Advertisement
E-Paper

ফের তপ্ত কাশীপুর, মূল চাঁইরা অধরাই

কাশীপুরে অশান্তির ঘটনায় বুধবার রাতেই বেশ কয়েকটি অভিযোগ দায়ের হয়েছিল স্বপন চক্রবর্তী এবং আনোয়ার খানের বিরুদ্ধে। যার মধ্যে রয়েছে খুনের চেষ্টা (৩০৭), আঘাত করার (৩২৬) মতো জামিন-অযোগ্য ধারাও। এর মধ্যেই বুধবারের পরে শুক্রবার, ভোটের আগের দিনেও ফের অশান্ত হল কাশীপুর। এ দিনও কাশীপুর রোডে এমআইসি কোয়ার্টার্সের সামনে মুন্না সিংহকে মারধরের অভিযোগ ওঠে। ফের স্বপন ও তার দলবলের বিরুদ্ধে জামিন-অযোগ্য ধারায় অভিযোগ দায়ের হয় কাশীপুর থানায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৫২
(বাঁ দিকে) কাশীপুরে নিজের অফিসে স্বপন চক্রবর্তী। (ডান দিকে) আনোয়ার খান। শুক্রবার। —নিজস্ব চিত্র।

(বাঁ দিকে) কাশীপুরে নিজের অফিসে স্বপন চক্রবর্তী। (ডান দিকে) আনোয়ার খান। শুক্রবার। —নিজস্ব চিত্র।

কাশীপুরে অশান্তির ঘটনায় বুধবার রাতেই বেশ কয়েকটি অভিযোগ দায়ের হয়েছিল স্বপন চক্রবর্তী এবং আনোয়ার খানের বিরুদ্ধে। যার মধ্যে রয়েছে খুনের চেষ্টা (৩০৭), আঘাত করার (৩২৬) মতো জামিন-অযোগ্য ধারাও। এর মধ্যেই বুধবারের পরে শুক্রবার, ভোটের আগের দিনেও ফের অশান্ত হল কাশীপুর। এ দিনও কাশীপুর রোডে এমআইসি কোয়ার্টার্সের সামনে মুন্না সিংহকে মারধরের অভিযোগ ওঠে। ফের স্বপন ও তার দলবলের বিরুদ্ধে জামিন-অযোগ্য ধারায় অভিযোগ দায়ের হয় কাশীপুর থানায়।

প্রশাসনের অন্দরমহলের খবর, ১ নম্বর ওয়ার্ডের এই গণ্ডগোলে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে চায় সরকার। এমনকী, বড় নেতাদের গ্রেফতার করতেও কোনও অনীহা নেই। তবে তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হবে না, এ কথা বলছেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার, ডেপুটি কমিশনার (উত্তর) থেকে সংশ্লিষ্ট থানার ওসি— সকলেই। সেই আশ্বাসেই হয়তো কলকাতা পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল নেতা অকুতোভয় স্বপন চক্রবর্তীকে দেখা গেল কাশীনাথ দত্ত রোডে তাঁর নিজের অফিসেই। ঘণ্টাখানেকেরও বেশি সময় ধরে তিনি কথা বললেন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে।

সোনালি ফ্রেমের চশমা, সোনালি আর্ম-ব্যান্ড, গলায় সোনার চেন। পরনে আকাশি চেক শার্ট ও সোনালি-সবুজ পাড়ের লুঙ্গি। অফিসে বসেই বুক ঠুকে সগর্বে ঘোষণা করলেন, ‘‘পুলিশ যদি মনে করে আমি দোষী, তা হলে আমাকে ধরছে না কেন?’’ স্বপন চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘আনোয়ার আমাকে হেনস্থা করে ভোট লুঠ করতে চাইছে। কিন্তু আমি থাকতে তা হতে দেব না।’’ কেন তাঁকে হেনস্থা করতে চাইছেন আনোয়ার খান? স্বপন চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘ওর পিছনে উত্তর কলকাতার এক মন্ত্রী আছে। পরে সে এখান থেকে ভোটে দাঁড়িয়ে জিতে এই এলাকা দখল করতে চায়। এখন নির্দল দাঁড় করিয়ে সন্ত্রাস করতে চাইছে।’’

কী বলছেন আনোয়ার খান? এ দিন তিনি বলেন, ‘‘আমার পিছনে মুখ্যমন্ত্রী আছেন। যারা হার্মাদ, তাদেরই এলাকা দখলের দরকার পড়ে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘দলে থেকে যারা দলবিরোধী কাজ করে দলকে কালিমালিপ্ত করছে, তাদের সম্পর্কে উপরমহলে সব জানিয়েছি। ভোটটা মিটতে দিন, তার পরে দেখুন কী হয়!’’

কী ঘটেছিল এ দিন? পুলিশ সূত্রে খবর, শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ নিজের বাড়ির সামনেই গেটের ভিতরে বসে খবরের কাগজ পড়ছিলেন কাশীপুরের এমআইসি কোয়ার্টার্সের বাসিন্দা মুন্না সিংহ। অভিযোগ, আচমকা ১০-১২ জন যুবক গেটের ভিতরে ঢুকে এসে তাঁকে মাটিতে ফেলে বেধড়ক মারধর করতে থাকে। রিভলভারের বাঁট দিয়ে তাঁর কাঁধে আঘাত করা হয়। ইট দিয়ে থেঁতলে দেওয়া হয় ডান হাতের আঙুল। লাঠি দিয়ে মারা হয় তাঁর পিঠেও। ডান হাতের আঙুলে তিনটি সেলাই হয়েছে। মুন্না সিংহের অভিযোগ, এর পিছনে হাত রয়েছে স্বপন চক্রবর্তীরই। যদিও স্বপনবাবুর সাফাই, ‘‘আমি সকালে বাড়িতে ঘুমোচ্ছিলাম। আমাদের প্রার্থী সীতাদিই এসে আমায় প্রথম এই ঘটনার খবর দেন।’’

বুধবার নববর্ষের প্রথম দিনই উত্তপ্ত হয়েছিল কাশীপুর উদ্যানবাটী এলাকা। বোমা–গুলি চলেছিল বৃষ্টির মতো। ওই রাতেই স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করে আনোয়ার খান এবং স্বপন চক্রবর্তী গোষ্ঠীর দু’জন করে মোট চার জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার পরেই ফের এ দিনের এই ঘটনা। এ প্রসঙ্গে এ দিনই লালবাজারে কলকাতা পুলিশের কমিশনার সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ বলেন, ‘‘তদন্ত চলছে। অভিযোগ খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

সব মিলিয়ে কলকাতা পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে ভোটের লড়াই তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী সীতা জয়সোয়ারা এবং বিক্ষুব্ধ প্রার্থী জয়নাল আবেদিনের নয়, বরং আনোয়ার খান এবং স্বপন চক্রবর্তীরই ‘প্রেস্টিজ ফাইট’। যার ফাঁসে প্রায় প্রতিদিনের সন্ত্রাসে তটস্থ হয়ে রয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা। এ নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন পুলিশকর্তারাও। এক পদস্থ পুলিশ অফিসারের কথায়, ‘‘এই এলাকায় কখন যে কী হবে, বোঝা খুব কঠিন। প্রস্তুত থাকা ছাড়া আমাদের উপায় নেই।’’

Kashipur Trinamool Munna singha municipal election BJP Congress clash Swapan Chakrabarty
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy