প্রতীকী ছবি।
শিশু-হৃদয়ের চিকিৎসা হৃৎস্পন্দন বাড়িয়ে দিয়েছে স্বাস্থ্য ভবনের কর্তাদের!
মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প ‘শিশুসাথী’। এতে নিখরচায় ১৮ বছর পর্যন্ত শিশু-কিশোরদের হৃদ্যন্ত্রের চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচার করার কথা। কিন্তু চিকিৎসকের সংখ্যা ও অপারেশন থিয়েটার না বাড়ালে এই প্রকল্পে শিশুদের হৃদ্যন্ত্রের অস্ত্রোপচার করা তাঁদের পক্ষে আর সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিয়েছেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের কার্ডিওথোরাসিক বিভাগের চিকিৎসকেরা।
কয়েক মাস ধরেই দেখা যাচ্ছিল, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ‘শিশুসাথী’র কেস অস্বাভাবিক হারে কমে যাচ্ছে। অর্ধেকের বেশি রোগীকেই ‘রেফার’ করা হচ্ছে মুকুন্দপুরের আর এন টেগোর হাসপাতালে। এর আগে মেডিক্যাল থেকে অধিকাংশ শিশুকে এসএসকেএমে রেফার করা হচ্ছিল। প্রতিবাদ জানিয়ে স্বাস্থ্য ভবনে অভিযোগ জানান এসএসকেএমের কার্ডিওভাস্কুলারের ডাক্তারেরা। কারণ, রেফারের ধাক্কায় তাঁদের কাছে ক্রমশ ‘শিশুসাথী’র কেসের পাহাড় জমছিল। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্যকর্তারা মেডিক্যালকে সতর্ক করার পরেই কেস রেফারের গন্তব্য বদলে হয়ে যায় বেসরকারি আর এন টেগোর হাসপাতাল।
গত সপ্তাহে এ ব্যাপারে কথা বলতে মেডিক্যালে গিয়েছিলেন ‘শিশুসাথী’ প্রকল্পের নোডাল অফিসার ভূষণ চক্রবর্তী। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, এর পরেই মেডিক্যাল কলেজের কার্ডিওভাস্কুলার বিভাগের ডাক্তারেরা তাঁকে জানিয়ে দেন, বর্তমান পরিকাঠামোয় তাঁদের পক্ষে শিশুসাথীর অস্ত্রোপচার করা কার্যত অসম্ভব। শিশুদের প্রাণ সঙ্কটে ফেলতে চান না বলেই তাঁরা রেফার করছেন।
একাধিক স্বাস্থ্যকর্তাই জানিয়েছেন, এতে যথেষ্ট চাপে পড়ে গিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। কারণ, ‘শিশুসাথী’ প্রকল্পে গোটা রাজ্যে সাকুল্যে যে দু’টি সরকারি হাসপাতাল রয়েছে, তার একটি হল মেডিক্যাল, অপরটি এসএসকেএম। বাকি ছ’টি বেসরকারি হাসপাতাল। স্বাস্থ্য দফতরের নথিতেই দেখা যাচ্ছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে মেডিক্যাল ‘শিশুসাথী’ প্রকল্পে তাদের কাছে আসা ১৩টি শিশুর মধ্যে আট জনকে আর এন টেগোরে রেফার করেছে। তার পরে মার্চে ১২ জনের মধ্যে আট জনকে, এপ্রিলে ১০ জনের মধ্যে পাঁচ জনকে ও মে মাসে ছ’জনের মধ্যে দু’জনকে আর এন টেগোরে পাঠানো হয়েছে। যে ক’টি অস্ত্রোপচার মেডিক্যাল করেছে, সেগুলি নিতান্ত সাধারণ ও স্বল্প গুরুত্বের বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য ভবন।
এক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, ‘‘শিশুসাথীর অস্ত্রোপচারে কেস প্রতি বেসরকারি হাসপাতালকে দেড় লক্ষ টাকার মতো দেওয়ার কথা। কিন্তু সেটা আমরা সময়মতো দিতে পারছি না। প্রচুর টাকা বাকি পড়েছে। এর উপরে যদি সরকারি জায়গা থেকে ওদের কেস রেফার করা হয়, তা হলে সেটা আমাদেরও লজ্জা। অথচ, চিকিৎসকও জোগাড় করতে পারছি না। কারণ, বেশি খাটনি বলে প্রায় কেউই কার্ডিওথোরাসিক সার্জারি পড়তে চাইছেন না।’’
মেডিক্যালের কার্ডিওথোরাসিক বিভাগের প্রধান প্লাবন মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘আমাদের এক জন আরএমও, এক জন মাত্র পিজিটি। বাকি আট জন শিক্ষক-চিকিৎসক। আউটডোর থেকে প্রতি সপ্তাহে অন্তত এমন ৬০ জন রোগী পাওয়া যায়, যাঁদের বাইপাস করতে হবে। বাইপাসের তারিখই এখন দিতে হচ্ছে সাত-আট মাস পরে। এই অবস্থায় আবার শিশুসাথীর অস্ত্রোপচার কখন হবে?’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘দু’টি মাত্র অপারেশন থিয়েটার। তার একটিতে করোনারি বাইপাস এবং অন্যটিতে ভাল্ভ প্রতিস্থাপন হয়। শিশুসাথী কোথায় হবে? বাচ্চাদের হৃদ্যন্ত্র অনেক সূক্ষ্ম। পেডিয়াট্রিক কার্ডিওথোরাসিক সার্জন ছাড়া অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে যে কোনও সময় বিপদ ঘটতে পারে। সেই সার্জন আমাদের নেই। কোনও জটিল অস্ত্রোপচার করতে গেলে সমস্যা হলে সামলাবেন কে?’’ স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, সমস্যাটি তাঁরা শুনেছেন। সমাধান নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।
আর এন টেগোর হাসপাতালের এক কার্ডিওথোরাসিক সার্জনের আক্ষেপ, ‘‘মেডিক্যালের রেফারের চোটে সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত টানা অপারেশন করছি। এখন আমাদের সময় খারাপ। তাই কিছু বলা যাবে না। সরকারকে চটানো যাবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy