Advertisement
০২ মে ২০২৪

সজলকে মনে রাখবেন শিল্পীরা

রাত ৮টা নাগাদ সজলবাবুর মামাতো ভাই রাজকুমার মুখোপাধ্যায়কে পুলিশ ফোনে জানায় যে, পার্ক স্ট্রিটে তাঁর দাদার দুর্ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের ফোন পেয়েই এসএসকেএম হাসপাতালে ছোটেন রাজকুমারবাবু। তত ক্ষণে অবশ্য খবর ছড়িয়ে গিয়েছে যে, সজলবাবু মারা গিয়েছেন।

শিল্পকর্মে: সরকারি আর্ট কলেজে মডেলের ভূমিকায় সজলকুমার কাঞ্জিলাল। (ডান দিকে) শিল্পী তাপস দাসের তুলিতে।

শিল্পকর্মে: সরকারি আর্ট কলেজে মডেলের ভূমিকায় সজলকুমার কাঞ্জিলাল। (ডান দিকে) শিল্পী তাপস দাসের তুলিতে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৯ ০৩:০৫
Share: Save:

ঘোর কাটছে না পাড়ার!

শনিবার সন্ধ্যায় অনেকেরই বাড়িতে টিভি খোলা ছিল। খবরে তাঁরা দেখেছিলেন, দুর্ঘটনার জেরে পার্ক স্ট্রিটে মেট্রো বন্ধ। কামরার দরজায় হাত আটকে মারা গিয়েছেন এক ব্যক্তি। এ ভাবে কারও যে মৃত্যু হতে পারে, তা ভেবে বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন অনেকে। কিন্তু ধাক্কা খাওয়ার যেন আরও বাকি ছিল। আচমকাই এক মহিলার কান্নাকাটিতে খবর ছড়িয়ে গেল গোটা পাড়ায়। বোসপুকুরের শীতলা মন্দিরের কাছে সরু গলিটির বাসিন্দারা জানতে পারলেন, মেট্রোর ওই দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন তাঁদেরই প্রতিবেশী সজল কাঞ্জিলাল। শনিবার সকালেও যাঁকে দেখেছিলেন পাড়ার বাসিন্দাদের অনেকে।

রাত ৮টা নাগাদ সজলবাবুর মামাতো ভাই রাজকুমার মুখোপাধ্যায়কে পুলিশ ফোনে জানায় যে, পার্ক স্ট্রিটে তাঁর দাদার দুর্ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের ফোন পেয়েই এসএসকেএম হাসপাতালে ছোটেন রাজকুমারবাবু। তত ক্ষণে অবশ্য খবর ছড়িয়ে গিয়েছে যে, সজলবাবু মারা গিয়েছেন। প্রতিবেশীদের অনেকেরই খবরটা বিশ্বাস হচ্ছিল না প্রথমে।

ভাইয়ের তিন-কামরার বাড়ির একটি ছোট ঘরে থাকতেন অকৃতদার সজলবাবু। নন্দন চত্বরে লিটল ম্যাগাজিন বিক্রি করেই মোটামুটি চলে যেত তাঁর। আত্মীয়েরা জানাচ্ছেন, নাচ-গান ভালবাসতেন সজলবাবু, নিজে করতেনও। ছবি আঁকার টানও ছিল। সেই টানেই ছুটতেন আর্ট কলেজে। আর্ট কলেজের শিল্পীদের জন্য মডেলও হয়েছেন সজলবাবু। প্রতিদিন দুপুর দু’টো-আড়াইটে নাগাদ সজলবাবুকে বেেরাতে দেখতেন পড়শিরা।

২০১৬ সালে সরকারি আর্ট কলেজ থেকে পাশ করেছেন শিল্পী তাপস দাস। সজলবাবুকে মডেল করে ছবি এঁকেছেন তিনি। বললেন, ‘‘প্রথমে টিভিতে পিছন থেকে দেখেই আশঙ্কা হয়েছিল। পরে বুঝতে পেরে বন্ধুদের জানালাম। আমাদের একমাত্র পুরুষ মডেল ছিলেন উনি। আমাদের সবার কাজের মধ্যেই উনি বেঁচে থাকবেন।’’

ইট বার-করা একতলা বাড়িতে বসে কাঁদছিলেন রাজকুমারবাবুর স্ত্রী শর্মিষ্ঠাদেবী। তিনি বলেন, ‘‘আমার শরীর খারাপ। ডাক্তার দেখিয়ে ফিরে দেখলাম, উনি বেরোনোর জন্য তৈরি হচ্ছেন। উনি জানালেন, ওঁরও পায়ে ব্যথা। তাই বলেছিলাম আজ বাড়িতে থাকতে। তা-ও বেরোলেন। কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছি না।’’ আত্মীয় তথা প্রতিবেশী কৃষ্ণা ভট্টাচার্যের চোখেও জল। তাঁর কথায়, ‘‘আজ সকালেও তো ওঁকে দেখলাম। খুব ভাল মানুষ ছিলেন। ভাবতেই পারছি না যে, দুর্ঘটনায় উনিই মারা গিয়েছেন।’’ শনিবার রাতে সজলবাবুর পাড়ায় ঢুকে দেখা গেল, বাড়ির সামনে লোকজনের ভিড়। শোকস্তব্ধ পরিবেশের মধ্যেও মেট্রো কর্তৃপক্ষের প্রতি কোথাও একটা চাপা ক্ষোভ। আর এক আত্মীয় সুব্রত দাস বললেন,‘‘এটা পুরোপুরি মেট্রোর অবহেলা। আগেও মেট্রোর গাফিলতিতে ভুগেছে মানুষ। এ বার শিকার আমাদের বাড়ির লোক। আমরা মেট্রোর বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ করব পুলিশে।’’

সজলবাবুর পাড়ার পাশের ৬৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর বিজনলাল মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমাকে প্রথমে মেয়র, পরে মুখ্যমন্ত্রী ফোন করেন। তার পরেই সজলবাবুর বাড়ি খুঁজে চলে আসি।’’ শনিবার রাতে তৃণমূলের স্থানীয় বিধায়ক জাভেদ খান এবং সাংসদ মালা রায় সজলবাবুর বাড়িতে গিয়ে তাঁর আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করেন। সজলবাবু পাড়া ৯১ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর অন্নপূর্ণা দাসও তাঁদের বাড়িতে যান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE