Advertisement
১৭ মে ২০২৪
Road Accident in Behala

‘ও সোনাই, কোথায় গেলি!’ ছেলের স্কুলব্যাগ আঁকড়ে হাসপাতালের মর্গের সামনে ঠায় বসে সৌরনীলের মা

হাসপাতালের মর্গে রাখা ছেলের দেহ। আর বাইরে বসে ছেলের স্কুলব্যাগ আঁকড়ে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন মা দীপিকা সরকার। ধরা গলায় ডেকে চলেছেন ছোট্ট সোনাইকে। কিন্তু ছেলে যে আর কোনও দিন ফিরবে না!

Image of protest after road accident in behala

বেহালায় পথ দুর্ঘটনার পর বিক্ষোভকারীদের আটক করছে পুলিশ। ছবি— পিটিআই।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০২৩ ১৫:৪৪
Share: Save:

ছেলের স্কুলের ব্যাগ আঁকড়ে হাসপাতালের মর্গের সামনে ঠায় বসে সৌরনীলের মা দীপিকা সরকার। বার বার কেবল ডাকছেন, সোনাইকে। কিন্তু সোনাই যে আর ফিরবে না, বুঝেও বুঝতে পারছেন না অসহায় মা। যে ছেলে মাকে হাত নে়ড়ে টাটা করতে করতে স্কুলে গেল, তাকে আর কোনও দিন আদর করা হবে না! কী করেই বা মানবেন মা!

শুক্রবার সাতসকালে বেপরোয়া লরির ধাক্কায় বেহালার বড়িশা হাইস্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির পড়ুয়া সৌরনীলের মৃত্যু হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় এসএসকেএমের ট্রমা কেয়ারে ভর্তি তার বাবা। দুর্ঘটনার পর এলাকা অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। উত্তেজিত জনতা সৌরনীলের দেহ রাস্তায় রেখে বিক্ষোভ দেখান। ভাঙচুর করা হয় পুলিশের ভ্যান এবং বাইকে। স্থানীয়দের বিক্ষোভে কার্যত অবরুদ্ধ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ডায়মন্ড হারবার রোড। দফায় দফায় জনতার সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে পুলিশ। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে ফাটানো হয় কাঁদানে গ্যাসের শেল। কিন্তু তাতেও পুলিশের প্রতি জনতার অসন্তোষ চাপা থাকেনি।

রোজ সকালে বাবার হাত ধরে স্কুলে যেত সৌরনীল। শুক্রবারও তেমন বাড়ি থেকে বেরোতে বেরোতে মাকে টাটা করেছিল ছোট্ট সোনাই। ভাল করে আশীর্বাদ করে ছেলেকে বাবার হাতে তুলে দিয়েছিলেন মা। পরীক্ষা যে। সেই মায়ের কোল আচমকাই শূন্য হয়ে গেল। হাসপাতালের মর্গে বসে প্রলাপ বকছেন সদ্য ছেলে হারানো মা। কান্না চাপতে পারছেন না। কেবল ধরা গলায় ডেকে চলেছেন সোনাইকে। তিনি বলছেন, ‘‘স্কুল থেকে ফোন করেছিলেন স্যার, ‘সৌরনীলের মা এখনই চলে আসুন।’ আমি বললাম, ‘এখনই যেতে হবে?’ বললেন, ‘হ্যাঁ, এখনই আসুন।’ ভাবলাম কিছু মনে হয় দরকার। ওর বাবা মনে হয় স্কুলের ব্যাগে পেনসিল, রাবার ঢোকাতে ভুলে গিয়েছে। পরীক্ষা তো, তাই পেনসিল, রাবার লাগবে। আমি আবার সব গুছিয়ে নিয়ে রেডি হচ্ছি যাব বলে। তখন ওর বাবা ফোন করে বলছে, আমাদের অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে। সব শেষ হয়ে গেছে।’’

স্থানীয় সূত্রে খবর, শুক্রবার সকাল সাড়ে ৬ টা নাগাদ মাটিবোঝাই একটি লরি দ্রুত গতিতে এসে ধাক্কা মারে বড়িশা হাইস্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির পড়ুয়া সৌরনীল এবং তার বাবাকে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় খুদে পড়ুয়ার। গুরুতর জখম অবস্থায় প্রথমে নিকটবর্তী হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় বাবাকে। পরে তাঁকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই ট্রমা কেয়ার সেন্টারে বর্তমানে চিকিৎসা চলছে তাঁর। যে ঘটনা নিজের অসন্তোষ প্রশাসনের কাছে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যসচিবকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, কলকাতা পুলিশের ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ কর্মসূচি চলাকালীন কী করে এই ধরনের ঘটনা ঘটে? মুখ্যমন্ত্রীর অসন্তোষ প্রকাশ, প্রশাসনের নড়েচড়ে বসা— সবই চলছে কিন্তু ছোট্ট সোনাই যে আর ফিরবে না মায়ের কোলে, তা যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না সৌরনীলের মায়ের। আগামী ২৫ অগস্ট ছিল সৌরনীলের জন্মদিন। সে জন্য ছেলে উত্তেজিত ছিল। কী কী কেনা হবে, কী ভাবে কাটানো হবে জন্মদিন, তা নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে পরিকল্পনাও চলছিল পুরোদমে। বিশেষ সেই দিনটার দিকে তাকিয়ে ছিলেন মা, বাবাও। কিন্তু শুক্রবারের সকাল এক ঝটকায় বদলে দিল সব কিছু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Behala Accident Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE