Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

প্লাস্টিকে ছেয়ে সেতুর তলা যেন আস্ত জতুগৃহ

মাঝেরহাটে সেতুভঙ্গের পরে সব সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা শুরু হয়। সেই সময়ে পূর্ত দফতরের ইঞ্জিনিয়ারেরা জানিয়েছিলেন, সোদপুরের রেল উড়ালপুলের নীচের দোকানগুলি সেতুর পক্ষে যথেষ্ট বিপজ্জনক।

বিপজ্জনক: সোদপুর রেল উড়ালপুলের নীচে দোকানগুলিতে রয়েছে প্লাস্টিকের ছাউনি। নিজস্ব চিত্র

বিপজ্জনক: সোদপুর রেল উড়ালপুলের নীচে দোকানগুলিতে রয়েছে প্লাস্টিকের ছাউনি। নিজস্ব চিত্র

সুপ্রকাশ মণ্ডল
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৯ ০০:১৮
Share: Save:

মাঝেরহাটে সেতুভঙ্গের পরে সব সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা শুরু হয়। সেই সময়ে পূর্ত দফতরের ইঞ্জিনিয়ারেরা জানিয়েছিলেন, সোদপুরের রেল উড়ালপুলের নীচের দোকানগুলি সেতুর পক্ষে যথেষ্ট বিপজ্জনক। কারণ, দোকানগুলির ছাউনি প্লাস্টিকের, দোকানের ভিতরে প্লাস্টিক বিছানো, মালপত্রও প্লাস্টিকে মোড়া। এমনকি, বহু পণ্যও প্লাস্টিকের। ফলে, ওই দোকানগুলিতে একবার আগুন লাগলে বিপদ বাড়বে সেতুর।

মাসখানেক আগে গড়িয়াহাটে একটি বহুতলে আগুন লাগার ঘটনায় দমকল বিভাগ একটি রেস্তরাঁর সঙ্গে ফুটপাতের দোকানগুলিকে দায়ী করেছিল। কারণ ছিল সেই প্লাস্টিকের ছাউনি।

সোদপুরের বাসিন্দাদের অভিযোগ, সেখানকার বেশির ভাগ দোকানেই ঠাসা প্লাস্টিক। রেল উড়ালপুলের নীচের অংশ প্রায় জতুগৃহের চেহারা নিয়েছে। প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে বড়সড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। এর আগে বারবার পুরসভাকে জানিয়ে কোনও লাভ হয়নি বলে অভিযোগ তাঁদের। বর্তমানে পানিহাটি পুরসভায় কোনও পুরবোর্ড নেই। প্রশাসক হিসেবে কাজ চালাচ্ছেন ব্যারাকপুরের মহকুমা শাসক আবুল কালাম আজাদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘‘আমি এই সমস্যার কথা প্রথম শুনলাম। পুরসভার আধিকারিকদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলব। কী ভাবে সমস্যার সমাধান করা যায়, খতিয়ে দেখা হবে।’’

সোদপুরের রেল উড়ালপুলটি স্টেশন লাগোয়া। ওই এলাকায় বিভিন্ন ধরনের প্রচুর দোকান রয়েছে। বছর তিরিশ আগে তৈরির পরেই দখল হয়ে যায় উড়ালপুলের নীচের অংশ। প্রথম দিকে অস্থায়ী ভাবে বিক্রেতারা পণ্য নিয়ে বসলেও ধীরে ধীরে পোক্ত

কাঠামো করে ফেলে অনেক দোকান। বর্তমানে প্রায় সব দোকানের কাঠামোই পোক্ত। পাকা দোকান না হলেও, সেগুলি বানানো হয়েছে কাঠ এবং প্লাস্টিক দিয়ে।

রেল লাইনের দু’প্রান্তেই দোকানের রমরমা। সেতুর পাশের জায়গা রাখা হয় মূলত পথচারীদের হাঁটাচলা এবং আপৎকালীন অবস্থায় গাড়ি বা দমকলের ইঞ্জিন যাতে ঢুকতে পারে সেই জন্য। কিন্তু বাস্তব বলছে, সেতুর নীচে স্টেশন সংলগ্ন রাস্তায় হাঁটাচলা করার বিশেষ জায়গা নেই। সেই জায়গার দখল নিয়েছে দোকানপাট। রাস্তার দু’দিকে দোকানে ছাউনি দেওয়ার জন্য এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত প্লাস্টিক টাঙানো। বেশির ভাগ জায়গায় রোদ-বৃষ্টি আটকাতে উড়ালপুলের রেলিং থেকে বড় বড় ত্রিপল টাঙানো হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা রতন সরকার বলেন, ‘‘সেতুর পাশের রাস্তা দিয়ে হাঁটাচলা করতে খুবই অসুবিধা হয়। একে রাস্তা সরু, তার উপরে পুরোটাই প্লাস্টিকে ছাওয়া। কোনও একটি দোকানে আগুন লাগলে সব দোকান ছাই হবে যাবে।’’

প্লাস্টিকে যে বিপদ লুকিয়ে রয়েছে, তা বিলক্ষণ জানেন ব্যবসায়ীরাও। কিন্তু এই মুহূর্তে তাঁদের কিছু করার নেই বলে জানালেন বেশির ভাগ ব্যবসায়ী। এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘নিজস্ব জায়গা নয় বলে পাকা কাঠামো করা যাবে না। ফলে প্লাস্টিক ছাড়া উপায়ও নেই। আমি একা প্লাস্টিক সরিয়ে নিলেও বাকিরা কিন্তু সরাবে না। তবে প্রশাসন যদি প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করার নির্দেশ দেয়, তা হলে সকলকে মানতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Plastic Panihati Municipality Calamity Fire
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE