Advertisement
১১ মে ২০২৪
Traffic Violation

ফোন কানে গাড়ি চালানো আটকাতে আবিষ্কর্তার কথাই ব্যবহারের ভাবনা

গত কয়েক বছরে অসময়ে মোবাইল ফোন ব্যবহার করার জেরে ঘটে গিয়েছে এমন বহু দুর্ঘটনা। শুধু স্টিয়ারিংয়ে বসেই যে এমনটা ঘটেছে, তা নয়। মোবাইলে কথা বলতে বলতে রাস্তা পেরোনোর সময়েও প্রাণ হারিয়েছেন অনেকে।

A Photograph of a girl crossing road

পন্থা: মোবাইলে কথা বলতে বলতে রাস্তা পেরোনোর মতো বিপজ্জনক প্রবণতা বন্ধ করতে সচেতনতা বাড়াতে চায় পুলিশ।  ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২৩ ০৭:০৭
Share: Save:

ঘটনা ১: করিমপুর থেকে মালদহ যাওয়ার পথে দৌলতাবাদের কাছে বালির ঘাট সেতুর রেলিং ভেঙে খালে পড়ে গিয়েছিল একটি যাত্রিবাহী বাস। যার জেরে সলিলসমাধি ঘটে ৪৩ জনের। তদন্তে উঠে আসে, খালে পড়ার কয়েক মুহূর্ত আগেই চালকের ফোন এসেছিল। পকেট থেকে মোবাইল বার করে এক হাতে স্টিয়ারিং, আর অন্য হাতে ফোন ধরে কথা বলছিলেন তিনি। তারই জেরে ঘটে বিপত্তি। পুলিশ হিসাব করে দেখেছে, মাত্র ২৯ সেকেন্ডের ফোন কলেই সব শেষ!

ঘটনা ২: রেড রোডে রোগী নিয়ে যাওয়ার পথে একটি অ্যাম্বুল্যান্স সরাসরি ধাক্কা মারে রাস্তার ধারের পাঁচিলে। এর পরে বেশ কয়েক বার পাল্টি খেয়ে থামে সেটি। অ্যাম্বুল্যান্সের চালক, সহকারী ও রোগী মারা যান। কোনও মতে বেঁচে যাওয়া, রোগীর এক আত্মীয় দাবি করেন, দুর্ঘটনার আগের মুহূর্তে চালক নিজের মোবাইল ফোন দেখাচ্ছিলেন সহকারীকে। তাঁদের মধ্যে কথা হচ্ছিল, এর পরে কোন হাসপাতালে রোগী তুলতে যেতে হবে তা নিয়ে!

ঘটনা ৩: শ্যামবাজারের কাছে পড়ুয়া-বোঝাই স্কুলবাস ধাক্কা মারে রাস্তার ধারের বাতিস্তম্ভে। দুমড়ে যায় বাসের সামনের অংশ। আহত হয় বেশ কয়েক জন পড়ুয়া। ‘পুলিশকাকুদের’ স্কুলপড়ুয়ার দল জানায়, স্টিয়ারিংয়ে বসেই মোবাইল ফোন বার করে ভাল গান চালানোর চেষ্টা করছিলেন ‘বাসকাকু’!

কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। গত কয়েক বছরে অসময়ে মোবাইল ফোন ব্যবহার করার জেরে ঘটে গিয়েছে এমন বহু দুর্ঘটনা। শুধু স্টিয়ারিংয়ে বসেই যে এমনটা ঘটেছে, তা নয়। মোবাইলে কথা বলতে বলতে রাস্তা পেরোতে গিয়ে, অথবা হেডফোন কানে গুঁজে রেললাইন পেরোনোর সময়ে বেঘোরে প্রাণ হারানোর কথা প্রায়ই শোনা যায়। সচেতনতার প্রচার বা পুলিশি ধরপাকড়েও পরিস্থিতি বদলায় না বলে অভিযোগ। এরই মধ্যে সামনে এসেছে খোদ মোবাইল ফোনের আবিষ্কর্তা মার্টিন কুপারের ক্ষোভের কথা। তিনি জানিয়েছেন, লোকজন সারা দিন যে ভাবে ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকেন, তেমনটা যে হবে, তা তিনি ভাবেননি। রীতিমতো ক্ষুব্ধ মার্টিন মনে করেন, পকেটের ভিতরে থাকা ছোট যন্ত্রটি বহু মুশকিল আসান করে দিতে পারে ঠিকই, কিন্তু মানুষ একটু বেশি মাত্রায় মোহগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।

মার্টিনের এই বক্তব্য নিয়েই নতুন করে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে কলকাতা পুলিশ। লালবাজার সূত্রের খবর, নতুন করে পথ-নিরাপত্তা সংক্রান্ত সচেতনতার প্রচারে মার্টিনের বক্তব্য তুলে ধরা হতে পারে। কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের যুগ্ম নগরপাল পদমর্যাদার এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘গাড়ি চালাতে চালাতে বা পথে হাঁটার সময়ে যাতে কোনও ভাবেই মোবাইল ফোনে কেউ কথা না বলেন, তার জন্য আবিষ্কর্তার এই বক্তব্য অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে। প্রয়োজনে তাঁর ছবি-সহ সমাজমাধ্যম এবং অন্যান্য মাধ্যমে প্রচার করা হবে।’’

এই সূত্রে লালবাজারের তরফে তুলে ধরা হয়েছে কেন্দ্রীয় সড়ক ও পরিবহণ মন্ত্রকের একটি রিপোর্ট। ‘ভারতে পথ দুর্ঘটনা ২০২১’ নামের সর্বশেষ প্রকাশিত ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২১ সালে দেশে মোট ৪ লক্ষ ১২ হাজার ৪৩২টি পথ দুর্ঘটনা ঘটেছে। যাতে মৃত্যু হয়েছে ১ লক্ষ ৫৩ হাজার ৯৭২ জনের। যানবাহন চালাতে চালাতে মোবাইল ফোন ব্যবহারের কারণে ঘটেছে ১৯৯৭টি দুর্ঘটনা। তাতে মৃত্যু হয়েছে ১০৪০ জনের। তবে, কলকাতায় এমন দুর্ঘটনার সংখ্যা গত কয়েক বছরে অনেকটাই কমিয়ে ফেলা গিয়েছে বলে লালবাজারের দাবি। কিন্তু, এখনও রাজ্যে নির্মূলহয়নি অসময়ে ফোন ব্যবহারের জেরে ঘটে চলা দুর্ঘটনা। এক ট্র্যাফিক পুলিশকর্তার মন্তব্য, ‘‘অন্যান্য সমস্ত জরিমানার মতো মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে করতে গাড়ি বা মোটরবাইক চালানোর ঘটনাতেও জরিমানা বাড়ানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা দিতে হতে পারে। কিন্তু, তার পরেও অ্যাপ-ক্যাব বা অ্যাপ-বাইক চালকদের কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ করা যায় না।’’ ফোনের আবিষ্কর্তা মার্টিন মনে করেন, ‘‘কিছু মানুষ মারা না গেলে কারও বোধ আসবে না।’’ পুলিশের এবং ভুক্তভোগীদের অভিজ্ঞতা, ‘‘শত মৃত্যুতেও অনেকেরই হুঁশ হয় না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE