Advertisement
E-Paper

স্ত্রীকে কটূক্তি, প্রতিবাদী সার্জেন্টকে দমদম রোডে পেটাল আধা পুলিশ

কর্তব্যরত অবস্থায় পুলিশের নিগৃহীত হওয়ার ঘটনা ইদানীং প্রায়ই ঘটছে। এ বার স্ত্রীর শ্লীলতাহানির প্রতিবাদ করতে গিয়েও মার খেলেন ট্র্যাফিক পুলিশের এক সার্জেন্ট।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:১৫
নিগৃহীত সার্জেন্ট

নিগৃহীত সার্জেন্ট

কর্তব্যরত অবস্থায় পুলিশের নিগৃহীত হওয়ার ঘটনা ইদানীং প্রায়ই ঘটছে। এ বার স্ত্রীর শ্লীলতাহানির প্রতিবাদ করতে গিয়েও মার খেলেন ট্র্যাফিক পুলিশের এক সার্জেন্ট।

মত্ত অবস্থায় দুই যুবক তাঁর স্ত্রীকে অশ্লীল ইঙ্গিত ও কটূক্তি করলে রুখে দাঁড়ানোয় ট্র্যাফিক পুলিশের এক সার্জেন্টকে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠল। শুক্রবার মধ্য রাতে দমদম রোডে চিড়িয়া মোড়ের কাছে ওই ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত রাজু লোধ। তাঁকে আধা পুলিশ বলা যেতে পারে। কারণ, তিনি দমদমে রেল পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ করছিলেন।

প্রহৃত সার্জেন্ট, কলকাতা পুলিশের ইস্ট ট্র্যাফিক গার্ডে কর্মরত, বছর বিয়াল্লিশের ওই ব্যক্তির ডান চোখে গুরুতর আঘাত লেগেছে। এতটাই যে, চোখের সাদা অংশ লাল হয়ে গিয়ে অনেকটা ঠেলে বেরিয়ে এসেছে। আঘাত লেগেছে তাঁর বাঁ কানেও। ঘটনার সময়ে কিন্তু তাঁর পরনে ছিল পুলিশের নীল জ্যাকেট, মাথায় পুলিশের সাদা হেলমেট ও সঙ্গে পুলিশের লাল মোটরবাইক। স্ত্রীর সঙ্গে অভব্যতা হচ্ছে দেখে তিনি নিজেকে পুলিশ বলে পরিচয় দিলে অভিযুক্ত রাজু লোধও পাল্টা গলা চড়িয়ে বলে, ‘আমিও পুলিশ!’

চিৎপুর থানায় দায়ের করা লি‌খিত অভিযোগে ওই সার্জেন্ট জানিয়েছেন, তাঁকে চেপে ধরে মুখে এলোপাথাড়ি কিল-ঘুষি মারতে থাকে অভিযুক্তেরা।

ধৃত রাজু লোধ

এই ঘটনা কলকাতা পুলিশের বহু অফিসার ও কর্মীকে বাপি সেনের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। ২০০২-এর ৩১ ডিসেম্বর রাতে ওয়েলিংটনে এক তরুণীর শ্লীলতাহানির প্রতিবাদ করে প্রাণ দিয়েছিলেন ট্র্যাফিক সার্জেন্ট বাপি সেন। ওই ঘটনায় কলকাতা পুলিশেরই পাঁচ কনস্টেবলের বিরুদ্ধে বাপিকে বেধড়ক মারধর করার অভিযোগ উঠেছিল। পরে হাসপাতালে মারা যান বাপি।

শুক্রবারের ঘটনায় জখম সার্জেন্টের স্ত্রী বলেন, ‘‘ভাবতেই পারছি না, পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত এক জন যুবক এক সার্জেন্টের স্ত্রীর সঙ্গে অভব্যতা করলেন, আর প্রতিবাদ করলে তিনি ও তাঁর সঙ্গী মিলে বেধড়ক মারধর করলেন সার্জেন্টকেই!’’

শুক্রবার রাত ১২টা নাগাদ স্ত্রীকে নিয়ে মোটরসাইকেলে দমদমে নিজের বাড়িতে ফিরছিলেন ওই সার্জেন্ট। তাঁর অভিযোগ, চিড়িয়ামোড়ের কাছে একটি সিগন্যালে ওই মোটরবাইকটি দাঁড়ালে, পাশ থেকে অন্য একটি মোটরসাইকেল চড়ে আসা দুই যুবক তাঁর স্ত্রীর উদ্দেশে অশ্লীল ইঙ্গিত করেন। প্রতিবাদ করেন তিনি। এর মধ্যে সিগন্যাল সবুজ হতেই দুই যুবক দমদম রোডে কাশীপুর থানার উল্টো দিকে পান-সিগারেটের দোকানে নামেন। ওই অফিসারও মোটরবাইক থেকে নেমে দোকানে গিয়ে ফের প্রতিবাদ করেন। ওই দু’জনকে তিনি নিজের পরিচয় দিয়ে সতর্ক করেন। তাতে কাজ তো হয়ইনি, উল্টে কটূক্তি ও অশ্লীল শব্দ প্রয়োগের মাত্রা বাড়ে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বাদানুবাদ যখন চলছে, সেই সময়ে ওই সার্জেন্ট রাজুকে এক চড় মারেন। তার পরেই ওই দু’জন সার্জেন্টের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ইতিমধ্যে উল্টো দিকে কাশীপুর থানায় ছুটে গিয়ে পুলিশ ডেকে আনেন সার্জেন্টের স্ত্রী। ঘটনাস্থল থেকেই রাজু লোধকে পুলিশ গ্রেফতার করে। তাঁর সঙ্গী মোটরবাইকে করে পালিয়ে যান। রাজুর বিরুদ্ধে মারধর, শ্লীলতাহানির অভিযোগ-সহ ছ’টি ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।

সার্জেন্টের স্ত্রীর কথায়, ‘‘পুলিশের এই অবস্থা হলে সাধারণ মানুষের কী হবে!’’ শিয়ালদহ আদালতের বিচারক বাণীব্রত দত্ত শনিবার রাজু লোধের জামিনের আবেদন খারিজ করে দেওয়ার সময়ে বলেন, ‘‘পুলিশের স্ত্রী হোক বা আমার স্ত্রী— শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠলেই তাকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজুকে পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।

রাজু রেল পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ করেন। নিজের পাড়ায় তিনি ‘ভাল ছেলে’ বলেই পরিচিত। প্রতিবেশীদের বক্তব্য, রাজু মদ খেয়েই এমন আচরণ করে ফেলেছেন। রাজুর মা শেফালিদেবী বলেন, ‘‘ছেলে অন্যায় করেছে, শাস্তি তো পেতে হবে। তবে ও কেন এমন আচরণ করল, সেটা ভাল ভাবে দেখেই যেন ওর বিচার হয়।’’

sergeant beaten up
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy