E-Paper

‘ব্যাগ ফুটো করে ঢুকে গেল লোহার রড! বেঁচে আছি, ভাবতেই পারছি না’

ওয়াটগঞ্জের পাথরগলি এলাকায় ঘটনাস্থলের কাছেই দু’টি আলাদা বাড়ি জাকির এবং ফারহানদের। প্রতিদিন একসঙ্গে জিম করতে যেতেন তাঁরা। শুক্রবারও তাঁরা ফারহানের বাবার মোটরবাইক নিয়ে বেরিয়েছিলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩ ০৬:৫৮
An image of the incident

সঙ্কীর্ণ: নির্মীয়মাণ এই বাড়ি থেকেই রড পড়ে ফুঁড়ে দেয় জাকিরের মাথা। শনিবার, ওয়াটগঞ্জে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

পুরনো চারতলা বাড়ির উপরে বেআইনি ভাবে তৈরি হচ্ছিল আরও একটি তল। সেই কাজ চলাকালীনই নির্মীয়মাণ বাড়ি থেকে লোহার রড পড়ে মাথায় গেঁথে মৃত্যু হয় বছর একুশের এক তরুণের। শুক্রবার সন্ধ্যায় ওয়াটগঞ্জের এই ঘটনায় পুলিশ গ্রেফতার করেছে ওই নির্মাণ ব্যবসায়ীকে। শনিবার জানা গিয়েছে, নির্মীয়মাণ বাড়ির নীচ দিয়ে মোটরবাইকে যাওয়া ওই যুবক একা ছিলেন না। বাইকে তাঁর পিছনের আসনেই ছিলেন আরও এক জন। বছর উনিশের ওই তরুণের পিঠের ব্যাগ ফুটো করে লোহার রড ঢুকে যায়। কিন্তু গায়ে লাগেনি।বরাতজোরে বেঁচে যাওয়া ওই তরুণের নাম ফারহান আহমেদ। মৃত যুবক জাকির আলির বন্ধু তিনি।

ওয়াটগঞ্জের পাথরগলি এলাকায় ঘটনাস্থলের কাছেই দু’টি আলাদা বাড়ি জাকির এবং ফারহানদের। প্রতিদিন একসঙ্গে জিম করতে যেতেন তাঁরা। শুক্রবারও তাঁরা ফারহানের বাবার মোটরবাইক নিয়ে বেরিয়েছিলেন। ফেরার সময়ে সেটি জাকির চালাচ্ছিলেন। বাড়ির কাছে গলিতে ঢোকার সময়ে তাঁরা দেখেন, নির্মীয়মাণ বাড়িটিতে রড তোলা হচ্ছে। বাড়ির নীচে দাঁড়ানো এক জন তাঁদের হাত দেখিয়ে কিছু ক্ষণ অপেক্ষা করতে বলেন। এর পরে রড তুলে নেওয়া হয়েছে ভেবে যেতে বলা হয় তাঁদের।

মোটরবাইক নিয়ে এগোতেই রড হুড়মুড়িয়ে উপর থেকে পড়ে। একটি রড ঢুকে যায় জাকিরের মাথা ফুটো করে। পিছনে বসা ফারহান দেখেন, ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে। ঘটনার অভিঘাতে এখনও আতঙ্কিত ফারহান। ওই তরুণ কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। ঘটনার পর থেকে বাড়ির স্বাভাবিক ছন্দে পতন ঘটেছে। সারা রাত ঘুমোতে পারেননি ফারহান। তাঁকে সকালে ঘুমের ওষুধ খাইয়েছেন মা নাহিদ পারভিন। নাহিদ বলেন, ‘‘ছেলেকে ডাকতে সাহস হচ্ছে না। মারাত্মক ভয় পেয়ে রয়েছে। শুধু বলে চলেছে, ‘রডটা এমন ভাবে আমাদের উপরে পড়েছে যে, বাঁচার কথা ছিল না। কী করে বেঁচে গেলাম, জানি না’।’’

বিকেলে বিশ্রাম নিয়ে উঠে ফারহান বললেন, ‘‘জাকির নেই, ভাবতে পারছি না। আমরা এক বাইকেই ছিলাম। আমার ব্যাগ ফুটো করে ঢুকে গেল রড! বেঁচে আছি যে, ভাবতেই পারছি না। চোখ বুজলেই জাকিরের মাথা থেকে ফিনকি দিয়ে বেরোতে থাকা রক্ত মনে পড়ছে। আমি আর জাকির মিলে ওর মাথার রডটা টেনে বারও করি। কিন্তু ধীরে ধীরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে জাকির।’’

এ দিন এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, বিশাল পুলিশি পাহারা রয়েছে। পৌঁছেছেন পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের লোকজন। তাঁদের ঘিরে ধরে বেআইনি ওই বাড়িটি ভেঙে ফেলার দাবি জানান স্থানীয়েরা। দেখা যায়, সরু গলির মধ্যে একের পর এক বাড়ি গা ঘেঁষাঘেঁষি করে উঠে গিয়েছে। অবস্থা এমন যে, দু’টি বাড়ির মাঝের সরু গলি দিয়ে পাশাপাশি দু’জন হেঁটে বেরোনোর মতো জায়গা থাকলেও দু’টি ছাদে ঠোকাঠুকি লাগার অবস্থা। একটির সঙ্গে অন্যটির তফাত প্রায় শূন্য।

এ রকমই একটি চারতলা বাড়ি দেখিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা মহম্মদ তাজউদ্দিন বললেন, ‘‘ওই বাড়ি থেকেই রড পড়েছিল।’’ দেখা গেল, বাড়ির দেওয়ালে রক্তের ছোপ লেগে এ দিনও। পাশের গলিতেই পড়ে নির্মাণের কাজে ব্যবহার হওয়া রড। পুরসভার এক কর্মী বললেন, ‘‘পুরনো বাড়ির উপরে আবার নতুন করে পাঁচতলা হচ্ছে! পুরসভা জানেই না!’’

ওই বাড়ির উল্টো দিকের একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন জাকির। তাঁর বোনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। মা মেহনাজ খাতুন কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। কান্নায় ভেঙে পড়া মেহনাজের পাশে বসা এক মহিলা বললেন, ‘‘কয়েক বছর আগে জাকিরের বাবা ও মায়ের বিবাহ-বিচ্ছেদ হয়। এর পরে পরিবারের চেষ্টায় আশরাফ আলি নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে হয় মেহনাজের। গত সপ্তাহেই ইদের দিন মৃত্যু হয় জাকিরের নিজের বাবার। মায়ের সঙ্গে বিবাহ-বিচ্ছেদ হলেও তাঁর মরদেহে মাটি দিতে গিয়েছিলেন জাকির। তার এক সপ্তাহ পরে, আজ জাকিরকে মাটি দেওয়া হবে!’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Illegal Construction Accident Watganj arrest

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy