Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
শিল্পীর ভাবনায় আমরা মানবিকতায়

হিংসার নীরব প্রতিবাদ করে মা আসছেন

কলকাতার পুজো এখন থিমের পুজো। যত বড় শিল্পী, তত জবরদস্ত থিম। এই সব থিমের মধ্যে উঠে আসে বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার প্রতিচ্ছবি। শিল্পী কী ভাবছেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে জানেন না পুজোর উদ্যোক্তারাও। শেষ মুহূর্তে চমক দেওয়ার জন্য শিল্পীরা থিম লুকিয়ে রাখেন আস্তিনে। এমনই কিছু থিম বেছে এনেছে আনন্দবাজার।মায়ের মুখের অভিব্যক্তি বড় অদ্ভুত। কখনও মনে হবে, তাঁর অভিমান হয়েছে। কখনও মনে হবে, অস্ত্রের ঝনঝনানি, হানাহানিতে ক্ষুব্ধ মায়ের দৃষ্টিতে যেন প্রতিবাদের ভাষা।

শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৭ ০০:৫৯
Share: Save:

চার দিকে নানা ধরনের অস্ত্র ডাঁই করে রাখা। সেই অস্ত্রের স্তূপ মাড়িয়ে নিরস্ত্র মা সন্তান কোলে এগিয়ে চলেছেন।

মায়ের মুখের অভিব্যক্তি বড় অদ্ভুত। কখনও মনে হবে, তাঁর অভিমান হয়েছে। কখনও মনে হবে, অস্ত্রের ঝনঝনানি, হানাহানিতে ক্ষুব্ধ মায়ের দৃষ্টিতে যেন প্রতিবাদের ভাষা।

বেহালা-টালিগ়ঞ্জ এলাকায় শিল্পী গৌরাঙ্গ কুইল্যা সাম্প্রতিক এক সমস্যাকে ধরে এ বার তাঁর থিম তৈরি করেছেন। এক দিকে থাকছে মানুষের জন্মকুণ্ডলী। যেখানে প্রতিটি নবজাতকের গায়ে নির্দিষ্ট একটি লেবেল সেঁটে দেওয়া হয়েছে। যাতে তার ধর্ম, জাত, সে কোন ভাষায় কথা বলে— তা স্পষ্ট করে জানানো হয়েছে। অর্থাৎ শিশুটি ওই পরিচয়েই বেড়ে উঠবে। নিজের ধর্ম, জাত্যাভিমান ধীরে ধীরে বাড়বে। আর সেটাই একটা মানুষের থেকে তাঁর প্রতিবেশীকে আলাদা করে দেবে। শিল্পী বোঝাতে চেয়েছেন, জন্মের পর থেকেই কারও পরিচয় নির্দিষ্ট করে দিয়ে বপন করা হচ্ছে ভেদাভেদের বীজ।

মানুষের এই ভেদাভেদের ভাব একটা সময়ে এতই প্রকট হয়েছে যে তা ড্রাগনের মতো গোটা সামাজিক কাঠামোকেই গিলে খেতে চাইছে। সেই ড্রাগনের চোখ থেকে যে আগুন ঠিকরে বেরোচ্ছে, তা পারস্পরিক অবিশ্বাস আর হিংসার। সেই আগুন পুড়িয়ে দিতে চাইছে ভ্রাতৃত্ববোধ, বন্ধুত্ব এবং হাতে হাত দিয়ে সমাজ গড়ার অঙ্গীকারকে।

অনেকের মনে হতে পারে, শিল্পী গৌরাঙ্গ মাকে আহ্বান করেছেন ওই ড্রাগনের হাত থেকে সমাজকে মুক্ত করতে। কিন্তু তিনি সেই পথে যাননি। মা দুর্গা এখানে নিরস্ত্র। এক প্রতিবাদী নারী চরিত্র তিনি। সন্তানদের মধ্যে মারামারি, হিংসা দেখে মা যেমন মানসিক আঘাত পান এবং এক সময়ে সংসার বাঁচাতে নীরব প্রতিবাদ জানান— শিল্পীর দুর্গা প্রতিমা সেই মায়েরই প্রতিরূপ।

মায়ের চার দিকে ছড়ানো রয়েছে নানা অস্ত্র। যার কোনও একটি দিয়েই তিনি অনায়াসে বিনাশ করতে পারেন বিদ্বেষের আগুন ছড়ানো ড্রাগনটিকে। কিন্তু মা এখানে তা করেননি। অস্ত্র মাড়িয়ে তিনি আসছেন ধরাধামে। মায়ের সেই প্রতিবাদী চোখের ভাষাই যেন হাজারো অস্ত্রের বিকল্প।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE