Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের সুরক্ষা আটকে আইনের ফাঁকে

ছেলে-বৌমার সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন বাঁশদ্রোণীর বাসিন্দা আর এক দম্পতি। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে পুলিশ তাঁদের ঘরে ফিরিয়ে ছেলে-বৌমাকে বাড়ি থেকে বার করে।

দীক্ষা ভুঁইয়া
শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৭:৪০
Share: Save:

ছেলে-বৌমার সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েনে এক আত্মীয়ের বাড়ি গিয়ে উঠেছিলেন নরেন্দ্রপুরের বাসিন্দা বৃদ্ধ পীযূষ মজুমদার ও তাঁর স্ত্রী। পরে সেখান থেকে বেরিয়ে সোজা বাগবাজার থেকে লঞ্চের উঠে মাঝ গঙ্গায় ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেন। ঘটনায় পীযূষবাবুর মৃত্যু হলেও প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন তাঁর স্ত্রী।

ছেলে-বৌমার সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন বাঁশদ্রোণীর বাসিন্দা আর এক দম্পতি। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে পুলিশ তাঁদের ঘরে ফিরিয়ে ছেলে-বৌমাকে বাড়ি থেকে বার করে।

শুধু এই দু’টি ঘটনাই নয়। ছেলে-বৌমা কিংবা মেয়ে-জামাইয়ের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হওয়ায় সম্প্রতি আত্মঘাতী হওয়া কিংবা ঘর ছাড়ার ঘটনা বেড়েই চলেছে।

কিন্তু বয়স্কদের এমন অবহেলার পরিস্থিতি থেকে বাঁচাতে ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে আইন। ‘মেনটেন্যান্স অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার অব পেরেন্টস অ্যান্ড সিনিয়র সিটিজেন্স বিল ২০০৭’-এ বলা হয়েছে কোনও বাবা-মা চাইলে সাব-ডিভিশনাল অফিসারের (এসডিও) কাছে আবেদন করে খোরপোষ চাইতে পারেন। সে ক্ষেত্রে সন্তানের থেকে মাসিক ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত খোরপোষ পেতে পারেন তাঁরা। কিন্তু রয়েছে ফাঁকও। আইনজীবীদের একাংশ জানাচ্ছেন, বৃদ্ধ-বৃদ্ধার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী যাঁরা হবেন, শুধু তাঁদের কাছেই চাওয়া যাবে খোরপোষ।

আর যাঁদের সম্পত্তি নেই, তাঁরা কি খোরপোষ পাবেন না? আইনজীবীমহল বলছে, না! আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘সরকারি চাকরি যাঁরা করেন না, তাঁরা অবসরের পরে কোনও পেনশন পান না। ফলে একটা বয়সের পরে শারীরিক দিক থেকে অক্ষম বাবা-মাকে ছেলে-মেয়েদের উপরেই নির্ভর করতে হয়। তার উপরে যদি সেই বাবা-মায়ের সম্পত্তি না থাকে, তাঁর পক্ষে সংসারে
আর্থিক সাহায্য করা সম্ভব নয়। ছেলে-মেয়েরা খুব ভালভাবে প্রতিষ্ঠিত না হলে, তাঁরা খোরপোষের আবেদন করবেনই বা কার কাছে!’’ আর আবেদন করলেই তো হল না। ছেলেমেয়ের ক্ষমতায় না কুলোলে খোরপোষ দেওয়ার প্রশ্ন ওঠে না।

এ দিকে গড় আয়ু বাড়ার ফলে প্রবীণদের সংখ্যাও বাড়ছে বলে মনে করান জয়ন্তবাবু। ফলে সমস্যা খুবই কঠিন। তাঁর মত, সরকারি তরফে প্রবীণদের দেখভালের কোনও ব্যবস্থা হলে তবেই মিটতে পারে এই সমস্যা।

রাজ্যের নারী, শিশু ও সমাজ কল্যাণ দফতর জানাচ্ছে, একটি সরকারি এবং কিছু বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা চালিত বৃদ্ধাশ্রম আছে যেখানে বিনা পয়সায় থাকা যায়। কিন্তু অসহায় প্রবীণদের সংখ্যার নিরিখে তা খুবই কম। যে হারে এই সমস্যা বাড়ছে, তাতে কেন্দ্র ও রাজ্য দু’তরফকেই এগিয়ে আসতে হবে বলে মনে করছেন দফতরের এক শীর্ষ কর্তা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Elderly People Law Protection
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE