Advertisement
E-Paper

রাতের শহরে পুলিশ কই, ভরসা শুধু ক্যামেরা

সম্প্রতি ইএম বাইপাসের একাধিক জায়গা সম্পর্কে থানাগুলিকে আরও বেশি সজাগ থাকতে বলেছে লালবাজার।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০২০ ০২:৫৪
নজরহীন: কাঁকুড়গাছিতে পুলিশ কিয়স্কে বসে থাকা এক কর্মীর সামনে দিয়েই যাচ্ছেন হেলমেট-মাস্কহীন বাইক আরোহীরা। মঙ্গলবার রাতে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

নজরহীন: কাঁকুড়গাছিতে পুলিশ কিয়স্কে বসে থাকা এক কর্মীর সামনে দিয়েই যাচ্ছেন হেলমেট-মাস্কহীন বাইক আরোহীরা। মঙ্গলবার রাতে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

কখনও আনন্দপুরে চলন্ত গাড়ি থেকে তরুণীর চিৎকার শুনে তাঁকে উদ্ধার করতে এগিয়ে যাওয়া মহিলাকে পিষে দিয়ে পালাতে যায় চালক! কখনও রাতে শ্বশুরবাড়ি ফেরার পথে বাইক-বাহিনীর হাতে যৌন নিগ্রহের শিকার হন তরুণী। দিদিকে বাঁচাতে গিয়ে মার খেতে হয় দুই ভাইকে। কখনও ফুটপাতে উঠে দু’জনকে পিষে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে লরি। গতির ঝড় তুলতে গিয়ে আবার ইএম বাইপাসে মেট্রোর স্তম্ভে ধাক্কা মেরে প্রাণ যায় তিন জনের!

আনলক-পর্বে রাতের কলকাতায় ক্রমেই বেড়ে চলেছে এমন ঘটনা। উৎসবের মরসুমে যা অনেকেরই আতঙ্ক আরও বাড়িয়েছে। তাঁদের প্রশ্ন, ‘‘মণ্ডপ দর্শকশূন্য রেখে দুর্গোৎসব হলেও আত্মীয়-বন্ধুর বাড়ি বা রেস্তরাঁর আড্ডায় নিষেধ ছিল না। দুর্গোৎসবের পরের এই সময়ে এমন আড্ডা আরও বাড়ে। তেমনই কোনও আড্ডায় যোগ দিতে যাওয়া কারও বাড়ি ফিরতে দেরি হলে কি এমন অভিজ্ঞতাই অপেক্ষা করছে?’’ এই প্রশ্নও উঠছে, নানা সময়ে নাকা তল্লাশিতে কড়াকড়ির কথা বলা হলেও উৎসবের এই সময়ে পুলিশের ভূমিকাই বা কী?

এই সব প্রশ্নেরই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করতে বেরোনো হয়েছিল মঙ্গলবার রাতে। রাত ১১টা থেকে ভোর সাড়ে ৪টে পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেল, গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার মোড়গুলিতে অধিকাংশ জায়গায় পুলিশি নজরদারি নেই। একটি জায়গাতেও চোখে পড়েনি নাকা তল্লাশির ব্যবস্থা। রাত ১২টার পর থেকে কিছু মোড়ে ফাঁকাই ছিল পুলিশের কিয়স্ক। যেখানে পুলিশকর্মীদের দেখা গিয়েছে, সেখানেও তাঁরা ছিলেন মাত্র এক জন করে। সেই সুযোগে কোথাও একটি বাইকে হেলমেটহীন তিন জন। কোথাও চার। তীব্র গতিতে একে অপরকে টেক্কা দেওয়ার চেষ্টা। পার্ক স্ট্রিট মোড়ে দেখা গেল, হেলমেটহীন চালক মাঝরাস্তাতেই বাইকের কেরামতি দেখাতে শুরু করলেন।

আরও পড়ুন: আর কত কোল খালি হবে, বলছেন সন্তানহারা দুই মা ​

বিবেকানন্দ রোডে যেখানে গত সোমবার ভোরে লরির ধাক্কায় প্রাণ গিয়েছে দু’জনের, উদ্বেগ বাড়িয়েছে সেখানকার চিত্রও। এত বড় দুর্ঘটনার পরেও অরক্ষিত পুরো জায়গাটি। ঘটনাস্থল থেকে ৬০-৭০ মিটার দূরে একটি মাত্র পুলিশ কিয়স্কে বিশ্রাম করছিলেন এক জন পুলিশকর্মী। রাত আড়াইটে নাগাদ সেখানে সিগন্যাল মানার ব্যাপারই নেই। বিশ্রাম করছেন? ওই পুলিশকর্মী বললেন, ‘‘রাতের ডিউটিতে আর কী কাজ!’’ কিন্তু কোনও গাড়ি তো সিগন্যাল মানছে না? তাঁর উত্তর, ‘‘ভাঙা বাইক নিয়ে কাকে ধরতে যাব? ক্যামেরায় ঠিক ছবি উঠে যাবে।’’

আরও পড়ুন: ‘ভয়েই’ বেপরোয়া দৌড় লরির, বলছেন চালকেরা

সম্প্রতি ইএম বাইপাসের একাধিক জায়গা সম্পর্কে থানাগুলিকে আরও বেশি সজাগ থাকতে বলেছে লালবাজার। মঙ্গলবার রাতে অবশ্য সেই সতর্কতার চিত্র দেখা যায়নি। একাধিক গাড়ি রেষারেষি করলেও দর্শকের ভূমিকায় ছিলেন কয়েকটি ট্র্যাফিক গার্ডের আধিকারিকেরা। পূর্ব যাদবপুরের তেমনই একটি ট্র্যাফিক গার্ডের আধিকারিক আবার বললেন, ‘‘ইভটিজ়িং জাতীয় কিছু ঘটছে কি না, সে দিকেই বেশি নজর দিতে বলা হয়েছে। দৌড়ে তো গাড়ি ধরতে পারব না।’’ পার্ক স্ট্রিট চত্বরে আবার রেস্তরাঁ থেকে বেরোনো পাঁচ তরুণীর একটি দলকে দেখে দাঁড়িয়ে গেল দু’টি গাড়ি। কাচ নামিয়ে চালক ও আরোহী কিছু বললেন তরুণীদের। তাঁরা উত্তর দিলেন না। পরে এক তরুণীর মন্তব্য, ‘‘নিজের নিরাপত্তা এখানে নিজেরই কাছে। কখনওই কেউ পাশে দাঁড়ায় না। তাই চুপচাপ এড়িয়ে যাওয়াই ভাল।’’

কী বলছেন পুলিশের কর্তারা? পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা বলেন, ‘‘রাতে পর্যাপ্ত পুলিশি ব্যবস্থা রাখা হয়। নাকা তল্লাশিও চালানো হচ্ছে সাধ্য মতো। নতুন করে সার্বিক নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হবে।’’ গড়িয়াহাট চত্বরে একটি রেস্তরাঁর সামনে ট্যাক্সির অপেক্ষায় থাকা যুগল অবশ্য বললেন, ‘‘কিছু ঘটলে দিন কয়েক শোরগোল হয়। তার আগে সবটা এমনই থাকে।’’

Police Kolkata Police Night Security Helmet
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy