কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট থেকে ইস্তফা দিতে চলেছেন সেখানকার সদস্য, বেশ কয়েকটি কলেজের অধ্যক্ষেরা। তাঁদের অভিযোগ, সিন্ডিকেটে যথাযথ ভাবে কলেজ সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করা সম্ভব হচ্ছে না। অন্যতম সদস্য, ক্যানিংয়ের বঙ্কিম সর্দার কলেজের অধ্যক্ষ তিলক চট্টোপাধ্যায় শুক্রবার বলেন, ‘‘সিন্ডিকেটের বৈঠকে প্রায় ৭০ থেকে ১০০টি অ্যাজেন্ডা থাকছে। অ্যাজেন্ডা অনেক সময়ে শেষ মুহূর্তে জানানো হয়। এত অ্যাজেন্ডা নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ থাকে না।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘কলেজগুলির বিষয়ে অ্যাজেন্ডার ক্ষেত্রে আলোচনার সুযোগ আরও কম থাকে। এর ফলে যে সব অধ্যক্ষ সিন্ডিকেট-সদস্য, তাঁদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে।’’
অধ্যক্ষেরা আরও জানাচ্ছেন, বেশ কিছু বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেওয়ার জন্য হাতে কোনও লিখিত তথ্যও তাঁরা পান না। বিশেষ করে, অর্থ অনুমোদনের ক্ষেত্রে এই সমস্যা হয় বেশি। এই অবস্থায় কলেজ সংক্রান্ত বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সিন্ডিকেটের ‘সিএসআর’-এর ভিত্তিতে বিজ্ঞপ্তি জারি করে দিচ্ছেন। ফলে, এমন পরিস্থিতিতে তিনি-সহ কয়েক জন অধ্যক্ষ সিন্ডিকেটের সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দিচ্ছেন বলে জানান তিলক। তিনি ছাড়া যাঁরা ইস্তফা দিচ্ছেন, তাঁরা হলেন, উইমেন্স কলেজের অনুপমা চৌধুরী, যোগেশচন্দ্র ল’ কলেজের সুনন্দা গোয়েন্কা এবং ধ্রুবচাঁদ হালদার কলেজের সত্যব্রত সাহু। সকলেই রেজিস্ট্রারের কাছে ইস্তফাপত্র পাঠাবেন বলে জানিয়েছেন।
শুক্রবার বিষয়টি নিয়ে অধ্যক্ষ পরিষদের কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার তরফে সাংবাদিক বৈঠক করা হয়। সেখানে আশুতোষ কলেজের অধ্যক্ষ এবং শাখার সম্পাদক মানস কবি বলেন, ‘‘নেতাজিনগর ডে কলেজের অধ্যক্ষা সোনালি চট্টোপাধ্যায় যশ জানিয়েছেন, তিনিও আমাদের সঙ্গে আছেন।’’ মানসের আরও বক্তব্য, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও ফিনান্স কমিটি না থাকায় সিন্ডিকেট সদস্যদের দায়িত্ব বেড়ে যায়। কিন্তু আর্থিক অ্যাজেন্ডার ক্ষেত্রে হাতে কোনও তথ্য না থাকায় সবটাই শুনে জানার ফলে ভবিষ্যতে আমাদের সমস্যার মুখে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে।’’
এর পাশাপাশি সম্প্রতি একটি নির্দেশিকা জারি করে বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, স্টেট এডেড কলেজ টিচারেরা (স্যাক্ট) স্নাতকোত্তরের পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করতে পারবেন না। এই বিষয়টি-সহ পরীক্ষা সংক্রান্ত আরও একাধিক বিষয় নিয়ে এ দিন সাংবাদিক বৈঠকে সরব হন উপস্থিত অধ্যক্ষেরা। তাঁদের বক্তব্য, বিশ্ববিদ্যালয় চলছে অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে। সবটাই উপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আলোচনা চাইছেন তাঁরা। এ নিয়ে স্যাক্টদের সংগঠন কুটাব-এর সাধারণ সম্পাদক সুচন্দ্রা চৌধুরী এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, যেখানে কলেজের উচ্চ শিক্ষা অনেকাংশেই স্যাক্ট-নির্ভর, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন সিদ্ধান্ত অসম্মানজনক। এই নির্দেশিকা প্রত্যাহার করা না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় পরীক্ষায় নজরদারি করা-সহ স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের সব পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজ তাঁরা বয়কট করবেন বলেও জানিয়েছেন সুচন্দ্রা।
অধ্যক্ষ পরিষদের কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংবাদিক বৈঠকে এ দিন স্নাতক স্তরের পরীক্ষা সংস্কারের বিষয়টিও ওঠে। প্রায় এক বছর আগে পরীক্ষা সংস্কার কমিটি তৈরি করা হলেও এখনও কিছু বাস্তবায়িত হয়নি বলে অভিযোগ। বিষয়গুলি নিয়ে অন্তর্বর্তী উপাচার্য শান্তা দত্ত দে বলেন, ‘‘বিষয়গুলি আমি এখনও জানি না। আমার
কাছে কোনও অভিযোগ এখনও আসেনি।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)