ভগ্নদশা: এ ভাবেই ভেঙে পড়েছে ঘরের ছাদের একাংশ। (ইনসেটে) যশবিন্দর কউর। রবিবার, বন্ডেল রোডে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।
একটি ঘর থেকে বিকট শব্দ শুনে ছুটে গিয়েছিলেন আশপাশের জনা কয়েক যুবক। তাঁরা দেখেন, এক কামরার ওই ঘরের ছাদের একাংশ ভেঙে পড়েছে। আর ঘরের ভিতর থেকে ভেসে আসছে এক মহিলার গোঙানির শব্দ। তড়িঘড়ি শুরু হয় ভেঙে পড়া অংশ সরানোর কাজ। চাপা পড়া ওই মহিলাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মৃত্যু হয় তাঁর। রবিবার দুপুর দুটো নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে কড়েয়া থানা এলাকায়। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার নাম যশবিন্দর কউর (৫০)।
জানা গিয়েছে, কলকাতা পুরসভার ৬৫ নম্বর ওয়ার্ডে বন্ডেল রোডে একতলা বাড়ির একটি অংশে স্বামী রেশম সিংহ এবং এক ছেলের সঙ্গে ভাড়া থাকতেন যশবিন্দর। তাঁর দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে কয়েক বছর আগে। স্থানীয় সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, রবিবার দুপুরে ঘটনার সময়ে বাড়িতে একাই ছিলেন ওই মহিলা। ছুটির দিন হওয়ায় স্বামী ও ছেলে বাড়িতে থাকলেও
তাঁরা ওই ঘরে ছিলেন না। ঘরে কাজ করার সময়েই আচমকা ছাদের একাংশ ভেঙে তার নীচে চাপা পড়ে যান যশবিন্দর। ঘরের দেওয়াল তাঁর উপরে ভেঙে পড়ে। ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী আশিস তিওয়ারি বলেন, ‘‘শব্দ শুনে এসে দেখি, ঘরের ভিতর থেকে গোঙানির আওয়াজ আসছে। সঙ্গে সঙ্গে আমরা ওই মহিলাকে বার করে আনার চেষ্টা করি। দ্রুত ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে উদ্ধার করে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।’’ যদিও এসএসকেএমে নিয়ে যাওয়ার পথেই মৃত্যু হয় তাঁর। আজ, সোমবার এসএসকেএমে দেহের ময়না-তদন্ত হবে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে কড়েয়া থানার পুলিশ। পৌঁছয় কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এবং কলকাতা পুরসভার কর্মীরা। তাঁরাই ঘরের বিপজ্জনক অংশ ভেঙে ফেলার কাজ শুরু করেন। এ দিনের ঘটনার পরেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের ভাড়াটেদের মধ্যে। যশবিন্দরদের পাশের এক ভাড়াটে মনজিৎ কউর বলেন, ‘‘প্রতিটি ঘরের ভগ্নপ্রায় অবস্থা। বৃষ্টি হলেই ছাদ থেকে জল পড়ে। বার বার সংস্কারের কথা বলা হলেও কাজ হয় না। যে কোনও সময়ে বাকি অংশও ভেঙে আবার এমন ঘটনা ঘটতে পারে।’’
জানা গিয়েছে, ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ওই বাড়িতে ভাড়ায় আছে যশবিন্দরের পরিবার। একতলা ওই বাড়ির পাশের ঘরগুলিতেও কয়েকটি পরিবার ভাড়া থাকে। পুলিশ জানিয়েছে, প্রোমোটিংয়ের জন্য কয়েক বছর আগেই পুরো জমিটি বিক্রি হয়ে যায়। তখন ভাড়াটে কয়েকটি পরিবারের জন্য পুনর্বাসন দেওয়া হবে বলে ঠিক হয়েছিল। কিন্তু ওই বাড়ি ভেঙে নতুন করে তৈরি করার কাজ এগোয়নি।
৬৫ নম্বর ওয়ার্ডের কোঅর্ডিনেটর নিবেদিতা শর্মা বলেন, ‘‘বাড়িটিকে আগেই বিপজ্জনক হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। ঝড়-বৃষ্টি হলেই সব ভাড়াটেকে ওখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হত। একাধিক বার সংস্কারের কথা বলা হয়েছিল।’’ তবু কেন সংস্কার করা হল না, তা নিয়ে এ দিন প্রশ্ন তুলছেন স্থানীয়েরা।
প্রসঙ্গত, গত কয়েক দিনে শহরের বেশ কয়েকটি পুরনো বাড়ি ভেঙে পড়ার ঘটনা সামনে এসেছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রশ্ন উঠেছে রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে। এ দিন আবার পুরনো বাড়ি ভেঙে এক মহিলার মৃত্যু, ভগ্নপ্রায় বাড়ির বাসিন্দাদের নিরাপত্তা নিয়ে ওঠা প্রশ্নকেই নতুন করে সামনে আনল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy