প্রতিবাদ: সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়েছে এই বার্তা।
কাগজ। এই একটি শব্দই এখন তর্ক-বিতর্কের কেন্দ্রে।
এক পক্ষ বলছেন, কাগজ তাঁরা দেখাবেন না। আর এক পক্ষ প্রশ্ন তুলছেন, কাগজ কেন দেখাব না? সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) ও জাতীয় নাগরিক পঞ্জির (এনআরসি) প্রতিবাদ ঘিরে শুরু হওয়া এই তরজার রেশ মিছিল-স্লোগান ঘুরে পৌঁছেছে খেলার মাঠেও।
রবিবার ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের ম্যাচে যুবভারতীতে নজর কেড়েছে লাল-হলুদ গ্যালারির বিশাল টিফো। যাতে লেখা ছিল, ‘‘রক্ত দিয়ে কেনা মাটি, কাগজ দিয়ে নয়।’’ এনআরসি-সিএএ বিরোধী এই বার্তার তারিফ করেছেন মোহনবাগান সমর্থকেরাও। ডার্বির পোস্টারের সেই স্লোগান থেকেই ফেসবুকে কবিতা লিখেছেন অনমিত্র রায়। ঐক্যের বার্তা দিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘‘রক্ত দিয়ে কেনা মাটি, কাগজ দিয়ে নয়/ মৌলবাদের চোখ রাঙানোয় পাচ্ছি না আর ভয়/ আমিই আলি, আমিই কানাই, কাগজ দিয়ে ঠোঙা বানাই/ খিদের সময়ে পেটের জ্বালা কেমন করে সয়?’’
কাগজ না দেখিয়ে এই প্রতিবাদের বার্তা প্রথম দিয়েছিলেন শিল্পী ও গীতিকার বরুণ গ্রোভার। সিএএ-এনআরসির বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে আন্দোলন চলায় বরুণ লেখেন কবিতা, ‘‘হম কাগজ নেহি দিখায়েঙ্গে...।’’ দেশ জুড়ে সিএএ-এনআরসির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ‘অ্যান্থেম’ হয়ে ওঠে সেই লাইন। বাংলাতেও ওই কবিতার অনুবাদ করে প্রতিবাদে সরব হন একাধিক শিল্পী। একই কবিতা ব্যবহার করে সরকারের সমর্থনে নামে গেরুয়া শিবিরও। তারা পাল্টা লেখে, ‘‘কাগজ আমার দেশের চিহ্ন, কাগজ আমরা লুকোব না।’’ তবে সেই বার্তাকেও নিশানা করেছে ছাত্রদল। মন্ত্রীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে বিতর্ককে উস্কে দিয়ে পোস্টারে বলা হয়েছে, ‘‘আগে মোদী, স্মৃতি ইরানি ডিগ্রির কাগজ দেখান, তা হলে আমরাও কাগজ দেখাব।’’
কাগজ নিয়ে রসিকতাও ছড়িয়েছে সমাজমাধ্যমে। ‘সপ্তপদী’র বিখ্যাত ‘এই পথ যদি না শেষ হয়’ গানের দৃশ্যে উত্তম-সুচিত্রার ছবি দিয়ে বানানো হয়েছে মিম। তাতে উত্তম বলছেন, সামনে পুলিশ বাইক ধরছে। সুচিত্রার জবাব, ওদের বলে দিও, কাগজ আমরা দেখাব না। কার্টুনিস্ট মালির আঁকা ছবিতে দেখা যাচ্ছে, উপস্থিত নেতাকে এক ব্যক্তি বলছেন, ‘‘আমি কাগজ দেখাতে চাই। কিন্তু উনি তো তা খেয়ে ফেলেছেন।’’ পাশেই মুখে কাগজ নিয়ে দাঁড়িয়ে একটি গরু, যার কুঁজে আবার সোনালি আভা!
তবে রসিকতা ছাপিয়ে উঠে আসছে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নও। তা হল, নেতারা কাগজ দেখাচ্ছেন কি? রাজনৈতিক দলগুলির টাকার উৎস কী, তা জনগণের সামনে আনার দাবি দীর্ঘদিনের। আগে ২০ হাজার টাকার বেশি অনুদান পেলে তার উৎস জানাতে হত রাজনৈতিক দলগুলিকে। বিজেপি সরকারের ২০১৭-র বাজেটে ইলেক্টোরাল বন্ড চালু করা হয়, যার মাধ্যমে যে কেউ ব্যাঙ্ক থেকে বন্ড কিনে দলের তহবিলে দিতে পারেন। কে কিনছেন, জানার উপায় নেই। এই বন্ড থেকে আয় বিপুল বেড়েছে বিজেপি, কংগ্রেস দু’দলেরই।
‘‘কাগজ দেখাব না’’ স্লোগান দিয়ে সমাবর্তনে স্বর্ণপদক নিতে উঠে সিএএ-র প্রতিলিপি ছিঁড়ে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী দেবস্মিতা চৌধুরী। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্রী দেবস্মিতা বলছেন, ‘‘এখানেই গণতন্ত্রের পরিহাস। গণতন্ত্রে মানুষের কাছে নেতাদের দায়বদ্ধ থাকা উচিত। এ দেশে সাধারণ নাগরিকদেরই নেতাদের কাছে কাগজ দেখিয়ে অস্তিত্ব প্রমাণ করতে হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy