Advertisement
E-Paper

বাজেনি সাইরেন, পুলিশের সামনেই পালায় বন্দিরা

পাঁচিল টপকে তিন জনকে পালাতে দেখে বাঁশি বাজিয়েছিলেন ওয়াচ টাওয়ারে থাকা পুলিশকর্মীরা। কিন্তু তার পরেও জেলের সাইরেন বাজেনি! রাত সাড়ে তিনটের সময় কালীঘাট সেতু থেকে তিন যুবককে হেঁটে আসতে দেখেছিলেন হরিশ চ্যাটার্জি ও হাজরা রোডের মুখে কিয়স্কে বসে থাকা পুলিশকর্মীরা। ওই তিন জন যে আদতে জেল পালানো বন্দি, তা বুঝতে পারেননি ওই পুলিশকর্মীরা!

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৪ ০২:৫০
ধৃত আজিম মিস্ত্রি। শনিবার বারুইপুর থেকে।-নিজস্ব চিত্র

ধৃত আজিম মিস্ত্রি। শনিবার বারুইপুর থেকে।-নিজস্ব চিত্র

পাঁচিল টপকে তিন জনকে পালাতে দেখে বাঁশি বাজিয়েছিলেন ওয়াচ টাওয়ারে থাকা পুলিশকর্মীরা। কিন্তু তার পরেও জেলের সাইরেন বাজেনি!

রাত সাড়ে তিনটের সময় কালীঘাট সেতু থেকে তিন যুবককে হেঁটে আসতে দেখেছিলেন হরিশ চ্যাটার্জি ও হাজরা রোডের মুখে কিয়স্কে বসে থাকা পুলিশকর্মীরা। ওই তিন জন যে আদতে জেল পালানো বন্দি, তা বুঝতে পারেননি ওই পুলিশকর্মীরা! তাঁদের চোখের সামনে দিয়েই হাঁটতে হাঁটতে চলে গিয়েছিল ওই তিন জন।

আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার থেকে বন্দি পালানোর তদন্তে নেমে এমনটাই জানতে পেরেছেন কারা ও পুলিশকর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, জেলের সুরক্ষাকবচের ফাঁক গলেই বেরিয়ে গিয়েছিল আজিম মিস্ত্রি, কুতুবউদ্দিন লস্কর এবং শামিম হাওলাদার নামে তিন বন্দি। শনিবার ভোরে বারুইপুরের হেরোইনের ঠেক থেকে আজিমকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ দিন তাকে আলিপুর আদালতে হাজির করানো হলে ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ হয়েছে। তবে শনিবার রাত পর্যন্ত বাকি দু’জনের খোঁজ মেলেনি।

কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, আলিপুরের মতো এমন ‘হাই-প্রোফাইল’ সংশোধনাগারে নিরাপত্তার ফাঁক থাকছে কেন? কেন-ই বা বন্দি পালানোর কথা টের পাওয়ার পরেও সাইরেন বেজে উঠল না?

কারা দফতরের একটি সূত্র বলছেন, প্রথমে কারা কর্তৃপক্ষ সাইরেন বাজানোর কথা বলেছিলেন। পরে অবশ্য কারা দফতরের শীর্ষকর্তারা তদন্তে নেমে জানতে পারেন, আলিপুর জেলের অদূরেই মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি। গভীর রাতে সাইরেন বাজলে পাছে তাঁর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে, এই আশঙ্কাতেই সাইরেন বাজানো হয়নি। এ প্রসঙ্গে কারামন্ত্রী হায়দর আজিজ সফি বলেন, “ঘণ্টি না বাজানোর কথা শুনে তো আমি অবাক হয়ে গিয়েছি! সুপারের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে, তিনি উত্তর দিতে পারেননি।” কারা দফতরের একাংশ বলছেন, সাইরেন বাজলে কালীঘাট সেতুর সামনেই ধরা পড়ে যেত আজিমরা।

প্রশ্ন উঠেছে, ওয়াচ টাওয়ারে থাকা পুলিশকর্মীদের ভূমিকা নিয়েও। কারাকর্তাদের একাংশ বলছেন, ওই পুলিশকর্মীরা বন্দি পালানো রুখতে গুলি চালাতে পারতেন। যদিও তাঁদের কাছে গুলি চালানোর অনুমতি ছিল কি না, তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে। কারামন্ত্রী বলেন, “এই বিষয়টি কলকাতা পুলিশকে দেখতে বলেছি।”

কারা দফতর সূত্রের খবর, জেলগুলির নিরাপত্তা নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠেছে। তাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ পেয়ে কারামন্ত্রী হায়দর আজিজ সফি ও এডিজি (কারা) অধীর শর্মা সম্প্রতি বিভিন্ন জেলে ঘুরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখেছেন। বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে সিসিটিভি, জ্যামার বসানোর পরিকল্পনাও রয়েছে। কারা সূত্রের খবর, আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে সিসিটিভি বসানো রয়েছে। কিন্তু যে জায়গা দিয়ে বন্দিরা পালিয়েছে, সেখানে সিসিটিভি ক্যামেরা খারাপ। যদিও কারা দফতরের একাংশই বলছে, যে ধরনের সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়, তাতে অন্ধকারে স্পষ্ট কিছু বোঝা যায় না। উন্নত মানের ক্যামেরা লাগানোর প্রয়োজন রয়েছে। সিসিটিভি ক্যামেরা বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ মিশ্র বলছেন, উন্নত মানের ক্যামেরায় একটি সফটওয়্যার থাকে। তাতে অস্বাভাবিক কিছু ধরা পড়লে সাইরেন বাজার ব্যবস্থা করাও সম্ভব। সেগুলি লাগালে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অনেক ভাল ফল মিলতে পারে।

তবে এ সবের বাইরে বন্দি পালানোর পিছনে কারাকর্মীদের একাংশের মদতও দেখছেন পুলিশ-কারাকর্তারা। আজিমকে গ্রেফতার করার পরে তাকে প্রাথমিক ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তদন্তকারীরা। তার ভিত্তিতে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, তারা পাঁচ বন্দি মিলে জেল পালানোর ছক কষেছিল। তাই কিছু দিন ধরেই গারদের মরচে ধরা অংশটি ছোট মাপের করাত দিয়ে কাটা হয়েছিল। দিন দুয়েক আগে কুতুব ও শামিমকে আদালতে হাজিরা দিতে পাঠানো হয়। সে সময় পরিচিতদের মাধ্যমে ৫ হাজার টাকা জোগাড় করেছিল তারা। সেই টাকা নিয়ে জেলেও ঢুকেছিল ওই দুই বন্দি। পুলিশের একাংশের মতে, কারাকর্মীদের একাংশের মদত না থাকলে গরাদ কাটা ও টাকা নিয়ে জেলে ঢোকা সম্ভব হত না। এ বিষয়ে কারামন্ত্রী বলেন, “তদন্তে কোনও কারাকর্মীর দোষ মিললে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

আজিমকে জেরা করে পুলিশ আরও জেনেছে, জেল থেকে পালানোর পর তিন জনেই ভবানীপুরের যদুবাবুর বাজারের রাস্তায় পৌঁছয়। সেখান থেকে ভোরবেলা তারা বাস ধরে শিয়ালদহে যায়। শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে বারুইপুুরে চলে যায় আজিম। বাকি দু’জনও অন্য দিকে চলে যায়। যদিও পরবর্তী কালে তিন জনের এক সঙ্গেই পালিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। তা হলে আজিম ধরা পড়ল কী করে?

পুলিশের বক্তব্য, মাদকের নেশাই ধরিয়ে দিয়েছে আজিমকে। জেল থেকে পালানোর পরেই পুলিশ খবর পায়, সে বাড়ি যেতে পারে। সেই মতো এলাকায় নজরদারি শুরু করে পুলিশ। আজিম হেরোইনের ঠেকে গিয়েছে শুনে গভীর রাতে সেখানে হানা দেয় পুলিশ। এক পুলিশ অফিসার বলছেন, “নেশার ঠেকে এক জন উপুড় হয়ে পড়েছিল। ঘাড় ধরে টেনে তুলতে দেখি, সেটাই আজিম!’’

alipore central jail prisoner azim Prisoners police kolkata news latest news online news latest online new
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy