হেলমেট ছাড়া তিন জন সওয়ারি নিয়ে ছুটল বাইক। রবিবার রাতে, ধর্মতলায়। নিজস্ব চিত্র
রাত গড়াতেই রাজপথে নেমে এল ওরা। তার পরে কয়েক ঘণ্টা ধরে চলল রাতের ‘কলকাতা শাসন’!
মাথায় হেলমেট নেই, একটি মোটরবাইকে তিন জন সওয়ারি। নিয়ম ভেঙে, গার্ডরেলের ফাঁক গলে, বেপরোয়া গতিতে ছুটে বেড়াল আরোহীরা। রাজপথে উর্দিধারী পুলিশ ছিল, ছিল যান শাসনের ব্যবস্থাও। কিন্তু ক্রিসমাস ইভের রাতে নজরে এল না আইনের কড়া বাঁধন।
উৎসবের রাতে শহরে বড় মাপের দুর্ঘটনার খবর জানায়নি লালবাজার। কিন্তু পথঘাটে বেরোনো আমজনতার আতঙ্ক, এমন চলতে থাকলে বর্ষশেষের সপ্তাহে মহানগরে একাধিক দুর্ঘটনা ঘটা অসম্ভব নয়। এ বছর ক্রিসমাস ইভের রাতে কত বেপরোয়া মোটরবাইকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা প্রকাশ্যে আনেনি লালবাজার। শুধু পুলিশ জানিয়েছে, মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানোর জন্য গ্রেফতার করা হয়েছে ২৮ জনকে।
কী দেখা গিয়েছে রবিবার রাতে?
রাত বারোটা। গির্জায় গির্জায় প্রার্থনা শুরু হয়েছে। এমন সময়ে ময়দানের দিক থেকে পার্ক স্ট্রিট উড়ালপুল দিয়ে ধর্মতলার দিকে ছুটে যাচ্ছিল একের পর এক মোটরবাইক। অনেকগুলিতে তিন জন সওয়ারি। মাথায় হেলমেট বেশির ভাগেরই নেই বললে চলে। স্কুটিতেও হেলমেটহীন তিন জন সওয়ারি নজরে এসেছে। অধিকাংশ মোটরবাইকেরই অভিমুখ যে ধর্মতলা নয়, তা মালুম হল উড়ালপুল থেকে নামতেই। তীব্র গতিতে উড়ালপুল থেকে নেমে ডোরিনা মোড়ের দিকে যাচ্ছিল না মোটরবাইকগুলি। নিউ মার্কেটের সামনে গার্ডরেলের ফাঁক গলে ফের উড়ালপুল ধরে ময়দানের দিকে ছুটছিল তারা।
পার্ক স্ট্রিটে ভিড় সামলাতে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। গাড়ির চাপ সামলাতে ছিলেন ট্র্যাফিকের অভিজ্ঞ অফিসারেরাও। সেই পথে বেপরোয়া মোটরবাইক দেখা যায়নি ঠিকই। কিন্তু হেলমেটহীন সওয়ারি আকছার নজরে এসেছে। ময়দানের আলো-আঁধারি রাস্তাতেও নজরে এসেছে মোটরবাইক দল। কেউ গাড়ি ছুটিয়েছেন হেলমেটহীন বান্ধবীকে নিয়ে, কেউ কেউ আবার দল বেঁধে রাস্তার পাশে মেতেছিলেন খোশগল্পে। রাত একটার পরে দক্ষিণ কলকাতা, ই এম বাইপাসের বিভিন্ন এলাকাতেও চোখে প়ড়েছে ধুন্ধুমার মোটরবাইকের সওয়ারি।
রাত প্রায় ২টো। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে ফুটপাথে চায়ের দোকানে দাঁড়িয়েছিলেন জনা কয়েক যুবক। আচমকাই বিকট শব্দে আঁতকে উঠলেন তাঁদের এক জন। পিছন ফিরে দেখলেন, বেপরোয়া গতিতে মোটরবাইক রেস চলছে। কোনওটিতে দু’জন সওয়ারি, কোনওটিতে তিন জন। মাথায় হেলমেটের বালাই নেই।
এমন দৃশ্য দেখে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, উৎসবের মরসুমে কি ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ প্রকল্পের প্রচার বন্ধ রাখা হচ্ছে? বিশেষ করে আগামী ৭ জানুয়ারি এই প্রকল্প ঘিরেই ম্যারাথনের আয়োজন করেছে কলকাতা পুলিশ। তার আগে উৎসবের রাতে এই বেপরোয়া মোটরবাইক কী বার্তা দিল শহরবাসীকে? অনেকে এ-ও বলছেন, ক্রিসমাস ইভ আসলে ‘টিজার’ মাত্র। এমন চলতে থাকলে বর্ষশেষের রাতে এই বিশৃঙ্খলা আরও বড় চেহারা নেবে।
পুলিশের একাংশই জানাচ্ছে, গত বছর ক্রিসমাস ইভে কিন্তু বেশি ধরপাক়ড় হয়েছিল। এ বছর ডিউটি শুরুর আগে সেই কড়া বার্তা পুলিশের নিচুতলায় পৌঁছয়নি বলেই অন্দরের খবর। ট্র্যাফিক বিভাগের এক কর্তা অবশ্য এই অভিযোগ মানতে নারাজ। তিনি বলেন, বিভিন্ন জায়গায় গার্ডরেল বসিয়ে গাড়ি আটকানো হয়েছে। বেপরোয়া বাইকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। অনেক মোটরবাইক রাস্তায় থাকা পুলিশকর্মীদের ধোঁকা দিয়ে পালালেও সিসিটিভি ক্যামেরার চোখে তাদের চেহারা ও গাড়ির নম্বরপ্লেট ধরা পড়েছে। তা দেখেই মামলার চিঠি পাঠানো হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy