Advertisement
E-Paper

ট্যাক্সিচালকদের অতীত সন্ধানের ব্যবস্থাই নড়বড়ে

হাঁড়ির একটি চাল টিপে দেখলেই বোঝা যায় ভাতের হাল।ব্রেবোর্ন রোডে ফুটপাথবাসী কিশোরীকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় অ্যাপ-ক্যাব চালক গুড্ডু সিংহকে গ্রেফতারের পরে যে তথ্য বেরিয়ে এসেছে, তাতে ট্যাক্সিতে যাতায়াতের নিরাপত্তাই বড়সড় প্রশ্নের মুখে।

সুনন্দ ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:০১

হাঁড়ির একটি চাল টিপে দেখলেই বোঝা যায় ভাতের হাল।

ব্রেবোর্ন রোডে ফুটপাথবাসী কিশোরীকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় অ্যাপ-ক্যাব চালক গুড্ডু সিংহকে গ্রেফতারের পরে যে তথ্য বেরিয়ে এসেছে, তাতে ট্যাক্সিতে যাতায়াতের নিরাপত্তাই বড়সড় প্রশ্নের মুখে।

আগে ওলা-উবের দাবি করেছিল, কাউকে চালকের ছাড়পত্র দেওয়ার আগে তাঁর অতীত খতিয়ে দেখা হয়। কিন্তু সেই নজরদারির ব্যবস্থায় অাসলে যে কত ফাঁক, তা প্রমাণ করে দিয়েছে ব্রেবোর্ন রোডের ঘটনাই। এ বার প্রশ্ন উঠছে ওলা-উবেরের ক্ষেত্রে অন্তত নাম কা ওয়াস্তে যতটুকু হয়, সেটুকুও কি হয় হলুদ ট্যাক্সির ক্ষেত্রে।

জানা গিয়েছে, অ্যাপ-ক্যাব চালক হতে ইচ্ছুক ব্যক্তি যে এলাকায় থাকেন, শুধু সেই থানাতেই খোঁজ নেওয়া হয়, তাঁর নামে কোনও অভিযোগ আছে কি না। খোঁজ নেওয়া হয় সংশ্লিষ্ট আদালতে। ওখানেই শেষ যাবতীয় খোঁজখবর। যে কারণে ওয়াটগঞ্জ থানা এলাকার বাসিন্দা গুড্ডুর যে হেস্টিংস থানায় মামলা রয়েছে এবং সে যে ডাকাতির অভিযোগে আগে গ্রেফতারও হয়েছে, তা ধরাই পড়েনি।

সেখানই তৈরি হয়েছে আশঙ্কা গোটা ব্যবস্থাটা নিয়ে। হলুদ ট্যাক্সির চালকদের উপরে নজরদারির কী হাল, প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে তা নিয়ে। অনেকেরই বক্তব্য, বিপদ তো সেই সব ট্যাক্সিতেও হতে পারে। হলুদ ট্যাক্সি বা সাদা-নীল এসি ট্যাক্সিতে নিয়মিত যাতায়াত করেন শহরের বহু মানুষ। কিন্তু তাঁদের উপরে নজর রাখবে কে? ওলা-উবেরের মতো সংস্থাগুলি যেমন চালকদের অতীত খতিয়ে দেখার কাজ করায় বাইরের সংস্থাকে দিয়ে। হলুদ ট্যাক্সির চালকদের ক্ষেত্রে কি তা হলে সরকারকে এই দায়িত্ব নিতে হবে?

সরকারি ব্যবস্থাপনায় অতীত খতিয়ে দেখার পদ্ধতি নিয়ে যে এমনিতেই আছে বিস্তর প্রশ্ন। বাস্তব চিত্র বলছে, পাসপোর্টের পুলিশ ভেরিফিকেশনের সময়ে কলকাতা ও রাজ্য পুলিশের অফিসারেরা যে পদ্ধতি মেনে আবেদনকারীর অতীত দেখে রিপোর্ট দেন, তা-ও সুরক্ষিত নয়।

পাসপোর্টের ক্ষেত্রেও পুলিশ স্থানীয় থানাতেই খোঁজ নেয়। তবে এক পুলিশকর্তার দাবি, এই ভেরিফিকেশনের সময়ে কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চ ও গোয়েন্দা বিভাগ এবং রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের নথিও পরীক্ষা করে দেখা হয়। তবে কোনও ব্যক্তি অতীতে যদি অন্য রাজ্যে কোনও অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হয়ে থাকেন, তা বোঝার কোনও উপায় নেই এ রাজ্যের পুলিশের। এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘ধরুন, আপনি ১০ বছর আগে বিহারে অপরাধ করে ধরা পড়ে জেল খেটেছেন। আপনি নিজে তা না বললে আমার জানার কোনও উপায় নেই।’’

এই পরিকাঠামো নিয়ে কলকাতা বা রাজ্য পুলিশের পক্ষে কি হলুদ ট্যাক্সির চালকদের দিকে নজর রাখা সম্ভব? সেই চালকদের বেশির ভাগই তো ভিন্‌ রাজ্যের বাসিন্দা!

কী বলছে ট্যাক্সি সংগঠনগুলি?

বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বিমল গুহ বলেন, ‘‘আমাদের সংগঠনে প্রায় ৪০০০ সদস্য রয়েছেন। যখনই নতুন কেউ যোগ দেন, তাঁর জমা করা নথি খতিয়ে দেখে রেকর্ড রাখি আমরা।’’ প্রোগ্রেসিভ ট্যাক্সি মেনস্‌ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শুভরূপ মিত্রের আবার বক্তব্য, ‘‘লাইসেন্স দেওয়ার আগে তো পূর্ব ইতিহাস খতিয়ে দেখে মোটর ভেহিক্‌লস। তাদের কাছে সব চালকের যাবতীয় তথ্য থাকে। নির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ পেলে এখান থেকেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’’ তবে সদস্যদের তথ্য-ভাণ্ডার তৈরির ভাবনা রয়েছে তাঁদেরও, জানান শুভরূপবাবু।

যে সংস্থার মাধ্যমে ওলা চালকদের অতীত খতিয়ে দেখে, বেঙ্গালুরুর সেই সংস্থার কর্তা সৌরভ টন্ডন জানান, স্থানীয় থানায় অভিযোগ না থাকলে ধরে নেওয়া হয় সেই ব্যক্তির অপরাধের ইতিহাস নেই। ‘‘বড়তলা এলাকার যুবক তো ঝাড়গ্রামেও অপরাধ করে থাকতে পারেন,’’ মন্তব্য লালবাজারের এক অফিসারের।

সৌরভ জানান, শুধু স্থানীয় থানা নয়, স্থানীয় আদালতের নথিও এ ক্ষেত্রে পরীক্ষা করা হয়। দেখা হয় ওই আদালতের কোনও মামলায় আবেদনকারীর নাম রয়েছে কি না। সৌরভের কথায়, ‘‘আমরা স্থানীয় আদালতে গিয়ে এক জন উকিলের শরণাপন্ন হই। তাঁকেই টাকা দিয়ে বলা হয় জেনে দিতে যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নামে মামলা চলছে কি না।’’ গুড্ডুর বাড়ি আলিপুর আদালতের আওতায় পড়ে। সেখানে এমন কোনও ব্যবস্থা নেই বলেই আইনজীবীদের দাবি।

তবে কি কোনও ট্যাক্সিচালকের অপরাধ-যোগ কিছুতেই জানা সম্ভব নয়? পুলিশ সূত্রের খবর, ২০০৮ সালে মুম্বই হামলার পরে কেন্দ্রীয় সরকার ‘ক্রাইম অ্যান্ড ক্রিমিনাল ট্রেসিং নেটওয়ার্ক সিস্টেম’ নামে এক প্রকল্প ঘোষণা করে। ২০০০ কোটি টাকার সেই প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৩ সালে। উদ্দেশ্য, দেশ জুড়ে যে ১৫ হাজার থানা রয়েছে, সেখানকার যাবতীয় অপরাধ ও অপরাধীর তালিকা নথিভুক্ত করা হবে কম্পিউটারে। নাম, ঠিকানা ও বাবার নাম দিয়ে মাউসের এক ক্লিকে জানা যাবে ওই ব্যক্তির নামে দেশের কোথাও কোনও অভিযোগ আছে কি না। সৌরভের কথায়, ‘‘সেই প্রকল্প পুরোপুরি চালু হলে তবেই নিশ্চিত ভাবে ভেরিফিকেশন সম্ভব।’’

এ রাজ্যে সেই প্রকল্প এখনও বিশ বাঁও জলে, বলছেন পুলিশকর্তারাই।

Taxi driver
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy