Advertisement
E-Paper

রোগীর রক্তের নমুনা যাচ্ছে কোথায়, রহস্য মেডিক্যালে

রাজ্যের এই প্রথম সারির মেডিক্যাল কলেজের ‘ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট’ (সিসিইউ)-এ ভর্তি রোগীদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে টিউবে ভরে হাসপাতালের সেন্ট্রাল ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার জন্য পাঠানোর কথা। সিসিইউ-র ইনচার্জের অভিযোগ, তাঁরা রক্তের নমুনা পাঠাচ্ছেন।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৭ ০৭:১০
—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

রক্ত উধাও রহস্য! জটায়ুর রহস্য-রোমাঞ্চ সিরিজও যার কাছে ফিকে হয়ে যাবে!

সেই রহস্যের সমাধানে এখন কার্যত গোয়েন্দার ভূমিকা নিতে হয়েছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কর্তাদের।

রাজ্যের এই প্রথম সারির মেডিক্যাল কলেজের ‘ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট’ (সিসিইউ)-এ ভর্তি রোগীদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে টিউবে ভরে হাসপাতালের সেন্ট্রাল ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার জন্য পাঠানোর কথা। সিসিইউ-র ইনচার্জের অভিযোগ, তাঁরা রক্তের নমুনা পাঠাচ্ছেন। অথচ দিনের পর দিন সেন্ট্রাল ল্যাবের চিকিৎসক ও টেকনিশিয়ানেরা বলে পাঠাচ্ছেন, তাঁরা নাকি শূন্য টিউব পাচ্ছেন। তাতে রক্তের চিহ্নই নেই!

মাসখানেক এমন চলার পরে গত বুধবার সিসিইউ ইনচার্জ অরুণাভ চৌধুরী অভিযোগপত্র লিখে পাঠান অধ্যক্ষ তপন লাহিড়ীর কাছে। অধ্যক্ষ জবাবদিহি চান সেন্ট্রাল ল্যাবরেটরির কাছে। সেন্ট্রাল ল্যাবরেটরির কর্তারা পত্রপাঠ সিসিইউ থেকে সদ্য তাঁদের কাছে আসা রক্তের নমুনা সংগ্রহের ছ’টি টিউব অধ্যক্ষের কাছে পাঠিয়ে দেন। টিউবগুলিতে রোগীদের নাম, বেড নম্বর সব লেখা আছে। কী পরীক্ষা হবে, তার রিক্যুইজিশন স্লিপও আছে। কিন্তু টিউবে রক্তের চিহ্নমাত্র নেই!

সেন্ট্রাল ল্যাবরেটরির ইনচার্জ দেবেশ রায় পাল্টা চিঠিতে অধ্যক্ষকে জানান, অধিকাংশ দিন তাঁরা সিসিইউ থেকে রোগীর নাম এবং বেড নম্বর লেখা শূন্য রক্তের টিউব পাচ্ছেন। তা হলে পরীক্ষাটা করবেন কী করে? তাঁরা দাবি করেন, নিজেরা কিছু গণ্ডগোল করে সিসিইউ এখন সেন্ট্রাল ল্যাবরেটরির ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে।

এখন কথা হল, গুরুতর অসুস্থ রোগীদের শরীর থেকে পরীক্ষার জন্য টানা রক্ত যাচ্ছে কোথায়? ওইটুকু রক্ত বিক্রিও হবে না। তা হলে?

রহস্য ঘনীভূত হতে গত বৃহস্পতিবার সিসিইউ এবং সেন্ট্রাল ল্যাবরেটরির ইনচার্জদের নিয়ে আলোচনায় বসেন মেডিক্যালের অস্থায়ী সুপার প্লাবন মুখোপাধ্যায়। কিন্তু সমাধানসূত্র মেলেনি। দু’পক্ষকেই সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং আলাদা করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছেন মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ।

কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, রক্ত যদি টানা হয়ে থাকে, তা হলে সরকারি হাসপাতালের ভিতর থেকে তা যাবে কোথায়? অরুণাভবাবুর উত্তর, ‘‘আমাকে জিজ্ঞাসা করবেন না। আমি বলতে গেলে বিপদে পড়ে যাব। কর্তৃপক্ষকে সব জানিয়েছি।’’ সেন্ট্রাল ল্যাবরেটরির ইনচার্জ দেবেশ রায়ের বক্তব্য, ‘‘যা জানানোর কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’’ দায়িত্বপ্রাপ্ত সুপার প্লাবনবাবুর কথায়, ‘‘সব মিটে গিয়েছে। এ সবের ভিতরে আপনাদের ঢোকার দরকার নেই।’’

কিন্তু হাসপাতাল সূত্রের খবর, অনেক জট পাকিয়ে রয়েছে। রক্তের নমুনা ‘আছে এবং নেই’ এর চাপান-উতোরে সিসিইউ-র যে রোগীদের রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট দ্রুত বার করে চিকিৎসা শুরুর কথা, তাতে দেরি হচ্ছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই দেরির জন্য রোগীর পরিবারকে হাসপাতালেরই পিপিপি মডেলে চলা কেন্দ্র বা বাইরের কোনও ল্যাব থেকে পরীক্ষা করিয়ে আনতে বলা হচ্ছে। স্বাস্থ্য ভবনের এক কর্তার কথায়, ‘‘ঘটনায় অন্তর্ঘাতের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।’’

হাসপাতাল সূত্রের খবর, সিসিইউ-র অনেক অনিয়ম এবং চিকিৎসকদের যোগ্যতামান নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি শুরু হতেই কিছু চমকপ্রদ তথ্য এসেছে তদন্তকারীদের হাতে। স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্যকে সে সব জানানো হবে।

Calcutta Medical College Blood Blood Sample
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy