Advertisement
০৪ মে ২০২৪

বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজে আগুনে নষ্ট দুষ্প্রাপ্য প্রাণীর সংরক্ষণ

প্রয়োজন ছিল আলাদা বড় একটা ঘরের। যেখানে পুরনো দুষ্প্রাপ্য প্রাণীদের (ভিতরে খড় দিয়ে ভরা, বাইরে আসল চামড়া, আঁশ ও লোম-সহ) সংরক্ষণ করা যাবে। জায়গার অভাবে বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজের দোতলার বারান্দায় কাঠের ফ্রেম দিয়ে কাচের শো-কেসে রাখা ছিল স্টাফ করা প্যাঙ্গোলিন, মারমাসেট। কাচের পাত্রে ফর্মালিনে ডোবানো ছিল ডলফিন, ভালুক, সিংহের ভ্রুণ। সোমবার বিকেলের আগুনে তাদের বেশিরভাগই পুড়ে ছাই। অনেকের পুড়ে যাওয়া কালচে কঙ্কালটা শুধু দেখা যাচ্ছে।

আগুনে নষ্ট দুষ্প্রাপ্য প্রাণীর সংরক্ষণ। —নিজস্ব চিত্র।

আগুনে নষ্ট দুষ্প্রাপ্য প্রাণীর সংরক্ষণ। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৬ ১৯:০৩
Share: Save:

প্রয়োজন ছিল আলাদা বড় একটা ঘরের। যেখানে পুরনো দুষ্প্রাপ্য প্রাণীদের (ভিতরে খড় দিয়ে ভরা, বাইরে আসল চামড়া, আঁশ ও লোম-সহ) সংরক্ষণ করা যাবে। জায়গার অভাবে বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজের দোতলার বারান্দায় কাঠের ফ্রেম দিয়ে কাচের শো-কেসে রাখা ছিল স্টাফ করা প্যাঙ্গোলিন, মারমাসেট। কাচের পাত্রে ফর্মালিনে ডোবানো ছিল ডলফিন, ভালুক, সিংহের ভ্রুণ। সোমবার বিকেলের আগুনে তাদের বেশিরভাগই পুড়ে ছাই। অনেকের পুড়ে যাওয়া কালচে কঙ্কালটা শুধু দেখা যাচ্ছে।

এ সব তো আছেই, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের প্রধান পার্থিব বসুর উদ্বেগের কারণ অবশ্য সংরক্ষিত বিভিন্ন প্রাণীর কোষগুলি নষ্ট হয়ে যাওয়াটা। ওই কোষের মধ্যেই রয়েছে লুপ্ত হওয়া প্রাণীগুলির ডিএনএ। আগুন সেই সব নমুনাকে ছোঁয়নি বটে, কিন্তু বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় নষ্ট হয়ে গিয়েছে সেই সব ‘অমূল্য’ সামগ্রী। পার্থিববাবু বলেন, ‘‘ওই সব কোষের নমুনা সংরক্ষণ করা হয় মাইনাস ৮০ ডিগ্রি সেন্ডিগ্রেড তাপমাত্রায়। যার জন্য সারা বছর, সকাল থেকে রাত ২৪ ঘণ্টা বিশেষ রেফ্রিজারেটর চালু থাকে। সোমবার আগুন লাগার পর থেকেই বিদ্যুৎ নেই। মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত তা ফিরে আসেনি।’’

আরও পড়ুন

হঠাৎ আগুন বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজে

পার্থিববাবুর আশঙ্কা, ‘‘সঠিক তাপমাত্রা না থাকায় সেই নমুনাগুলো খারাপ হয়ে যেতে পারে। মঙ্গলবার দুপুর থেকে কিছু নমুনা আমরা সরিয়ে বিভাগের অন্য রেফ্রিজারেটরে স্থানান্তরিত করতে পেরেছি। কিন্তু, ইতিমধ্যেই সেগুলি নষ্ট হয়েছে কি না তা আমরা জানি না।’’

অধ্যাপক এনা রায় বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ওই করিডরে রাখা তিনটি রেড পান্ডার দেহ পুরোপুরি পুড়ে গিয়েছে। সেগুলির বয়স ১০০ বছরের বেশি। পুড়ে গিয়েছে অ্যান্টার্কটিকার লেপার্ড সিল-এর মুখ। এ ছাড়াও দক্ষিণ এশিয়ার নদীর ডলফিন, দক্ষিণ আমেরিকার স্পাইডার মাঙ্কির মূর্তি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। পার্থিববাবুর কথায়, ‘‘কারও দান, উপহার থেকেই এই সংগ্রহশালা গড়ে উঠেছিল।’’

করিডরের পাশে একটি বড় ঘরে আরও একটি সংগ্রহশালা রয়েছে। আগুনে সেই সংগ্রহশালার প্রধান দরজা পুড়ে গেলেও ঘরের ভিতরে আগুন ঢুকতে পারেনি বলে জানা গিয়েছে। এনাদেবীর অভিযোগ, ‘‘করিডরে যে সব স্টাফ করা প্রাণী রাখা ছিল, সেগুলো তো ওখানে রাখার কথাই নয়। বহুদিন ধরে বলা হয়েছে আলাদা ঘর দিতে। তা পাওয়া যায়নি।’’ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুগত মারজিৎ এ দিন বলেন, ‘‘যত দ্রুত সম্ভব নতুন করে সংগ্রহশালা তৈরি করে ফেলতে হবে।’’

জানা গিয়েছে, ২০১৪ সালে এই মার্চেই এক বার আগুন লেগেছিল সায়েন্স কলেজের অ্যানিলেম হাউসে। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য রাখা ছিল বিভিন্ন ধরণের প্রায় ৫০০ জ্যান্ত ইঁদুর। সেই আগুনে ইঁদুরগুলো পুড়ে মারা যায়।

এ বার নষ্ট হয়ে গেল তার থেকেও বেশি মূল্যবান সামগ্রী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ballygunge Science College fire
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE