Advertisement
E-Paper

রেড রোড-কাণ্ডে চার দিন পর শ্বশুরবাড়ির পথে পাকড়াও সাম্বিয়া

পাসপোর্ট আটক করা হয়েছিল, যাতে বিদেশে পালাতে না পারেন। সন্দেহ করা হচ্ছিল, হয়তো গা ঢাকা দিয়েছেন ভিন্ রাজ্যে। শেষ পর্যন্ত খাস কলকাতাতেই গ্রেফতার করা হল রেড রোড কাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত সাম্বিয়া সোহরাবকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৬ ০২:৫৯
সাম্বিয়া সোহরাব

সাম্বিয়া সোহরাব

পাসপোর্ট আটক করা হয়েছিল, যাতে বিদেশে পালাতে না পারেন। সন্দেহ করা হচ্ছিল, হয়তো গা ঢাকা দিয়েছেন ভিন্ রাজ্যে। শেষ পর্যন্ত খাস কলকাতাতেই গ্রেফতার করা হল রেড রোড কাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত সাম্বিয়া সোহরাবকে। শনিবার রাত এগারোটা নাগাদ বেকবাগান এলাকা থেকে তাঁকে ধরা হয়েছে বলে কলকাতা পুলিশের দাবি।

তবে গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, ভিন্ রাজ্যে পালানোর আশঙ্কাটাও মিথ্যা ছিল না। বুধবারই কোলাঘাট হয়ে গাড়িতে রাঁচি গিয়েছিলেন সাম্বিয়ারা। শনিবার রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ কলকাতায় ফেরেন। যাচ্ছিলেন কড়েয়ায় শ্বশুরবাড়ির দিকে। সেই খবর পেয়েছিল পুলিশ। শ্বশুরবাড়ির রাস্তা বালু হক্কর লেন থেকে রাত এগারোটা নাগাদ ধরা হয় সাম্বিয়াকে, বলেছেন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা-প্রধান দেবাশিস বড়াল।

পুলিশের একটি অংশ অবশ্য বলছে, গ্রেফতার নয়, আসলে আত্মসমর্পণ করেছেন সাম্বিয়া। পুলিশ সূত্রে এ-ও দাবি করা হয়েছে যে, বুধবার ভোরে রেড রোডে বেপরোয়া ভাবে অডি গাড়ি চালানোর কথা সাম্বিয়া স্বীকার করেছেন। ওই গাড়ির ধাক্কাতেই মারা যান বায়ুসেনার কর্পোরাল অভিমন্যু গৌড়। এর পরই সাম্বিয়া ও তাঁর দুই সঙ্গী শাহনওয়াজ (শানু) ও জনি বেপাত্তা হন। গা ঢাকা দেন সাম্বিয়ার দাদা আম্বিয়া ও তাঁদের বাবা, তৃণমূল নেতা মহম্মদ সোহরাব।

কিন্তু আম্বিয়া, শানু, জনি ও মহম্মদ সোহরাব কোথায়? শেষ তিন জনের ব্যাপারে এখনও কিছু জানানো হয়নি পুলিশ সূত্রে। তবে আম্বিয়া সম্ভবত বাংলাদেশে সীমান্তবর্তী কোনও এলাকায় রয়েছেন। সেখানে তাঁর সঙ্গে তাঁদের সংস্থার ৪ কর্মীও রয়েছেন বলে পুলিশ জেনেছে।

এ দিন সাম্বিয়া গ্রেফতার হওয়ার আগেই লালবাজারের একাধিক কর্তা দাবি করেন, তাঁরা এক প্রকার নিশ্চিত, অডি চালাচ্ছিলেন সাম্বিয়াই। লালবাজার সূত্রের খবর, ঘটনার দিন খিদিরপুর রোডে ট্রাফিক পুলিশের এক কনস্টেবল দুর্ঘটনার আগে গাড়িটিকে আটকানোর চেষ্টা করেছিলেন। তাঁকে সাম্বিয়ার ছবি দেখালে তিনি চিনতে পারেন বলে গোয়েন্দাদের দাবি। শুক্রবার শানুর পরিবারের তরফে দায়ের করা নিখোঁজ ডায়েরিতেও দাবি করা হয়েছিল, সাম্বিয়াই গাড়ি চালাচ্ছিল বলে ফোনে নিজের বৌদিকে জানিয়েছেন শানু।

পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাত বারোটার পরে গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছিলেন সাম্বিয়া। বুধবার ওই অঘটনের পরে সকাল ৭টা ৫ মিনিটে গাড়ি ছাড়া বাড়ি ফেরেন। এর পরে শানু ও জনিকে নিয়ে যান জনির বাড়িতে। বেলা ১০টার পরে তাঁরা কলকাতা ছাড়েন। যান কোলাঘাটে। বুধবার বিকেল থেকে সাম্বিয়া, শানুদের মোবাইল ফোনের টাওয়ার ছিল কোলাঘাট। সেখান থেকে যান রাঁচি।

প্রশ্ন হল, কেন কলকাতায় ফিরলেন সাম্বিয়া? পুলিশ সূত্রে বলা হচ্ছে, রাঁচিতে গিয়ে সমস্যায় পড়ে যান সাম্বিয়ারা। টাকাপয়সা বা অন্য কোনও ভাবে কারও কাছ থেকে সাহায্য না পেয়েই সঙ্কটে পড়েন। এ ক্ষেত্রে পুলিশের একটি পরীক্ষিত কৌশলই কাজে এসেছে। তা হল ভাতে মেরে হাতে পাওয়া! পুলিশ জানত, যেখানেই সোহরাবরা পালিয়ে থাকুক, টাকায় টান পড়লেই গা ঢাকা দিয়ে থাকতে সমস্যা হবে। তাই কোনও ভাবেই তাঁরা যাতে আর্থিক বা অন্য কোনও রকম সাহায্য না পান, লালবাজার তার জন্য সচেষ্ট হয়। সোহরাব পরিবারের ঘনিষ্ঠ সচিন শা গ্রেফতার হওয়ায় এ কাজে সুবিধে হয়ে যায় গোয়েন্দাদের।

সচিনকে গ্রেফতার করা হয়েছে অবশ্য ময়দান থানা এলাকায় বেআইনি অস্ত্র কেনাবেচা সংক্রান্ত মামলায়। তবে সূত্রের খবর, এই সচিনই সোহরাবদের পারিবারিক ব্যবসা দেখভাল করেন। গোয়েন্দারা এ-ও জেনেছেন, বর্তমানে মহম্মদ সোহরাবের ব্যবসা দেখছিলেন বড় ছেলে আম্বিয়া। সচিন তাঁরই ডান হাত। এক গোয়েন্দা কর্তা বলেন, ‘‘বাবা ফল-মান্ডি ও অন্যান্য ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় ছেলেরাই হোটেল ব্যবসা দেখছিলেন। আর ওই ব্যবসার হাল ছিল সচিনের হাতে।’’

সচিনকে শনিবার দুপুরে ব্যাঙ্কশাল আদালতের মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে পেশ করা হলে বিচারক তাঁকে ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। শনিবার বিকেলে আদালত থেকে লালবাজারে নিয়ে যাওয়ার সময় সংবাদমাধ্যমকে সচিন জানান, সোহরাব তাঁর মালিক।

গোয়েন্দারা জানান, শুধু আম্বিয়া নয়, গোটা সোহরাব পরিবারেরই ডান হাত এই সচিন। ঘটনার পর থেকে পলাতক সোহরাব পরিবারের দুই ছেলের সঙ্গে পরোক্ষ যোগাযোগ ছিল সচিনের। পলাতক অবস্থায় সোহরাব ভাইরা যাতে কোনও রকম সাহায্য না পান, সে দিকে সজাগ ছিল পুলিশ।

এক পুলিশ কর্তা মনে করিয়ে দেন, গিরিশ পার্ক কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত গোপাল তিওয়ারিকে গ্রেফতার করার আগে ঠিক এই কৌশলই কাজে এসেছিল। গোপালের সব শাগরেদদের গ্রেফতার করে গোয়েন্দারা তাকে একা করে দেন। গোপাল পরে বাধ্য হয়ে কলকাতায় ফেরে। ফিরলেন সাম্বিয়াও।

kolkata news sambia red road
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy