গত মাসের শেষের দিকে এসএসকেএম হাসপাতালের ম্যাকেঞ্জি ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছিলেন চেতলার বাসিন্দা শঙ্কর সাউ। পরের দিন তাঁর মৃত্যু হয়। রোগী মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরে ওয়ার্ডে চড়াও হন রোগীর পরিজনেরা। মারধর করা হয় হাসপাতালের নার্স এবং চিকিৎসকদের।
গত সপ্তাহে পথ দুর্ঘটনায় আহত এক অটোচালকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ ওঠে এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে। ওই সময়ে ইমার্জেন্সি ডিউটিতে থাকা এক জুনিয়র ডাক্তারকে উত্তেজিত অটোচালকেরা মারধর করেন বলে অভিযোগ। পরে চিকিৎসকেরাও তাঁদের মারধর করেছেন বলে অভিযোগ করেন রোগীর পরিবারের সদস্যেরা।
পুলিশ সূত্রের খবর, উপরের দু’টি ঘটনাতেই জড়িত রাজ্যের একমাত্র সরকারি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল এসএসকেএমের নাম। শুধু এই দু’টি ঘটনাই নয়, চলতি বছরে প্রায় এক ডজনের মতো চিকিৎসকে মারধর বা হাসপাতালে অশান্তির ঘটনা ঘটেছে রাজ্যের ওই সরকারি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে। নিজেদের নিরাপত্তার দাবিতে কর্মবিরতির ডাকও দেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা।
লালবাজার সূত্রের খবর, একের পর এক ঘটনায় উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। হাসপাতালের মধ্যে থাকা চিকিৎসক এবং কর্মীদের যাতে আর কোনও ভাবেই হেনস্থার শিকার না হতে হয়, তার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ঢেলে সাজা হচ্ছে এসএসকেএমের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশকর্মীর সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি ওই হাসপাতালের পুরো এলাকাই আনা হচ্ছে সিসিটিভি-র নজরদারির আওতায়। তাতে নজর রাখবেন পুলিশকর্মীরাই।
পুলিশ জানিয়েছে, এতদিন এক জন ইনস্পেক্টরের অধীনে জনা তিরিশ পুলিশকর্মী দেখভাল করতেন ওই হাসপাতালের নিরাপত্তা। এ বার সেখানে নজরদারি দ্বিগুণ করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, জরুরি বিভাগ থেকে শুরু করে প্রতিটি ওয়ার্ডের বাইরে ২৪ ঘণ্টার জন্য রাখা হচ্ছে পুলিশকর্মীদের। যাতে অবাঞ্ছিত কোনও ধরনের ঘটনার শুরুতেই অবস্থা সামাল দেওয়া যায়। এ ছাড়াও তাঁরা হাসপাতালের দালালদের উপরে নজর রাখবেন। ইতিমধ্যেই হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান অরূপ বিশ্বাসের নির্দেশে দালাল ধরার অভিযান শুরু করেছে পুলিশ। যাতে সোমবার পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে মোট ৮ জনকে।
পুলিশ জানিয়েছে, এত দিন শুধু মাত্র হাসপাতালগুলির আউটপোস্টেই পুলিশকর্মীদের রাখা হত। হাসপতালের ভিতরে সরকারি কর্মীদের মারধর বা কোনও ধরনের অশান্তি হলে তা সামাল দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য লালবাজার থেকে পাঠানো হত অতিরিক্ত বাহিনী। অভিযোগ, যা পাঠানো অনেকটাই সময় সাপেক্ষ ব্যপার। ফলে ওই অতিরিক্ত বাহিনী পৌঁছনোর আগেই হাসপাতালের মুষ্টিমেয় পুলিশকর্মীদের অসহায় অবস্থার মধ্যে কাটাতে হত। কলকাতা পুলিশের কর্তারা জানিয়েছেন, এ বার থেকে ওই হাসপাতালের পাশে জরুরি বিভাগের কাছে ৪০ জনের একটি ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ রাখা হবে। তারা লাঠি এবং ঢাল হাতে থাকবে। হাসপাতালের ভিতরে কোনও ঘটনা ঘটলে সেখানে দ্রুত পৌঁছে যাবে ওই বাহিনী। পুলিশ সূত্রে খবর, ওই বাহিনী ছাড়াও হাসপাতালে তিনটি পুলিশের কিয়স্ক তৈরি করা হচ্ছে। লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘জরুরি বিভাগ ও হাসপাতালের দুই আউট গেটের কাছে ওই কিয়স্কে সব সময়ে একাধিক পুলিশকর্মী মজুত থাকবেন রোগীর পরিজনদের সহায়তার জন্য।’’
এখন প্রায় ১০০টির মতো সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। যাতে নজর রাখেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই। লালবাজার জানিয়েছে, এ বার সেই ব্যবস্থাতেও বদল আসতে চলেছে। সেই সঙ্গে হাসপাতাল চত্বরে বসানো হচ্ছে আরও ৬০টি সিসিটিভি। সব ক্যামেরা ২৪ ঘণ্টা নজরদারি চালানোর জন্য একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষও তৈরি করা হচ্ছে। এ বার থেকে যাতে সবর্ক্ষণ নজরদারি করবেন পুলিশকর্মীরাই। যা এতদিন করতেন হাসপাতালের কর্মীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy