Advertisement
০৮ মে ২০২৪

ন্যাশনালে নরকযাপন

ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের প্রসূতি বিভাগ। শারীরিক ধকলে কাবু সদ্য প্রসূতি মহিলারা ধীর পায়ে ওয়ার্ড লাগোয়া যে শৌচাগারগুলিতে আসা-যাওয়া করছেন তার সামনে নোংরা জল, এঁটোকাঁটা, কাদা।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৭ ০১:০৩
Share: Save:

ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের প্রসূতি বিভাগ। শারীরিক ধকলে কাবু সদ্য প্রসূতি মহিলারা ধীর পায়ে ওয়ার্ড লাগোয়া যে শৌচাগারগুলিতে আসা-যাওয়া করছেন তার সামনে নোংরা জল, এঁটোকাঁটা, কাদা। পোকা ভনভন করছে। ভেসে আসছে উৎকট গন্ধ। বেসিন উপচে পড়ছে। অধিকাংশ সদ্য প্রসূতি শৌচাগারে ঢোকা বা বেরোনোর সময়ে বমি করে ফেলছেন।

নাকে রুমাল দিয়ে শৌচাগারগুলির দরজা ঠেলতেই দেখা গেল অবর্ণনীয় দৃশ্য। স্নান ও মলমূত্র ত্যাগের জায়গায় ব্যবহৃত স্যানিটারি ন্যাপকিনের স্তূপ! শৌচাগারে সেগুলি পচছে, ফের জমছে নতুন স্তূপ! প্রসবের পরে যখন বেশি পরিচ্ছন্নতা দরকার তখন ওই শৌচাগার ব্যবহার করছেন সদ্যপ্রসূতি। তার পরেই তিনি সন্তানকে কোলে নিচ্ছেন, বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন!

চিকিৎসকেরাই জানাচ্ছেন, এ ভাবে সদ্য প্রসূতিদের দেহে সংক্রমণ ছড়িয়ে সেপসিসের আশঙ্কা থাকে। সরকারি সমীক্ষা অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গে প্রসূতি মৃত্যুর অন্যতম কারণ সেপসিস। সঞ্জীব মুখোপাধ্যায়, মল্লিনাথ মুখোপাধ্যায়ের মতো স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, অপরিচ্ছন্ন শৌচালয় বিশেষত শৌচাগারে খোলা জায়গায় জমা ব্যবহৃত স্যানিটারি ন্যাপকিন জীবাণুদের জায়গা। ই কোলাই, ক্লেবসিয়েল্লা, সালমোনেল্লা, সিগেলার জীবাণু এখানে জন্মাতে পারে, যা থেকে মা ‘ইউরেনারি ট্র্যাক ইনফেকশন’-এ আক্রান্ত হতে পারেন যা মৃত্যুও ডেকে আনতে পারে। মায়ের থেকে সদ্যজাতেরও নিওনেটাল সেপসিস হতে পারে।

ন্যাশনালে প্রসূতি বিভাগে ভর্তি মহিলাদের একটা বড় অংশ আসেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার নানা গ্রাম থেকে। তাঁরা জানালেন, এলাকার অনেকে শুধু নোংরা শৌচাগারের ভয়ে সরকারি হাসপাতালের বদলে দালাল মারফত ছোটখাটো নার্সিংহোমে যান ও সেখানে হাতুড়ে ডাক্তারের পাল্লায় পড়েন।

ন্যাশনাল কর্তৃপক্ষ জানেন এই অবস্থা। শৌচাগার নিয়ে অভিযোগ তাঁদের কাছে নতুন নয়। কিন্তু তাঁদের খুব একটা হেলদোলও নেই। সুপার পীতবরণ চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘৪০০ জন ঝাড়ুদারের পদে ১৩৭ জন। রোগী ভর্তি হচ্ছে শ’য়ে শ’য়ে। শৌচাগার সাফ থাকবে কী করে? সরকার লোক নিয়োগ না করলে পরিষেবা দেওয়া অসম্ভব।’’ হাসপাতালের শৌচাগার নোংরা রাখার জন্য তাঁরা দায়ী করছেন রোগী ও তাঁদের বাড়ির লোককে। কর্তৃপক্ষের কথায়, ‘‘ওঁরা যেখানে-সেখানে ব্যবহৃত ন্যাপকিন ফেলেন, প্যানে বোতল-কাপড় ঢুকিয়ে দেন, নর্দমায় খাবার ফেলে জল জমিয়ে দেন। তাই হাল ছেড়ে দিয়েছি।’’

পিজিতে রয়েছে মেকানাইজড ক্লিনিংয়ের ব্যবস্থা। কিন্তু কলকাতা মেডিক্যাল, নীলরতন বা আরজিকরে শৌচালয়ের একই দশা। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য আন্দোলনে জড়িতদের একটা বড় অংশ প্রশ্ন তুলেছেন, এত টাকা খরচ করে সরকারি হাসপাতালে ভবন হচ্ছে, গেট হচ্ছে, নিখরচায় পরিষেবা মিলছে তা হলে শৌচালয় সাফ হচ্ছে না কেন? কেন শৌচালয়ের পাশে বসছে না ব্যবহৃত স্যানিটারি ন্যাপকিন নষ্টের মেশিন? এ তো রোগীর প্রাথমিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। স্বাস্থ্যঅধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথীর সংক্ষিপ্ত জবাব, ‘‘আপনারা যা পারেন লিখে ফেলুন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

National Medical College Maternity department
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE