Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Kolkata Police Half Marathon

পুজোয় কড়াকড়ি করা পুলিশের তোরণই ভেঙে পড়ায় প্রশ্ন

পুলিশের এক কর্তা শুধু জানিয়েছেন, একটি তদন্ত কমিটি তৈরি করা হচ্ছে। গাফিলতি কার, খুঁজে বার করে পদক্ষেপ করা হবে। যদিও প্রশ্ন উঠছে, নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও এমন তোরণ তৈরি করাই কি যথেষ্ট গাফিলতি নয়?

An image of the gate

কলকাতা পুলিশের ম্যারাথনে এই তোরণ ভেঙেই ঘটে বিপত্তি। রবিবার। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২৪ ০৬:২৭
Share: Save:

পুজোর সময়ে তোরণ, মাথার উপরের গেট নিয়ে কড়া পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দেয় যে পুলিশ, সেই পুলিশই নিজেদের অনুষ্ঠানে কী ভাবে এমন তোরণ লাগাল যে তা জোরে হাওয়া দিলেই ভেঙে পড়ল? রবিবার কলকাতা পুলিশের হাফ ম্যারাথনে তোরণ ভেঙে পড়ে এক পুলিশ কর্তা-সহ চার জন আহত হওয়ার পরে উঠছে এই প্রশ্নই। পুলিশের এক কর্তা শুধু জানিয়েছেন, একটি তদন্ত কমিটি তৈরি করা হচ্ছে। গাফিলতি কার, খুঁজে বার করে পদক্ষেপ করা হবে। যদিও প্রশ্ন উঠছে, নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও এমন তোরণ তৈরি করাই কি যথেষ্ট গাফিলতি নয়?

২০১৯ সালে চেন্নাইয়ে একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পরে বিষয়টি নিয়ে নতুন করে শোরগোল পড়ে। শুভশ্রী রবি নামে বছর তেইশের এক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী স্কুটারে ফিরছিলেন। সেই সময়ে রাস্তার ধারে লাগানো একটি রাজনৈতিক দলের হোর্ডিং তাঁর উপরে ভেঙে পড়ে। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে শুভশ্রী রাস্তায় লুটিয়ে পড়লে পিছন থেকে আসা একটি জলের ট্যাঙ্কার তাঁকে পিষে দেয়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। এই ঘটনার পরেই বেআইনি হোর্ডিং দ্রুত খুলে ফেলতে হবে বলে কড়া অবস্থান নিয়েছে মাদ্রাজ হাই কোর্ট। ওই শহরে মাথার উপর বসানো হোর্ডিং-তোরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কলকাতাতেও রাস্তার উপরে গেটের মতো তৈরি বিজ্ঞাপনী তোরণ ভেঙে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। ২০১৮ সালে বেলেঘাটায় এমনই একটি দুর্ঘটনায় ছ’জন আহত হওয়ার পরে নতুন করে এই নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এর পর থেকে পুজোর সময়ে ওই ধরনের গেট এবং তোরণ নিয়ে কড়া অবস্থান নেয় কলকাতা পুলিশ। পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে পুলিশের সমন্বয় বৈঠকেও এই রকম তোরণ নিয়ে আলাদা করে সতর্ক করা হয়। প্রয়োজনে এমন তোরণ খোলানোর মতো পদক্ষেপও করতে দেখা গিয়েছে একাধিক জায়গায়।

গত বছরেই আবার সমাজসেবী সঙ্ঘ পুজো কমিটির বিজ্ঞাপনী গেট করাত নিয়ে এসে ভেঙে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ওই পথ দিয়ে নতুন একটি পুজো কমিটির শোভাযাত্রা যাচ্ছিল। কিন্তু ওভারহেড গেটে প্রতিমার গাড়ি আটকে যায়। এর পরে পুরসভার গাছ কাটার গাড়ি নিয়ে এসে ওই গেট কাটা হয়। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে যায় যে, এর পরে এ নিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন সমাজসেবী সঙ্ঘের কর্তারা।

কলকাতা পুরসভার বিজ্ঞাপনী বিভাগের এক কর্তা জানাচ্ছেন, পুর-বিজ্ঞাপন নীতি অনুযায়ী, শহরের কোনও রাস্তাতেই পথচারীদের দৃষ্টি আটকে হোর্ডিং লাগানো বেআইনি। কারও বাড়ির জানলা বা বারান্দা ঢেকেও হোর্ডিং লাগানো যাবে না। ওভারহেড গেট বসানোও একই ভাবে বেআইনি। পুরসভার কিছু ‘নো অ্যাড জ়োন’ রয়েছে। সেখানেও হোর্ডিং বা তোরণ লাগানো যায় না। বড় মোড়ের কাছে হোর্ডিং বা তোরণ লাগালে রাস্তা থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব ছেড়ে রাখতে হয়। এ ছাড়াও, লাগানোর আগে পুরসভা থেকে ছাড়পত্র নিতে হয়। হোর্ডিং, তোরণ বা ওভারহেড গেট ধরে রাখার জন্য যে কাঠামো বানানো হয়েছে, তার ধারণক্ষমতা পরীক্ষা করে তবেই পুরসভা অনুমতি দেয়। স্থায়ী হোর্ডিং মাটি থেকে ন্যূনতম সাড়ে আট ফুট উচ্চতায় লাগাতে হবে। তবে এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘পুজোর সময়ে এর কিছুই মানা হয় না।’’

কিন্তু পুলিশের অনুষ্ঠানেও কি নিয়ম মানা হবে না? আপাতত যে সংস্থার উপরে তোরণ বানানোর দায়িত্ব ছিল, তাদের ভূমিকাই খতিয়ে দেখতে চলেছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Accident Kolkata Police collapsed
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE