E-Paper

সরকারি প্রচারে শুধুই বন্দে ভারত, অন্য ট্রেনের পরিষেবার মান নিয়ে ক্ষুব্ধ যাত্রীরা

সরকারি প্রচারের আলোর পুরোটাই পড়ছে বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের সাফল্যের উপরে। আর তার আড়ালেই চাপা পড়ে যাচ্ছে অন্যান্য ট্রেনে সফরের তিক্ত অভিজ্ঞতা— এমনটাই অভিযোগ যাত্রীদের।

ফিরোজ ইসলাম

শেষ আপডেট: ২০ মে ২০২৪ ০৬:৫৫

—প্রতীকী চিত্র।

শারীরিক সমস্যার কারণে বিমানে টিকিট না কেটে মুম্বই-হাওড়া দুরন্ত এক্সপ্রেসের টিকিট কেটেছিলেন টালিগঞ্জের বাসিন্দা, বছর পঞ্চান্নর শুভদীপ চৌধুরী। মুম্বই থেকে পাঁচ ঘণ্টা দেরিতে ছাড়ে ওই ট্রেন। পথে আরও দেরি করতে করতে হাওড়া পৌঁছয় নির্ধারিত সময়ের প্রায় ১৫ ঘণ্টা পরে। শুধু হাওড়া-মুম্বই দুরন্ত এক্সপ্রেসই নয়, চেন্নাই, হায়দরাবাদ, পুণে, যোধপুর-সহ দক্ষিণ এবং পশ্চিম ভারত থেকে আসা বহু দূরপাল্লার ট্রেন দেরিতে চলা কার্যত নিয়মে পরিণত হয়েছে বলে যাত্রীদের অভিযোগ। মুম্বই, বেঙ্গালুরু, যোধপুর, পুরী-সহ একাধিক দুরন্ত এক্সপ্রেসের পরিষেবার হালও খারাপ হয়েছে বলেও যাত্রীদের দাবি।

সরকারি প্রচারের আলোর পুরোটাই পড়ছে বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের সাফল্যের উপরে। আর তার আড়ালেই চাপা পড়ে যাচ্ছে অন্যান্য ট্রেনে সফরের তিক্ত অভিজ্ঞতা— এমনটাই অভিযোগ যাত্রীদের। ট্রেনের সময়ানুবর্তিতা থেকে পরিষেবা, বিভিন্ন ক্ষেত্রেই যাত্রী অভিজ্ঞতা ক্রমেই তিক্ততর হচ্ছে বলে অভিযোগ।

উত্তর ভারতের বিভিন্ন দূরপাল্লার ট্রেন ততটা দেরিতে না ছুটলেও প্রায়ই অস্বাভাবিক ভিড় যাত্রীদের অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠছে। বহু ট্রেনেই সাধারণ এবং স্লিপার কামরার সংখ্যা কমে আসায় যথাযথ টিকিট ছাড়াই যাত্রীদের একাংশের ভিড় আছড়ে পড়ছে বাতানুকূল থ্রি টিয়ার কামরায়। ফলে বৈধ টিকিট নিয়ে উঠেও যাত্রীদের অনেক ক্ষেত্রে সারা রাত জেগে সফর করতে হচ্ছে। শৌচাগারের জল ফুরিয়ে গিয়ে বাতানুকূল কামরার সফরও দুর্বিষহ হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে অভিযোগ।

সম্প্রতি ট্রেন দেরি করে ছাড়ার কারণে দক্ষিণ-পূর্ব রেলে একাধিক বার যাত্রী-বিক্ষোভের ঘটনাও ঘটেছে। ওই শাখার অধিকাংশ ট্রেন নিয়মিতই তিন থেকে পাঁচ ঘণ্টা দেরিতে ছুটছে বলে অভিযোগ। রেলের আধিকারিকদের অবশ্য দাবি, অন্যান্য অঞ্চল থেকে ট্রেনগুলি দেরিতে এসে পৌঁছনোর কারণে ছাড়তে দেরি হচ্ছে। যদিও যাত্রীদের অভিজ্ঞতা বলছে, ঠিক সময়ে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনও দেরিতে গন্তব্যে পৌঁছচ্ছে। মাসখানেক আগে সিমলা বেড়াতে যাওয়ার পথে হাওড়া থেকে কালকা এক্সপ্রেসের টিকিট কেটে আট ঘণ্টা দেরিতে গন্তব্যে পৌঁছেছিলেন সৌগত দাস নামে এক যাত্রী। এই দেরির কারণে অন্য রুটের সংযোগকারী টিকিট নিয়ে বিপাকে পড়তে হয় তাঁকে।

গরমের মরসুমে যাত্রী-সংখ্যার চাপ সামাল দিতে গিয়ে রেল বিপুল সংখ্যায় গ্রীষ্মকালীন বিশেষ ট্রেন চালাচ্ছে। পাশাপাশি পূর্ব, মধ্য এবং পশ্চিম ভারতের বিভিন্ন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লার জোগান ঠিক রাখতে গিয়ে বিপুল সংখ্যায় মালগাড়িও চালাতে হচ্ছে। মালগাড়ির কারণে ট্রেন বাতিল না হলেও সারা দেশে দেরিতে ট্রেন চলার সমস্যায় ভুগতে হচ্ছে যাত্রীদের।

সারা দেশে ৫১টি রুটে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস চললেও ওই ট্রেন থেকে সার্বিক আয়ের খতিয়ান এখনও প্রকাশ করেনি রেল। প্রথম সারির ওই ট্রেনগুলি সময়ে চালাতে গিয়ে মাঝারি দূরত্বের লোকাল এবং বহু এক্সপ্রেস ট্রেনকে প্রায়ই দাঁড় করিয়ে রাখার অভিযোগ করছেন যাত্রীরা। সময়ানুবর্তিতা সূচকে উত্তর এবং দক্ষিণের একাধিক অঞ্চলের হাল বেশ খারাপ। উত্তর রেল, পূর্ব উপকূল রেল, দক্ষিণ-পূর্ব-মধ্য রেলের বহু ট্রেন নিয়মিতই দেরিতে চলছে বলে যাত্রীদের অভিযোগ। সম্প্রতি পূর্ব রেল আয় বাড়াতে পণ্য পরিবহণে জোর দিয়েছে। পণ্য পরিবহণ থেকে ওই রেলের হাওড়া ডিভিশনের আয়ও উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিপরীতে ওই ডিভিশনের শহরতলির ট্রেনের সময়ানুবর্তিতার অভাব নিয়ে যাত্রীদের ক্ষোভ বেড়েছে। প্রায়ই লোকাল ট্রেন গড়ে ১৫ থেকে ৩০ মিনিট দেরিতে ছুটছে বলে যাত্রীদের অভিযোগ।

রেল কর্তারা অবশ্য ওই অভিযোগ অস্বীকার করছেন। তাঁদের দাবি নজিরবিহীন সংখ্যায় গ্রীষ্মকালীন ট্রেন চালানো হচ্ছে। তাতে যাত্রীদের সুরাহা হয়েছে। একাধিক বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের সাফল্যের কথাও নিয়মিত বলতে শোনা যাচ্ছে তাঁদের। যদিও যাত্রীদের বড় অংশের মতে, ঢাকঢোল পিটিয়ে জাঁকজমকপূর্ণ ট্রেনের কথা প্রচার করার চেয়ে সাধারণ ট্রেনের সময়ানুবর্তিতা এবং পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর দিলে ভাল করত রেল। বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে যত যাত্রী সফর করেন, তার চেয়ে বেশ কয়েক গুণ যাত্রী অন্যান্য ট্রেনে সফর করেন। সেই সফরের অভিজ্ঞতা সম্প্রতি সুখের হচ্ছে না বলেই অভিযোগ।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Express Trains Vande Bharat poor condition

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy