Advertisement
E-Paper

Posta Flyover: ভেঙে পড়ার স্মৃতি নয়, নতুন উড়ালপুল নিয়ে বাঁচতে চায় পোস্তা

কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (কেএমডিএ) অধীনে বিবেকানন্দ উড়ালপুলটি তৈরির মূল দায়িত্বে ছিল হায়দরাবাদের আইভিআরসিএল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০২২ ০৬:৩১
ধ্বংসস্তূপ: বিবেকানন্দ উড়ালপুল ভেঙে ফেলার তৃতীয় পর্যায়ের কাজ চলছে। রবিবার, পোস্তায়।

ধ্বংসস্তূপ: বিবেকানন্দ উড়ালপুল ভেঙে ফেলার তৃতীয় পর্যায়ের কাজ চলছে। রবিবার, পোস্তায়। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

উড়ালপুল তৈরির কাজ শুরুর পর থেকে ভেঙে পড়ার মাঝে কেটে গিয়েছে সাত বছর। ভাঙা উড়ালপুল সম্পূর্ণ সরিয়ে ফেলা হবে কি না, তা ঠিক করতে আবার লেগে গিয়েছে পাঁচ বছর! সম্পূর্ণ সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত হলেও সেই কাজ এখনও শেষ হয়নি। এর মধ্যেও পেরোতে চলল আরও এক বছর। পোস্তার বিবেকানন্দ উড়ালপুল ঘিরে এমনই গড়িমসি চলছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ। যে প্রশ্নটি সবচেয়ে বেশি ঘুরছে তা হল, পুরনো উড়ালপুল ভেঙে কী হবে? ওই জায়গায় কি নতুন উড়ালপুল হবে, নাকি ভাঙা উড়ালপুল সরিয়েই ক্ষতে প্রলেপ দেওয়ার চেষ্টা হবে?

পোস্তা এবং সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, তাঁদের অনেকেই নতুন উড়ালপুল তৈরির পক্ষে। প্রয়োজনীয় সতর্কতা ও পর্যাপ্ত পরিকাঠামো মেনে, সুস্পষ্ট পরিকল্পনা করে উড়ালপুল তৈরি হলে তাঁরা খুশি। তাঁরা বলছেন, ‘‘এখন শহরের উত্তর থেকে হাওড়া স্টেশনে যেতে সময় লাগে তিরিশ মিনিটেরও বেশি। বিবেকানন্দ উড়ালপুল হলে সেই সময় লাগত পাঁচ থেকে আট মিনিট। কিছু লোকের গাফিলতির জন্য মানুষকে কেন সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হবে?’’

কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (কেএমডিএ) অধীনে বিবেকানন্দ উড়ালপুলটি তৈরির মূল দায়িত্বে ছিল হায়দরাবাদের আইভিআরসিএল। ২০১৬ সালের ৩১ মার্চ তখনও পর্যন্ত ২.২ কিলোমিটার তৈরি হওয়া ওই উড়ালপুলের একাংশ ভেঙে ২৭ জনের মৃত্যু এবং ৮০ জনেরও বেশি লোক আহত হওয়ায় তড়িঘড়ি তদন্ত শুরু হয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে খড়্গপুর আইআইটি-র তিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এবং তৎকালীন মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে গড়া হয় তদন্ত কমিটি। দু’বছর পর রিপোর্ট জমা দেয় ওই কমিটি। তাতে গাফিলতির তত্ত্ব সামনে আসে। পুলিশ চার্জশিট দেয়। গ্রেফতার হন ১২ জন। এর পরে কিছু বছর কেটে গেলেও উড়ালপুলের ভবিষ্যৎ কী, সে নিয়ে স্পষ্ট উত্তর না মেলায় নানা মহলে সমালোচনা শুরু হয়।

এই প্রেক্ষিতে রেলের পরামর্শদাতা শাখা রাইটস, খড়্গপুর আইআইটি-সহ একাধিক বিশেষজ্ঞ সংস্থাকে দিয়ে উড়ালপুলের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়। কিন্তু উড়ালপুল সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলা উচিত, নাকি পুরনো কাঠামোর উপরেই নতুন উড়ালপুল তৈরি সম্ভব, কোনও সংস্থাই সেই উত্তর দিতে পারেনি বলে প্রশাসনের দাবি। শেষে সেতু বিশেষজ্ঞ ভি কে রায়নাকে দিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হলে তিনি উড়ালপুলটি সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলারই পরামর্শ দেন বলে জানানো হয়। সেই কাজই শুরু হয় গত বছরের জুনের মাঝামাঝি। এখন তৃতীয় পর্যায়ের ভাঙা চলছে। এর পর মালাপাড়ার দিকের চতুর্থ পর্যায়ের কাজ শুরু হবে।

তার পর কী? কেএমডিএ-র কোনও কর্তাই স্পষ্ট কিছু জানাতে চাননি। তাঁদের দাবি, সেতু ভাঙার কাজ শেষ হলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সেই সময়ে প্রশাসনের ভাঁড়ারের আর্থিক অবস্থা কেমন থাকে, তার উপরে নতুন সেতুর ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে। যদিও সেতু বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কেএমডিএ-র অন্যতম এক কর্তা বলেন, ‘‘রাইটস ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট জমা দিয়েছে। তাতে চার লেনের বদলে দু’লেনের (আপ বা ডাউন) সেতু তৈরি সম্ভব বলে জানানো হয়েছে। আগের সেতুটি হচ্ছিল ১৬ মিটার চওড়া, চার লেনের। কিন্তু ওই এলাকায় রাস্তা ২০ মিটার বা তার থেকে একটু বেশি চওড়া। ফলে সেতু আর বাড়ির মধ্যে ব্যবধান খুব কম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। নতুন উড়ালপুল হলে তা অনধিক ১০ মিটার চওড়া হলেই ভাল বলে জানানো হয়েছে।’’

সেতু ভেঙে পড়ার সময়ে তৈরি হওয়া ‘উড়ালপুল হটাও অভিযান সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক সুমিতকুমার দাস ওরফে বাপি বললেন, ‘‘এই সব দিক দেখে এগোলে ঠিক আছে, নয়তো ফের মামলা করব।’’ যদিও উড়ালপুল ভেঙে মৃত পোস্তা এলাকার ধূপকাঠি বিক্রেতা গোলাপ মালির ছেলে বিকাশের মন্তব্য, ‘‘প্রয়োজনীয় সতর্কতা নিয়ে নতুন করেই উড়ালপুল হোক। ভাঙা অংশ সরিয়ে দিলে তো বিবেকানন্দ উড়ালপুল মুছে যাবে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

Posta Flyover Posta
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy