Advertisement
E-Paper

আবাসনের চাবি চেয়ে মুখ পোড়াল পুলিশ

চাবি চেয়ে উল্টে সমালোচনার মুখে পুলিশ। কালীপুজো আর দীপাবলির রাতে শব্দবাজির দৌরাত্ম্য ঠেকাতে বিধাননগর কমিশনারেট এলাকার বিভিন্ন আবাসনের বাসিন্দাদের কাছে শেষ মুহূর্তে ছাদ আর আবাসনের গেটের নকল চাবি চেয়েছিল পুলিশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৫ ০০:৪৫

চাবি চেয়ে উল্টে সমালোচনার মুখে পুলিশ।

কালীপুজো আর দীপাবলির রাতে শব্দবাজির দৌরাত্ম্য ঠেকাতে বিধাননগর কমিশনারেট এলাকার বিভিন্ন আবাসনের বাসিন্দাদের কাছে শেষ মুহূর্তে ছাদ আর আবাসনের গেটের নকল চাবি চেয়েছিল পুলিশ। যাতে ছাদে নিষিদ্ধ শব্দবাজি ফাটলে, সেখানে তারা পৌঁছতে পারে। বাস্তবে দেখা গেল হাতে গোনা এক-দু’টি আবাসন ছাড়া কেউই সে আবেদনে সাড়া দিল না। ফলে সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে যে, প্রতি বারের মতো এ বারও দীপাবলির রাতে নিষিদ্ধ শব্দবাজি ধরতে বিধিভঙ্গকারীদের পিছনে ছুটতে হবে কমিশনারেটের পুলিশকে।

সোমবার বিকেলে লেকটাউন থানায় সাংবাদিক বৈঠক করে এডিসিপি (বিধাননগর) দেবাশিস ধর বড় বড় আবাসনগুলির কাছে আবেদন করেছিলেন আবাসনের দরজা ও ছাদের দরজার নকল চাবি থানায় জমা দিতে। এমন আবেদনে চাবি দেওয়া তো দূর, উল্টে বাসিন্দাদের একাংশের সমালোচনার মুখে পড়েছে পুলিশ।

সল্টলেক, লেকটাউন, বাঙুর, হলদিরামের মতো এলাকায় কালীপুজো আর দীপাবলির রাতে আবাসনগুলির ছাদ থেকে নিষিদ্ধ শব্দবাজি ছোড়ার নানা অভিযোগ প্রতি বারই আসে। ফলে এই বছর বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ শব্দবাজি সম্বন্ধে সচেতনতা তৈরি করতে পথনাটক, পদযাত্রার পাশাপাশি আবাসনের চাবিও চেয়েছিল।

কিন্তু আবেদন কার্যত বিফলেই গেল। সরাসরি স্বীকার না করলেও পুলিশ আধিকারিকদেরই একাংশ জানান, এডিসিপি-র নির্দেশ বা আবেদনের কথা সব থানাতেই ঠিক মতো পৌঁছয়নি। ফলে এ ধরনের আবেদন জানানোর প্রাসঙ্গিকতা কী রইল, উঠছে সে প্রশ্নও।

এডিসিপি (বিধাননগর) দেবাশিসবাবুকে এ দিন ফোনে পাওয়া যায়নি। তাঁর মোবাইল সন্ধ্যা থেকে বন্ধ ছিল। তবে কমিশনারেটের গোয়েন্দাপ্রধান কঙ্করপ্রসাদ বারুইয়ের দাবি, ‘‘চেষ্টা বিফলে গিয়েছে তা নয়। মানুষের কাছে আবেদন করেছিলাম। আগামী দিনেও শব্দবাজির দৌরাত্ম্য ঠেকাতে নাগরিকদের সচেতন করার কাজ চালাবে পুলিশ।’’

বাসিন্দাদের সংগঠন ‘বিধাননগর ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক কুমারশঙ্কর সাধু মঙ্গলবার বলেন, ‘‘শব্দবাজি সংক্রান্ত পুলিশের অন্য সব বিধি নিশ্চয়ই মানা হবে। আমরা পুজো কমিটি বা ব্লক কমিটি— দু’তরফেই নাগরিকদের কাছে আবেদন করেছি। তবে ছাদ বা আবাসনের গেটের চাবি দিতে হবে— এই আবেদন বাস্তবোচিত নয়।’’

এমনকী, থানায় চাবি জমা দিলে সেই চাবি পরে ফেরত পাওয়া নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন বহু বাসিন্দা। তাঁদের প্রশ্ন, এত চাবি জমা নিয়ে তা যত্ন করে রেখে দেওয়ার মতো পরিকাঠামো পুলিশের আছে তো?

পাশাপাশি, বহু আবাসন-কর্তৃপক্ষের দাবি, পুলিশের এই আবেদনের কথা তাঁরা জানতেন না। ইই ব্লকের কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ মাইতির দাবি, ‘‘আবেদনের কথা কাগজে পড়ে জেনেছি।’’ লাবণি আবাসনের কর্মকর্তা অশেষ মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘পুলিশের এমন আবেদনের কথা জানা নেই। তবে শব্দবাজি সংক্রান্ত আইন মানতে পুলিশের আবেদনকে অবশ্যই গুরুত্ব দেওয়া হবে।’’ কোনও কোনও আবাসনের তরফে বলা হয়, শব্দবাজির দৌরাত্ম্য ঠেকাতে পুলিশ এলাকায় বাজির প্রবেশ ঠেকাক। সকলে তো শব্দবিধি ভাঙবে না। কিন্তু সব আবাসনের চাবি নিয়ে পুলিশ কেন সকলকে সন্দেহের নজরে রাখবে?

উল্লেখ্য, বিধাননগর কমিশনারেটের অন্তর্ভুক্ত হওয়া সল্টলেক ও রাজারহাট-গোপালপুর, দু’জায়গাতেই কালীপুজোর রাতে বাজি ধরতে গিয়ে পুলিশের নিগৃহীত হওয়ার ইতিহাস রয়েছে।

ঘটনা যা-ই হোক, গোয়েন্দাপ্রধানের দাবি, শব্দবাজির দাপট ঠেকাতে পুলিশ তৎপর থাকবে। সে জন্য কমিশনারেটের সব থানায় যা বাহিনী রয়েছে, তার বাইরেও আলাদা করে ৪০০ পুলিশ টহল দেবে। থাকবে সাদা পোশাকের পুলিশও। অতিরিক্ত একটি বাহিনীও নজরদারির জন্য টহল দেবে। তিনি বলেন, ‘‘৯০ ধরনের নিষিদ্ধ শব্দবাজি সম্বন্ধে নাগরিকদের সচেতন করা হয়েছে। ফলে ওই ধরনের বাজি-সহ যিনিই ধরা পড়বেন, তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউ বাধা দিলে তাঁর বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগে মামলা দায়ের করবে পুলিশ।’’

বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্ত এ দিন নাগরিকদের কাছে অনুরোধ করে বলেন, ‘‘শব্দবিধিতে যা যা আছে, তা যেন আমরা মেনে চলি।’’

Salt Lake Police criticized Surveillance banned crackers
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy