পিঠটা পুরো কমলা। পেট সাদা। মোটা লেজ। একটু ভিতু স্বভাবেরই। রাতে এসি ছাড়া ঘুম হয় না তার! গোটা বাড়ি দাপিয়ে বেড়াত। তবে সে একটু চুপচাপ এবং ‘মুডি’ও। বেশি লোক পছন্দ করত না! কিন্তু প্রায় ৫০ দিন কেটে গিয়েছে, সে বাড়িছাড়া। কোথায় গেল মিতিন? বুঝতেই পারছেন না সল্টলেকের বাসিন্দা দীপক রায়চৌধুরী। তাঁর অনুরোধ, কোনও ‘মিতিন মাসি’ যদি, তাঁর বছর আড়াইয়ের মিতিনকে খুঁজে দিতে পারেন, তবে পাঁচ হাজার টাকা পুরস্কারও দেবেন!
২০২১ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর নাগাদ দীপকের পুত্র একটি বিড়ালছানা বাড়ি নিয়ে এসেছিলেন। তাকে পেয়ে খুব খুশি হন দীপক এবং তাঁর স্ত্রীও। তাঁদের সংসারে রয়েছে আরও একটি বিড়াল। নাম মুকুট। তার নামেরই সঙ্গে মিলিয়ে নতুন পোষ্যের নাম রাখে মিতিন। দিনে দিনে বাড়ির সকলের প্রিয় হয়ে ওঠে। মুকুট আর মিতিনের দুরন্তপনা দেখেই দিন কাটত রায়চৌধুরী পরিবারের। কিন্তু লোকের সামনে ভয়ে মিতিন সিঁটিয়ে থাকত। কী ভাবে বাড়ি থেকে হারিয়ে গেল বুঝতে পারছেন না দীপক। তাঁর কথায়, ‘‘মুকুট এক বার হারিয়ে গিয়েছিল। তাকে খুঁজতে গিয়েই আমার ছেলে মিতিনকে খুঁজে পায়। বাড়ি নিয়ে আসে।’’

হারিয়ে যাওয়া বিড়াল ‘মিতিন’। —নিজস্ব চিত্র।
গত ১ মার্চ সকালে কেএমডিএ-তে কর্মরত দীপক আচমকাই লক্ষ করেন, বাড়িতে মুকুট থাকলেও মিতিন নেই! শুরু হয় খোঁজ। আশপাশের বিভিন্ন জায়গায় আতিপাতি করে খুঁজেও সন্ধান পাওয়া যায়নি। অতীতেও বার কয়েক এমন ভাবেই হারিয়ে গিয়েছিল সে। কিন্তু দু’-তিন দিনের বেশি বাড়ি ছেড়ে থাকতে পারেনি। ফিরে এসেছে। তবে এ বার প্রায় ৫০ দিন কেটে গেলেও এখনও কোথাও মিতিনের খোঁজ নেই।
আরও পড়ুন:
মিতিনের উপর মায়া পড়ে গিয়েছে রায়চৌধুরী পরিবারের। তাকে ছাড়া মনমরা সকলে। মিতিনের খোঁজে সল্টলেকের বিভিন্ন জায়গায় পোস্টার দিয়েছেন দীপক। টাঙিয়েছেন হোর্ডিংও। বিভিন্ন বাড়ির রক্ষীদের কাছে লিফ্লেটও দিয়েছেন। তাতে লেখা, ‘আমায় দেখেছেন?’ মিতিনের নানা অঙ্গভঙ্গি-সহ চারটে ছবিও দেওয়া হয়েছে পোস্টারে। সেই সঙ্গে তার শারীরিক বর্ণনা। পাঁচ হাজার টাকা পুরস্কারমূল্যের কথাও জানিয়েছেন দীপক। দিয়েছেন নিজের ফোন নম্বরও।

‘মিতিন’-এর খোঁজে পোস্টার দিয়েছেন দীপক রায়চৌধুরী। —নিজস্ব চিত্র।
দীপকের কথায়, ‘‘বিভিন্ন জায়গায় পোস্টার দিয়েছি। অনেকেই আমায় ফোন করছেন, বিড়ালের ছবি পাঠাচ্ছেন। কিন্তু কোনওটাই মিতিনের নয়।’’ তাঁর অনুমান, বাড়ির উপর থেকে কোনও ভাবে নীচে পড়ে যায় মিতিন। তার পর ভয় পেয়েই চলে যায়। আগেও হয়েছে এমন। তবে প্রতি বারই ফিরে এসেছে। কিন্তু এ বার এখনও তার খোঁজ পাওয়া গেল না! তবে কি ‘অভিমান’ করে ঘর ছেড়েছে মিতিন? দীপকের কথায়, ‘‘বিড়ালের স্বভাব এমন, যদি সে নিজে থেকে না চায় তবে তাকে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। কিন্তু মিতিন এমনিতেই খুব একটা বাড়ির বাইরে যেতে চাইত না। আমার মনে হয় কেউ ওকে গাড়ি করে নিয়ে গিয়েছে।’’ দীপকের মতে, যিনি নিয়ে গিয়েছেন, তাঁর হয়তো মিতিনকে খুব পছন্দ হয়ে গিয়েছে। তাই তাকে ছাড়তে চাইছেন না। তবে দীপকের আর্জি, ‘‘দয়া করে মিতিনকে ফিরিয়ে দিন!’’