Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Durga Puja 2022

Durga Puja Donation: পুজোর খয়রাতি বাড়ে ১০ হাজার, বরাদ্দ বাড়ে না শুধু পড়ুয়া-পাতে

শহরের স্কুলগুলিতে প্রাথমিকের পড়ুয়াদের মিড-ডে মিলে মাথাপিছু বরাদ্দ আটকে রয়েছে সেই ৪ টাকা ৯৭ পয়সায়।

এই অগ্নিমূল্যের বাজারেও পড়ুয়ারা থেকে যায় কার্যত ব্রাত্য।

এই অগ্নিমূল্যের বাজারেও পড়ুয়ারা থেকে যায় কার্যত ব্রাত্য। ফাইল ছবি

আর্যভট্ট খান
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০২২ ০৬:০২
Share: Save:

এ বারের দুর্গাপুজোয় পুজো কমিটিগুলির জন্য সরকারি অনুদান ৫০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৬০ হাজার টাকা করার কথা সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অথচ, শহরের স্কুলগুলিতে প্রাথমিকের পড়ুয়াদের মিড-ডে মিলে মাথাপিছু বরাদ্দ আটকে রয়েছে সেই ৪ টাকা ৯৭ পয়সায়। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত মিড-ডে মিলে মাথাপিছু বরাদ্দ খাতায়কলমে বেশি, ৭ টাকা ৪৫ পয়সা! শিক্ষকদের একাংশের অভিযোগ, উৎসবের মরসুমে পুজো কমিটিগুলির বরাদ্দ কত সহজেই একলপ্তে ১০ হাজার টাকা বেড়ে যায়। কিন্তু এই অগ্নিমূল্যের বাজারেও পড়ুয়ারা থেকে যায় কার্যত ব্রাত্য। তাঁদের মতে, মাথাপিছু বরাদ্দ মাত্র পাঁচ টাকা করে বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও একটু ভাল মানের রান্না করা খাবার পেত সরকারি, সরকার-পোষিত এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলের পড়ুয়ারা।

উল্লেখ্য, মিড-ডে মিলের খরচের ৬০ শতাংশ দেয় কেন্দ্র, বাকিটা রাজ্য। শিক্ষকদের একাংশের মতে, মিড-ডে মিলে মাথাপিছু বরাদ্দ বাড়ানোর কথা উঠলেই টানাপড়েন শুরু হয় কেন্দ্রে-রাজ্যে। রাজ্য প্রশ্ন তোলে, কেন্দ্র কেন তাদের বরাদ্দ বাড়াচ্ছে না? যার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষকদের একাংশের পাল্টা প্রশ্ন, রাজ্যই বা কেন নিজেরা উদ্যোগী হয়ে তাদের অংশের বরাদ্দ বাড়ায় না? এই দড়ি টানাটানিতে তো আখেরে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পড়ুয়ারাই।

প্রাক্‌-প্রাথমিক থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত মিড-ডে মিলে মাথাপিছু বরাদ্দ অন্তত ২০ টাকা করার দাবিতে সম্প্রতি প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অফিসে স্মারকলিপি দিয়েছে ‘বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি’। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আনন্দ হন্ডা বলেন, ‘‘এখন প্রাথমিকে বরাদ্দ ৪ টাকা ৯৭ পয়সা এবং উচ্চ প্রাথমিকে ৭ টাকা ৪৫ পয়সা। এর মধ্যেই চাল বাদে বাকি সব কিছু, অর্থাৎ জ্বালানি থেকে শুরু করে ডাল, সয়াবিন, ডিম, আনাজ— এগুলির খরচ ধরা আছে। চাল দেয় কেন্দ্র। গ্যাসের দাম হাজার ছাড়িয়েছে। এই বরাদ্দে কি এখনকার বাজারে আদৌ কিছু হয়? এর পরে মিড-ডে মিলের রান্নার জন্য গ্যাস জ্বালানোই না বন্ধ করে দিতে হয়।’’ ‘অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেস’-এর রাজ্য সাধারণ সম্পাদক চন্দন মাইতির মতে, ‘‘একটা ডিমের দামই সাড়ে পাঁচ টাকা। সপ্তাহে দুটো ডিম দেওয়ার কথা বলে হয়েছে। এই বরাদ্দে কী ভাবে রোজ পড়ুয়াদের ভাল মানের খাবার দেওয়া সম্ভব? ফলে অধিকাংশ স্কুলকেই খাবারের মানের সঙ্গে আপস করতে হচ্ছে।’’

শিক্ষকদের একাংশের মতে, কেন্দ্র না বাড়ালেও রাজ্য কিন্তু নিজেদের অংশের বরাদ্দ বাড়াতেই পারে। তাঁদের যুক্তি, করোনাকালে যখন পড়ুয়াদের মিড-ডে মিলের সামগ্রী দেওয়া হয়েছিল, তখন তারা রান্না করা খাবার পায়নি। সেই সময়ে সারা মাসের জন্য পড়ুয়াপিছু দেওয়া হয়েছিল দু’কেজি চাল, দু’কেজি আলু এবং সেই সঙ্গে ডাল, সয়াবিন আর সাবান। ফলে তখন ছাত্রপিছু খরচ হয়েছে অনেক কম। তাঁদের প্রশ্ন, সেই বেঁচে যাওয়া টাকা দিয়ে কেন খাবারের মান উন্নত করা হচ্ছে না? শিক্ষকদের বক্তব্য, শুধু ডিমই নয়, বাজারে ডালের যা দাম, তাতে যে দিন ভাত, সয়াবিন আর ডাল থাকার কথা, সে দিন ডাল বাদ দিতে হচ্ছে। অনেক স্কুল সপ্তাহে দুটো ডিম দিতে না পেরে একটা ডিম দিচ্ছে।

শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, করোনার পরে দেখা যাচ্ছে, যে ছাত্রছাত্রীরা আগে বাড়ি থেকে টিফিন আনত, তারা এখন আনছে না। তারা জানাচ্ছে, করোনাকালে পারিবারিক আয় কমে যাওয়ায় অনেকের মায়েরাও কাজে বেরোতে বাধ্য হচ্ছেন। টিফিন বানিয়ে দেওয়ার মতো কেউ থাকছেন না। তাই ওই পড়ুয়াদের ভরসা মিড-ডে মিলই। অথচ, সেখানেই বরাদ্দের এই হাল। স্কুলগুলির প্রশ্ন, তা হলে কি কার্যত আধপেটা খাওয়া অবস্থাতেই উৎসবে মাততে হবে ছোট ছোট পড়ুয়াদের?

কী বলছেন সরকারি কর্তারা? মিড-ডে মিল প্রকল্পের প্রজেক্ট ডিরেক্টর তপন অধিকারী বলেন, ‘‘কেন্দ্র তাদের অংশের বরাদ্দ না বাড়ালে রাজ্য বরাদ্দ কী ভাবে বাড়াবে? শুনেছি, মাথাপিছু বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য কেন্দ্র প্রাথমিক সমীক্ষা করছে।’’ আর শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর কথায়, ‘‘কেন্দ্র তাদের বরাদ্দ বাড়ালেই আমরা মিড-ডে মিলে আমাদের অংশের বরাদ্দ বাড়াব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja 2022 midday meal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE