Advertisement
০৫ ডিসেম্বর ২০২৪

লরিস্ট্যান্ডে মশার বাসা, আতঙ্ক

বেশ কয়েক বছর ধরেই উল্টোডাঙা থানার সামনের জায়গায় রমরমিয়ে চলছে ওই লরিস্ট্যান্ড। ছোট-বড় সব ধরনের লরিই সেখান থেকে ভাড়ায় পাওয়া যায়। স্ট্যান্ডের মধ্যেই রয়েছে কলকাতা পুরসভার ৩ নম্বর বরোর কম্প্যাক্টর। তাতে ফেলা আবর্জনা ও বর্ষার জলে স্ট্যান্ড এবং সংলগ্ন এলাকার অবস্থা দুর্বিষহ।

অস্বাস্থ্যকর: এ ভাবেই জল জমে রয়েছে উল্টোডাঙার লরিস্ট্যান্ডে। ছবি: শৌভিক দে

অস্বাস্থ্যকর: এ ভাবেই জল জমে রয়েছে উল্টোডাঙার লরিস্ট্যান্ডে। ছবি: শৌভিক দে

নীলোৎপল বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ১৬ অগস্ট ২০১৮ ০২:০৯
Share: Save:

পুলিশের নাকের ডগায় বেআইনি লরিস্ট্যান্ড। অথচ জানে না প্রশাসনের কেউই! বর্ষার সময়ে উল্টোডাঙা এলাকার সেই স্ট্যান্ডই হয়ে উঠেছে মশার আঁতুড়ঘর। অবস্থা এমনই যে চলতি মাসের শুরুতেই স্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা এক স্কুলছাত্রী ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়। অভিযোগ, তার পরেও অবস্থা বদলায়নি। আপাতত আশঙ্কাতেই দিন কাটছে ওই স্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা অন্তত ৮০টি পরিবারের।

বেশ কয়েক বছর ধরেই উল্টোডাঙা থানার সামনের জায়গায় রমরমিয়ে চলছে ওই লরিস্ট্যান্ড। ছোট-বড় সব ধরনের লরিই সেখান থেকে ভাড়ায় পাওয়া যায়। স্ট্যান্ডের মধ্যেই রয়েছে কলকাতা পুরসভার ৩ নম্বর বরোর কম্প্যাক্টর। তাতে ফেলা আবর্জনা ও বর্ষার জলে স্ট্যান্ড এবং সংলগ্ন এলাকার অবস্থা দুর্বিষহ।

সম্প্রতি ডেঙ্গিতে আক্রান্ত স্কুলছাত্রী ওই এলাকারই বাসিন্দা। বেশ কয়েক দিন জ্বর থাকার পরে ৩ নম্বর বরোর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রক্ত পরীক্ষা করানো হলে, লিখে দেওয়া হয় সে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয় তাকে।

এক দুপুরে গিয়ে দেখা গেল, কয়েক পশলা বৃষ্টির পরে জল দাঁড়িয়ে গিয়েছে ওই লরিস্ট্যান্ডে। তার মধ্যেই ভাসছে কম্প্যাক্টর থেকে বেরিয়ে আসা আবর্জনা। দুর্গন্ধে এলাকায় দাঁড়ানো দায়। দীর্ঘদিন থেকে পড়ে থাকা কয়েকটি ভাঙা লরির নীচেই যেন ময়লার ভ্যাট! জমা জলে গিজগিজ করছে মশার লার্ভা। একটি লরিতে সারাইয়ের কাজ করছিলেন এক ব্যক্তি। বললেন, ‘‘কয়েক মিনিট এখানে দাঁড়ান। মশার কামড়ে হাত-পা ফুলে লাল হয়ে যাবে।’’ এক লরিচালকের আবার বক্তব্য, ‘‘এখানে কম্প্যাক্টর হওয়ার আগে পরিস্থিতি ভাল ছিল। এখন বর্ষা এলে ময়লা আর বৃষ্টির জল মিলে ধাপা হয়ে ওঠে।’’

এর মধ্যে থাকেন কী করে? ৭৬ পল্লির এক বৃদ্ধ বলেন, আগে খালের পাড়ে থাকতেন তাঁরা। বাম জমানায় খালের পাড় সংস্কারের কাজ শুরু হলে তাঁদের তুলে দেওয়া হয়। সেই সময়ে আর এক বাম নেতা খালপাড়ের প্রায় ৭০টি পরিবারকে ৭৬ পল্লির এই এলাকায় থাকার ব্যবস্থা করে দেন। তখন থেকে এখানেই থাকছেন তাঁরা। পরে জুটে যায় আরও ১০টি পরিবার। বৃদ্ধের কথায়, ‘‘কোথাও যাওয়ার নেই। তাই এখানেই থাকি। আমাদেরই একটা বাচ্চা মেয়ের ডেঙ্গি ধরা পড়ার পরে পুরসভার লোকজন এসেছিল। লরিস্ট্যান্ড থেকে মশার লার্ভাও পেয়েছিল। কিন্তু তার পরে আর সাফসুতরো কিছুই হয়নি।’’

শুধু ওই বস্তিই নয়। বেআইনি লরিস্ট্যান্ডের মশা নিয়ে নাজেহাল পুলিশও। উল্টোডাঙা থানার এক পুলিশকর্মী বললেন, ‘‘ওখান থেকে লরি সরানোর ক্ষমতা আমাদের নেই। বড় বড় লোকের হাত আছে। তাঁদের সঙ্গে ঝামেলায় যাওয়ার থেকে মশার কামড় খাওয়া ভাল।’’ থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক অবশ্য বললেন, ‘‘ওই স্ট্যান্ডের কাগজপত্র কী আছে দেখতে হবে।’’ এলাকাটি কলকাতা পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ড এবং ৩ নম্বর বরোর অন্তর্গত। বরো চেয়ারম্যান তথা ওই ওয়ার্ডেরই কাউন্সিলর অনিন্দ্য রাউত এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে পরিবহণ দফতরের এক আধিকারিক জানালেন, ওই স্ট্যান্ডের কোনও অনুমতি অন্তত তাঁদের দফতর থেকে দেওয়া হয়নি।

লরিস্ট্যান্ডের তৃণমূল পরিচালিত সংগঠন উল্টোডাঙা ট্রান্সপোর্ট ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের অবশ্য বক্তব্য, আগে সব ঠিক ছিল। পুরসভাই ওখানে কম্প্যাক্টর বসিয়ে পরিস্থিতি খারাপ করেছে। সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি রবি পাল বললেন, ‘‘মশার কামড় তো আমাদেরও খেতে হয়। স্ট্যান্ডের জন্য কারও কোনও সমস্যা হয় না। ময়লা যা হয় কম্প্যাক্টর থেকেই।’’ কিন্তু, স্ট্যান্ডের সরকারি অনুমতি রয়েছে কি? রবিবাবু বললেন, ‘‘দলের অনুমতি আছে। তার বেশি কিছু দরকার নেই!’’

অন্য বিষয়গুলি:

dengue Larvae Truck Stand
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy