E-Paper

গরাদের আড়ালে বসেই ফর্ম পূরণ, এসআইআর-পর্ব চলছে বন্দিদেরও

দেশের ১৯৫১ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ৬২ (৫) ধারা অনুযায়ী, কোনও ব্যক্তি জেলবন্দি থাকলে ভোটাধিকার হারান। এই নিয়ম সাজাপ্রাপ্ত এবং বিচারাধীন— দু’ধরনের বন্দিদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২৫ ০৮:৫৪

—প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) নিয়ে সমাজের নানা মহল সরগরম। ২৩ বছরের পুরনো ভোটার তালিকা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন নাগরিকদের অনেকেই। এসআইআর সময়ে শেষ হবে কিনা, তা নিয়ে আতান্তরে বুথ লেভেল অফিসারদের (বিএলও) একাংশ। সূত্রের খবর, এসআইআর-এর ঢেউ গিয়ে পৌঁছেছে রাজ্যের রাজ্যের বিভিন্ন সংশোধনাগারেও। বন্দিদের পরিজনদের অনেকেই ফর্ম নিয়ে হাজির হচ্ছেন বিভিন্ন জেলের দরজায়। কারা দফতর সূত্রের খবর, ফর্ম নিয়ে এলে সংশোধনাগারের নিয়ম মেনে সংশ্লিষ্ট বন্দিকে দিয়ে তা পূরণ ও সই করিয়ে পরিজনদের হাতে ফেরত দেওয়া হচ্ছে। কারা দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘কয়েকটি সংশোধনাগার থেকে খবর পেয়েছি, এখনও পর্যন্ত মূলত বিচারাধীন বন্দিদের পরিজনেরাই ফর্ম নিয়ে আসছেন। তবে, সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের পরিজনেরা ফর্ম নিয়ে এলে তাঁরাও একই সুবিধা পাবেন।’’

দেশের ১৯৫১ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ৬২ (৫) ধারা অনুযায়ী, কোনও ব্যক্তি জেলবন্দি থাকলে ভোটাধিকার হারান। এই নিয়ম সাজাপ্রাপ্ত এবং বিচারাধীন— দু’ধরনের বন্দিদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। এমনকি, পুলিশি হেফাজতে থাকলেও কোনও ব্যক্তি ভোট দিতে পারেন না। যদিও জামিনে ছাড়া পেলে যে কোনও অভিযুক্তই ভোট দিতে পারেন। অনেকেরই প্রশ্ন, বহু ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক নেতারা বিচারাধীন বন্দি থাকা অবস্থায় ভোটে দাঁড়ান। জেলে বসে জিতেছেন, এমন উদাহরণও আছে। এখানেই প্রশ্ন, হাজতে থাকা বিচারাধীন কোনও বন্দি ভোটে দাঁড়াতে পারলে ভোট দিতে পারবেন না কেন? প্রসঙ্গত, বন্দিদের ভোটাধিকার দেওয়া নিয়ে সুুুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলাও হয়েছে। সম্প্রতি সেই মামলায় প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাইয়ের বেঞ্চ এ ব্যাপারে কেন্দ্রের বক্তব্য জানতে চেয়েছে।

কারা দফতর সূত্রের খবর, বন্দি অবস্থায় ভোটাধিকার না-থাকলেও ভোটার লিস্টে নাম রাখা বা এসআইআর-এর মতো প্রক্রিয়ার অধিকার কেড়ে নেওয়া যায় না। সে ক্ষেত্রে বন্দিদের পরিজনেরা সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে নিয়ম মেনেই নথিপত্রে সইসাবুদের বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। তবে, কারা দফতরের আর একটি সূত্রের দাবি, সমস্ত সংশোধনাগারেই যে এসআইআর-এর ফর্ম নিয়ে বন্দিদের পরিজনেরা হাজির হচ্ছেন, এমন নয়। কলকাতা লাগোয়া এলাকার একটি সংশোধনাগারে সোমবার পর্যন্ত এসআইআর-এর ফর্ম নিয়ে আসেননি বন্দিদের পরিজনেরা। এক কারা-কর্তার বক্তব্য, ‘‘ফর্মে যে নিজের স্বাক্ষর লাগবেই, এমন কোনও নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। এসআইআর-এর ফর্মে বলা হয়েছে যে, ভোটার বা তাঁর পরিবারের কোনও সাবালক সদস্য স্বাক্ষর করতে পারবেন। তাই পরিজনেরা স্বাক্ষর করে দিলে আর সংশোধনাগারে আসার প্রয়োজনই নেই। তাই হয়তো দূর-দূরান্ত থেকে অনেকে আসছেন না।’’

উল্লেখ্য, কেউ সংশোধনাগারে বন্দি থাকলেও নথিপত্রে স্বাক্ষর করার মতো কিছু সুবিধা পাওয়া যায়। সম্প্রতি বিচারাধীন বন্দি হিসেবে বোলপুর জেলে বসে এসএসসি-র শি‌ক্ষক নিয়োগের পরীক্ষাও দিয়েছেন এক চাকরিপ্রার্থী। সে ক্ষেত্রে অবশ্য কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ প্রয়োজন হয়েছিল। কারা দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘বিচারাধীন বন্দি মানেই কিন্তু অপরাধী নন। দেশের আইন অনুযায়ী, অপরাধ প্রমাণ হওয়ার আগে পর্যন্ত কোনও ব্যক্তিকে অপরাধী বলা যায় না। তাই বিচারাধীন বন্দিরা সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের থেকে নাগরিক অধিকারের সুযোগ-সুবিধা কিছুটা বেশি পান।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

correctional home Election Commission

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy