনি সেই অনুমতি দেননি। তাই পুলিশকে রিপোর্ট দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।” হাসপাতাল সূত্রে অবশ্য জানা গিয়েছে, কৌশিক নন্দী নামে যে-চিকিৎসক ঘটনার দিন স্বস্তিকার চিকিৎসা করেছিলেন, তাঁর সঙ্গে পুলিশ ইতিমধ্যে কথা বলেছে।
তা হলে কীসের ভিত্তিতে পুলিশ মেডিক্যাল রিপোর্ট উদ্ধৃত করছে?
বিধাননগর পুলিশের এডিসিপি দেবাশিস ধর বলেন, “যে-তদন্ত চলছে, তা যথাযথ তথ্যপ্রমাণ ও কাগজপত্রের ভিত্তিতেই করা হচ্ছে।”
সুমনের কাছ থেকে এ দিন মূলত তিনটি বিষয় জানতে চায় পুলিশ।
• ডাক্তারি রিপোর্ট এক কথা বলছে। সুমন কেন অন্য রকম বলছেন? উত্তরে পুলিশকে সুমন বলেছেন, ঘটনার সময় তিনি ঘুমোচ্ছিলেন। আচমকা শব্দ পেয়ে উঠে দেখেন, আহত অবস্থায় স্বস্তিকা মেঝেতে পড়ে আছেন। তাই তাঁর পক্ষে এর বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়।
• আহত অবস্থায় স্বস্তিকাকে ফেলে সুমন বাড়ি চলে গিয়েছিলেন কেন? সুমন জানান, স্বস্তিকা যে নিজেই চিকিৎসার ব্যবস্থা করে নেবেন, সেই ব্যাপারে আশ্বস্ত হয়ে এবং স্বস্তিকার অনুরোধ মেনেই তিনি বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেন।
• হোটেলে সুমন পরিচয়পত্র দেখাননি কেন? সুমন বলেন, “দেখতে চাইলে নিশ্চয় দেখাতাম। কিন্তু কেউ তা দেখতে চায়নি।”
রাজারহাটের ওই হোটেলে ২৩ মে, শুক্রবার রাতে সুমন আর স্বস্তিকা একসঙ্গে ছিলেন। সেখানেই আহত হন স্বস্তিকা। যদিও সুমন বা স্বস্তিকা, কেউই এই বিষয়ে পুলিশের কাছে কোনও অভিযোগ দায়ের করেননি। পরের দিন সকালে সুমন সল্টলেকের বাড়িতে চলে যান। স্বস্তিকা ভর্তি হন হাসপাতালে। রবিবার সুমনকে ডেকে পাঠায় পুলিশ। একটানা ২২ ঘণ্টা তাঁকে বিভিন্ন থানায় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। শাসক দলের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের সমালোচনার ফলেই ওই নাট্যব্যক্তিত্বের এই হয়রানি বলে অভিযোগ ওঠে সমাজের বিভিন্ন মহল থেকে। হোটেল-কর্তৃপক্ষ ঘটনার লিখিত বিবরণ পুলিশকে জানান। তার ভিত্তিতেই সুমনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। হোটেলে ভাঙচুর, টাকা না-মেটানো এবং তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগ আনা হয়েছিল তাঁর বিরুদ্ধে।
তখনকার মতো সুমনকে ছেড়ে দিলেও তাঁকে আবার ডাকা হবে বলে বিধাননগরের গোয়েন্দা-প্রধান অর্ণব ঘোষ জানিয়ে দেন। সেই অনুযায়ী গত ১২ জুন, বৃহস্পতিবার সুমনের বাড়িতে গিয়ে নোটিস ধরিয়ে তাঁকে নিউ টাউন থানায় ডাকা হয়। তখন দেখা যায়, পুরনো অভিযোগ ছাড়াও সুমনের বিরুদ্ধে নতুন করে আত্মহত্যায় প্ররোচনা এবং মাদক সেবনের অভিযোগ এনেছে পুলিশ। ১৬ জুন নিউ টাউন থানায় যাওয়ার কথা থাকলেও শারীরিক অসুস্থতার জন্য সুমন যেতে পারেননি। এ দিন তিনি আইনজীবীদের সঙ্গে নিয়ে থানায় পৌঁছন বেলা ১টায়। আড়াইটে নাগাদ বেরিয়ে যান।
সুমনের আইনজীবী সৌম্যজিৎ রাহা বলেন, “আমার মক্কেল এক জন দায়িত্বশীল নাগরিকের মতোই এ দিন পুলিশের কাজে সহযোগিতা করেছেন।” এডিসিপি দেবাশিস ধর বলেন, “সুমনবাবুর বক্তব্য এবং সে-দিনের ঘটনার পরে পাওয়া তথ্যপ্রমাণের মধ্যে কিছু অসঙ্গতি আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতেই এ দিন তাঁকে থানায় ডাকা হয়েছিল।”
সুমনের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে জানা গিয়েছে, সুমন সে-দিন হোটেলে স্বস্তিকার সঙ্গে মাদক সেবন করেছিলেন কি না, তা জানার জন্য এর আগে তাঁর চুলের নমুনাও চেয়েছিল পুলিশ। কিন্তু এ দিন পুলিশ মাদক সেবনের ব্যাপারে কোনও রকম উচ্চবাচ্য করেনি। আর সুমনের কথায়, “এ দিন পুলিশ আমার সঙ্গে ভাল ব্যবহার করেছে। আমি জানিয়েছি, কাজে ব্যস্ত থাকায় আমার পক্ষে বারবার এ ভাবে থানায় হাজিরা দেওয়া সম্ভব নয়।” এডিসিপি দেবাশিসবাবু বলেন, “প্রয়োজনে আমরাই সুমনবাবুর বাড়ি গিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করব।”
তবে এ ব্যাপারে স্বস্তিকাকে এখনও জিজ্ঞাসাবাদ করেনি পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy