Advertisement
E-Paper

খারাপ মালমশলা, গলদ নকশাতেও

আশঙ্কাই সত্যি হল। পোস্তায় নির্মীয়মাণ উড়ালপুল ভেঙে পড়ার ঘটনায় নিম্নমানের ইমারতি সামগ্রী ও নকশার ত্রুটি থাকার তত্ত্বতেই সিলমোহর দিল দুই কেন্দ্রীয় সংস্থা।

শিবাজী দে সরকার

শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:০০

আশঙ্কাই সত্যি হল।

পোস্তায় নির্মীয়মাণ উড়ালপুল ভেঙে পড়ার ঘটনায় নিম্নমানের ইমারতি সামগ্রী ও নকশার ত্রুটি থাকার তত্ত্বতেই সিলমোহর দিল দুই কেন্দ্রীয় সংস্থা। লালবাজারের খবর, রেলের অধীনস্থ সংস্থা ‘রাইট্স’ এবং হায়দরাবাদের ন্যাশনাল টেস্ট হাউসকে ভেঙে পড়ার কারণ খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দিতে বলেছিলেন তদন্তকারীরা। সেই রিপোর্টেই এমন দাবি করা হয়েছে।

পুলিশের এক কর্তা জানান, ওই দুর্ঘটনার পরেই ভেঙে পড়া উড়ালপুলের নমুনা সংগ্রহ করেন দুই সংস্থার প্রতিনিধিরা। বৃহস্পতিবার, ঘটনার ১৭৫ দিনের মাথায় কলকাতা পুলিশের কাছে প্রায় ৫০০ পাতার রিপোর্ট তুলে দিয়েছে দুই কেন্দ্রীয় সংস্থা। তাতে মূলত ওই দু’টি কারণকেই চিহ্নিত করা হয়েছে।

রিপোর্ট হাতে পেয়েই ধৃত দুই কেএমডিএ-কর্তা প্রিয়তোষ ভট্টাচার্য ও শান্তনু মণ্ডলের বিরুদ্ধে শুক্রবার ব্যাঙ্কশাল আদালতে অনিচ্ছাকৃত ভাবে মৃত্যু ঘটানো-সহ পাঁচটি ধারায় চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। তাতে ওই রিপোর্টের মূল বক্তব্য রয়েছে। সরকারি কৌঁসুলি তমাল মুখোপাধ্যায় মারফত ১৩ নম্বর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে চার্জশিট জমা পড়ে। আগামী সোমবার এই মামলার শুনানি। এর আগে উড়ালপুলের নির্মাতা সংস্থা আইভিআরসিএল-এর ১০ কর্তার বিরুদ্ধেও চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। তাঁদের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ করা হয়েছে। উড়ালপুল-কাণ্ডে ধৃতেরা সকলেই জেলে রয়েছেন।

তদন্তকারীদের একাংশ জানান, ৫০০ পাতার রিপোর্টে ইস্পাতের মান-সহ কয়েকটি বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে। সেই সূত্রেই দুর্ঘটনায় আরও কার কার গাফিলতি ছিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনে উড়ালপুল নির্মাণকাজের সঙ্গে জড়িত আরও কয়েক জনকে গ্রেফতার করা হতে পারে বলে পুলিশের অন্দরের খবর।

গত ৩১ মার্চ ভেঙে পড়ে ওই উড়ালপুলের একাংশ। চাপা পড়ে মারা যান ২৬ জন। নির্মাতা সংস্থা আইভিআরসিএলের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। তার ভিত্তিতে সংস্থার দশ কর্তা গ্রেফতার হন। নির্মাতা সংস্থার পাশাপাশি নির্মাণকাজে নজরদারির দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি সংস্থা কেএমডিএ-র বিরুদ্ধেও গাফিলতির অভিযোগ উঠেছিল। তার ভিত্তিতে চলতি বছরের ২৮ জুন কেএমডিএ-র দুই কর্তাকেও গ্রেফতার করে পুলিশ।

পুলিশ সূত্রের খবর, বিবেকানন্দ উড়ালপুল প্রকল্পের দায়িত্বে ছিলেন কেএমডিএ-র তৎকালীন চিফ ইঞ্জিনিয়ার (এডি সেক্টর) প্রিয়তোষ ভট্টাচার্য ও এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার (এডি সেক্টর) শান্তনু মণ্ডল৷ নিয়ম অনুযায়ী, ঢালাইয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজের সময়ে কেএমডিএ-র কোনও ইঞ্জিনিয়ারের থাকার কথা৷ শান্তনুবাবুর তত্ত্বাবধানেই নির্মাণকাজ চলার কথা ছিল৷ কিন্তু ঘটনার দিন তিনি ছিলেন না বলে অভিযোগ। তদন্তকারীদের একাংশের দাবি, উড়ালপুলের ৪০ নম্বর স্তম্ভের ইস্পাতের গুণমান নিয়ে প্রশ্ন ছিল। তা খতিয়ে দেখার কথা ছিল কেএমডিএ-র। সেই দায়িত্বও তারা পালন করেনি। কেএমডিএ-এর এক সূত্রের দাবি, কোনও অজ্ঞাত কারণে ঠিকাদার সংস্থা ঢালাই করার বিষয়ে বেশি তৎপরতা দেখায়। ওই সূত্রের বক্তব্য, ওই অংশ ঢালাই করা নিয়ে ঠিকাদার সংস্থা যে প্রস্তাব দেয়, চিফ ইঞ্জিনিয়ার প্রিয়তোষবাবু তাতে আপত্তি জানিয়ে ফাইলে নোট দেন। উড়ালপুলের স্তম্ভ নির্মাণের জন্য যে ইস্পাত ব্যবহার করা হয়েছিল, তার গুণমান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন চিফ ইঞ্জিনিয়ার। ওই সূত্রের কথায়, ‘‘ঢালাইয়ের আগে ‘ফেব্রিকেশন ড্রইং’ পাওয়া যায়নি।’’

প্রশ্ন উঠেছে, এত লোকের গাফিলতি থাকা সত্ত্বেও এ দিন শুধু দুই কেএমডিএ কর্তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হল কেন? লালবাজারের একাংশের ব্যাখ্যা, দুই সংস্থার দেওয়া রিপোর্টের সিংহভাগ নির্মাণের প্রযুক্তিগত বিষয় নিয়ে। কিন্তু প্রিয়তোষবাবু ও শান্তনুবাবুকে গ্রেফতারের পরে ৯০ দিন পেরিয়ে যাচ্ছিল। ফলে চার্জশিট দেওয়া না হলে তাঁরা জামিনে ছাড়া পেয়ে যেতেন। তাই তাঁদের নামে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। লালবাজারের দাবি, রিপোর্ট ভাল করে পড়ে সব পক্ষের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হবে। ‘‘তেমন মনে হলে ইস্পাত নির্মাণকারী রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার অফিসারদেরও ছাড় দেওয়া হবে না’’ — মন্তব্য এক গোয়েন্দাকর্তার।

Report Flyover Bridge
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy