স্বামী মারা গিয়েছেন। তিন মেয়েকে নিয়ে কোনও মতে সংসার চালাচ্ছিলেন মা। এত অনটনের মধ্যেও নানা ভাবে বড় মেয়ের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার চেষ্টা করছিলেন। বিয়ের চেষ্টাও চলছিল। কিন্তু তার আগেই মাসির বাড়িতে এসে গণধর্ষণের শিকার হলেন বছর সাতাশের ওই তরুণী। তার পরে তরুণীর মা শুধু বলে চলেছেন, ‘‘দোষীরা যাতে উপযুক্ত শাস্তি পায়, সেটাই আমি চাই। এর জন্য সব রকম লড়াই করতেও আমি প্রস্তুত।’’
শনিবার বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ তারাতলা থানার ঢিল ছোড়া দূরত্বে, কলকাতা বন্দরের পরিত্যক্ত একটি কোয়ার্টার্সে নিয়ে গিয়ে ওই তরুণীকে গণধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। পুলিশ জানিয়েছে, মাংসের দোকানের এক কিশোর কর্মচারী তাঁকে আরও ভাল মাংস রয়েছে বলে লোভ দেখিয়ে ওই কোয়ার্টার্সে নিয়ে যায়। এর পরে তরুণীর মুখ বেঁধে পরপর ছ’জন তাঁকে ধর্ষণ করে। শুধু তাই নয়। অভিযোগকারিণী পুলিশকে আরও জানিয়েছেন, এক জন যখন ধর্ষণ করছিল, সামনে মোবাইল হাতে আর এক যুবক সেটি রেকর্ডও করে। অভিযুক্তদের কাছে থাকা তিনটি মোবাইল বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। তারা জানিয়েছে, ওই মোবাইলে গণধর্ষণের ঘটনার ভিডিও রেকর্ডিং মিলেছে। প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীদের অনুমান, শুধু মেয়েটিকে ব্ল্যাকমেল করার জন্য নয়। সোশ্যাল মিডিয়া এবং বিভিন্ন মাধ্যমে ওই ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার জন্যই অভিযুক্তেরা তা রেকর্ড করে।
যদিও মাংসের দোকানের যে কিশোর কর্মচারী তরুণীকে ওই কোয়ার্টার্সে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল বলে অভিযোগ, তার মা এ দিন দাবি করেছেন, ‘‘আমার ছেলে নির্দোষ। ওকে ফাঁসানো হয়েছে।’’ তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ওই কিশোর কোনও দিনই পড়াশোনা করেনি। বরং মেয়েদের উদ্দেশে কটূক্তি করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে।
রবিবার এক আত্মীয়ের বাড়িতে বসে তরুণীর মা জানান, বড় মেয়ের বিয়ের জন্য দেখাশোনা চলছিল। একটি পরিবারের সঙ্গে কিছুটা কথা এগিয়েছিল। তারই মধ্যে যে এমন ঘটে যাবে, ভাবতে পারেননি তিনি। ওই মহিলা আরও জানান, শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ মেয়ে মাংস কিনতে বেরিয়েছিল। কিন্তু ঘণ্টাখানেক পরেও না ফেরায় তিনি খোঁজ করতে বেরোন। কিছু দূর যাওয়ার পরেই তিনি দেখেন, পরিত্যক্ত কোয়ার্টার্সের দিক থেকে মেয়ে বেরিয়ে আসছে। পোশাক অবিন্যস্ত। ওই অবস্থায় মেয়েকে দেখে চিৎকার করে ওঠেন মা। কোনও রকমে তাঁকে বাড়ি নিয়ে গিয়ে পুরো ঘটনা শোনেন। এর পরেই তারাতলা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তরুণী।
তরুণীর বয়ানের ভিত্তিতে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লোকজনকে জি়জ্ঞাসাবাদ করে। মাংসের দোকানের কিশোর কর্মচারীকে শনাক্তও করেন তরুণী। ওই নাবালককে আটক করেই পুলিশ বাকি পাঁচ জনের কাছে পৌঁছয়।
পুলিশ জানিয়েছে, মূল অভিযুক্ত অভিষেক কুমার ছাড়াও মহেশতলার বাসিন্দা সুমিত সিংহ এবং পর্ণশ্রীর বাসিন্দা প্রদীপ চৌধুরী-সহ তিন নাবালককে শনিবার গ্রেফতার করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে মিলেছে মদের বোতল, সিগারেটের টুকরো। তদন্তকারীদের অনুমান, ওই কোয়ার্টার্সে রোজ অসামাজিক কাজকর্ম চলত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy