Advertisement
E-Paper

বিল মিটিয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর ঘরে আলো আনল পুলিশ

শুধু রিমি নয়, একই সমস্যায় পড়েছিল মানিকতলা মেন রোডের বাসিন্দা মেঘা দাস। বিল বকেয়া থাকায় তার বাড়িরও সংযোগ কেটে দিয়েছিল সিইএসসি। বাড়ি ফিরে অন্ধকার ঘরেই ইংরেজির বই খুলে বসেছিল ওই ছাত্রী।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৮ ০২:২৭
স্বস্তি: তখনও জ্বলেনি আলো। মোমবাতি জ্বেলেই পড়ায় মগ্ন রিমি ।

স্বস্তি: তখনও জ্বলেনি আলো। মোমবাতি জ্বেলেই পড়ায় মগ্ন রিমি ।

যে পুলিশ ভুল কেন্দ্রে পৌঁছে যাওয়া এক পরীক্ষার্থীর জন্য কয়েক মিনিটের চেষ্টাতেই তৈরি করে ফেলেছিল ‘গ্রিন করিডর’, সেই পুলিশই নিজের পকেট থেকে মিটিয়ে দিল আর এক পরীক্ষার্থীর বিদ্যুতের বিল!

সোমবার মাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষা শেষ হতেই বাড়ি ফিরে এসেছিল উল্টোডাঙার বিপ্লবী বারীন ঘোষ সরণির রিমি পুরকায়স্থ। পরের দিন ইংরেজি। পড়তে হবে। কিন্তু ঘরে ঢুকেই সে দেখে, আলো-পাখা সব বন্ধ। বিল বকেয়া থাকায় লাইন কেটে দিয়ে গিয়েছে সিইএসসি। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে রিমির। স্কুলের পোশাকেই মাকে নিয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়য় মেয়ে। থানায় গিয়ে সব জানায় পুলিশকে। রিমির কথা শুনে কালবিলম্ব না করে ঝাঁপিয়ে পড়ে পুলিশ। তাদের উদ্যোগেই নিম্নবিত্ত ওই পরিবারের ঘরে ফিরে আসে আলো।

শুধু রিমি নয়, একই সমস্যায় পড়েছিল মানিকতলা মেন রোডের বাসিন্দা মেঘা দাস। বিল বকেয়া থাকায় তার বাড়িরও সংযোগ কেটে দিয়েছিল সিইএসসি। বাড়ি ফিরে অন্ধকার ঘরেই ইংরেজির বই খুলে বসেছিল ওই ছাত্রী।

আরও পড়ুন: স্কুলের পাঁচিল ভাঙার প্রতিবাদে অবরোধ পড়ুয়া-অভিভাবকদের

সোমবার রাতে অবশ্য দুই বাড়িতেই আলো ফিরে এসেছে। মেঘার বাবা সিইএসসি-র দফতরে গিয়ে বকেয়া বিল মিটিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু রিমির পরিবার তা পেরে ওঠেনি। সেই বকেয়া মিটিয়েছেন তার এক ‘পুলিশকাকু’। ওই পরিবার জানিয়েছে, বিল মেটানোর শেষ দিন ছিল মঙ্গলবার। তার আগে সোমবারই কেন বিদ্যুৎ সংযোগ কাটা হল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ, বাড়িতে পরীক্ষার্থী আছে বলে বারংবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও সিইএসসি কর্মীরা তাতে কান দেননি। সিইএসসি-র এক কর্তার অবশ্য দাবি, দুই পরিবারেরই বেশ কয়েক মাসের বিল বাকি ছিল। তাই লাইন কাটা হয়। তাঁর কথায়, ‘‘পরে যখন আমরা জানতে পারি, ওই দুই বাড়িতে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা রয়েছে, তখন ফের লাইন জুড়ে দেওয়া হয়।’’ তত ক্ষণে অবশ্য বিল মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে।

পরে অবশ্য ফের বিদ্যুৎ সংযোগ আসায় নিশ্চিন্ত হয় সে। সোমবার, উল্টোডাঙার বাড়িতে।

পিতৃহীন রিমি মায়ের সঙ্গে থাকে দাদুর বাড়িতে। দাদু একটি দোকানে কাজ করতেন। এখন অসুস্থতার জন্য আর কাজে যান না। রিমির মামা এক বেসরকারি সংস্থার কর্মী। গত অগস্ট মাস থেকে জমতে জমতে মোট ২৫৭০ টাকা বিদ্যুতের বিল বকেয়া হয়ে গিয়েছিল তাদের। তাই এ দিন সিইএসসি সংযোগ কেটে দেয়।

বাড়ি ফিরে সব দেখে মাকে নিয়ে প্রথমে উল্টোডাঙা থানায় যায় রিমি। সেই থানার পুলিশ মা-মেয়েকে জানায়, রিমিদের বাড়ি মানিকতলা থানা এলাকায়। সেখানেই যেতে হবে। রিমির কাছে সব শুনে সাহায্যের আশ্বাস দেন মানিকতলা থানার আধিকারিক। পুলিশের গাড়িতে রিমিদের বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়। সঙ্গে যান এএসআই নির্মলকান্তি বর্মণ। তিনিই রিমিদের বাড়িওয়ালাকে সন্ধ্যার জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার অনুরোধ করেন। তাতে কাজ হয়। তার পরে নির্মলকান্তিবাবুই বকেয়া বিল মিটিয়ে দেন নিজের টাকায়। এর মাঝে কিছু ক্ষণ রিমি অন্ধকারে মোমবাতি জ্বেলেই পড়াশোনা করে।

খবর পেয়ে স্থানীয় ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অমল চক্রবর্তী রিমিদের বাড়ি যান। তিনিও সিইএসসি-কে সংযোগ ফিরিয়ে দিতে অনুরো‌ধ করেন। অবশেষে বকেয়া মেটানোর পরে আলো ফেরে রিমিদের ঘরে। রিমির কথায়, ‘‘দাদু আর কাজ করতে পারে না। তাই অনেক টাকা বকেয়া জমে গিয়েছিল।’’ আর মেঘা বলে, ‘‘মঙ্গলবারই বাবা বিল দিয়ে দেবে ভেবেছিল। তার আগেই ওরা লাইন কেটে দিল!’’

বড় হয়ে নার্স হতে চায় রিমি। মেঘা চায় তার বাবার মতো শিল্পী হতে। এ দিন দু’জনেরই পরীক্ষা ভাল হয়েছে। রিমি বলে, ‘‘পুলিশকাকু আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন। এটা কোনও দিনও ভুলব না। আমিও বড় হয়ে নার্স হিসেবে রোগীদের পাশে দাঁড়াতে চাই।’’

ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

Rimi Purakayastha Police Madhyamik candidate Electricity
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy