Advertisement
E-Paper

Mobile Number: ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয় কয়েক হাজার নামের গোপন তথ্য!

এক ছাত্রের থেকে একটি ওয়েবসাইটের খোঁজ পান ওই শিক্ষক। যেখানে খোঁজ করলেই মেলে ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০২২ ০৮:১১
সেই ওয়েবসাইট খুলে অবাক শিক্ষক।

সেই ওয়েবসাইট খুলে অবাক শিক্ষক। ফাইল ছবি

পশ্চিমবঙ্গের এক বিশিষ্ট ব্যক্তির মোবাইল নম্বরের প্রয়োজন ছিল কলকাতার এক কলেজের শিক্ষকের। অনেকের থেকে চেয়েও তিনি পাননি। শেষে এক ছাত্রের থেকে একটি ওয়েবসাইটের খোঁজ পান ওই শিক্ষক। যেখানে খোঁজ করলেই মেলে ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর। শর্ত একটাই। একটি নম্বরের বদলে সেখানে দিতে হবে অন্য কোনও বিশিষ্ট জনের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর!

সেই ওয়েবসাইট খুলে অবাক শিক্ষক। নেতা থেকে অভিনেতা, খেলোয়াড় থেকে প্রশাসক— সেখানে সকলের নম্বরের ছড়াছড়ি। কিন্তু সব ক’টি নম্বরেরই শেষের পাঁচটি অক্ষর ঢাকা। অবশেষে পরিচিত এক অভিনেতার নম্বর বসিয়ে কাঙ্ক্ষিত ফোন নম্বরটি পান তিনি। ওই শিক্ষকের কথায়, ‘‘এ ভাবে যে নম্বর পাওয়া যায়, ভাবাই যায় না! ওয়েবসাইটটির খোঁজ পেয়েছিলাম এক ছাত্রের থেকে। ওই বয়সি কারও কাছে ব্যক্তিগত নম্বরের ভান্ডার থাকা কতটা বিপজ্জনক, ভেবেই আঁতকে উঠছি।’’

অভিযোগ, দেশ জুড়েই ব্যক্তিগত তথ্য লেনদেনের এমন কারবার চলছে। যেখানে শুধু মোবাইল নম্বরই নয়, টাকা দিতে পারলে মিলে যায় কারও ই-মেল আইডি, আধার বা ভোটার কার্ডের নম্বর। এমনকি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বাৎসরিক কোন আয়ের কাঠামোয় পড়েন বা তাঁর কোনও বিমা করানো রয়েছে কি না এবং সেটির নমিনিই বা কে, তা-ওসহজলভ্য! ব্যক্তিগত তথ্য বিক্রির এই বাজারে নামের পাশাপাশি সই-ও বিক্রি হয় বলে অভিযোগ। একটি ডাচ সাইবার নিরাপত্তা সংস্থার দাবি, চলতি বছরের প্রথমার্ধে তথ্য চুরির অভিযোগের নিরিখে ভারত দ্বিতীয় স্থানে। এমনকি, ২৮ কোটি লোকের এমপ্লয়ি প্রভিডেন্ট ফান্ডের তথ্যও খোলা বাজারে চলে এসেছে বলে অভিযোগ। পুলিশের মতে, এই সব তথ্য দিয়েই চলতে থাকে প্রতারণা। কল সেন্টারের নামে খোলে প্রতারণা চক্র।

সম্প্রতি হরিয়ানা পুলিশ এমনই একটি কল সেন্টারের দুই মাথাকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে।তাদের দাবি, ওই ভুয়ো কল সেন্টারের হাতে মাত্র ১৫০০০ টাকার বিনিময়ে কয়েক হাজার লোকের ব্যক্তিগত তথ্য তুলে দিয়েছিল এমন এক ‘তথ্য প্রদানকারী সংস্থা’, যার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর বলিউডের বরিষ্ঠ এক অভিনেতা। ওই সংস্থার সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে বিমার খোঁজ করা ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি হয়েছিল। সেই নাম, ফোন নম্বর, ই-মেল ধরে ফোন করে বিমা নবীকরণের নামে প্রতারণার ফাঁদ পাতা হয়েছিল।

সাইবার গবেষকেরা জানাচ্ছেন, এই ধরনের তথ্য প্রদানকারী সংস্থা কাজ করে সার্চ ইঞ্জিন হিসাবে। ধরা যাক, কেউ ইন্টারনেটে ভাল চশমার দোকান খুঁজছেন। ইন্টারনেট যে তালিকা দেবে, তাতে বড় কিছু সংস্থার নাম থাকবে। স্থানীয় দোকানের নাম থাকে না। কিন্তু এই ধরনের তথ্য প্রদানকারী সংস্থার ওয়েবসাইটে মেলে স্থানীয় দোকানের হদিস। এক সাইবার গবেষকের কথায়, ‘‘প্রাথমিক ভাবে এমনই দোকানের সঙ্গে যোগাযোগ করে এই ধরনের সংস্থা। বলা হয়, সদস্যপদ নিলে চশমার দোকান খুঁজতে কেউ তাদের সাইটে সার্চ করলে আগে সদস্য থাকা দোকানের নাম দেখানো হয়। এই ভাবে দিনে কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ জন ক্রেতা পাঠানোর চুক্তি হয়।’’

ওই গবেষক আরও জানাচ্ছেন, এর আরও একটি দিক রয়েছে।কেউ চশমার দোকান সার্চ করতে গিয়ে নির্দিষ্ট দোকান পছন্দ করে তাদের ফোন নম্বর চাইলে, সেই ক্রেতাকে নিজের নাম, ফোন নম্বর এবং মেল আইডি-সহ একাধিক তথ্য ফর্মে পূরণ করতে বলা হয়। এই সব তথ্যনির্ভর ফর্ম-ই বিক্রি হয় টাকার বিনিময়ে। সাইবার গবেষক তথা ‘ইন্ডিয়ান স্কুল অব অ্যান্টি হ্যাকিং’-এর অধিকর্তা সন্দীপ সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘শুধু পুলিশি কড়াকড়িতে হবে না। চাই ডেটা প্রোটেকশন বিল।’’

এই বিলের খসড়া অবশ্য ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে পেশ করা হয়েছিল লোকসভায়। দীর্ঘ আলোচনার পরে সেই বিল তুলে নেওয়া হয়েছে গত বুধবার। সরকার জানিয়েছে, বিলের খসড়ায় ৮১টি সংশোধনীর এবং গুরুত্বপূর্ণ ১২টি বিষয় যুক্ত করার পরামর্শ এসেছে। সেগুলির পরে নতুন করে বিল পেশ হবে।

Mobile Number
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy