Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতার কড়চা

বেতার প্রোগ্রাম আপনারা সবাই শুনে থাকেন। ভাল বা মন্দ লাগলে পত্রাঘাতে জর্জ্জরিত হ’য়ে ওঠেন প্রোগ্রাম পরিচালক! কিন্তু একটি প্রোগ্রাম রচনা ও তা অনুষ্ঠিত হবার পূর্ব্ব মুহূর্ত্তে লেখক প্রযোজক ও আর্টিস্টদের কত বাধা বিপত্তি অসুবিধার সম্মুখীন হ’তে হয়— তারই জীবন্ত চিত্র রস-সঞ্চারে মূর্ত্ত হ’য়ে উঠ্‌বে এই ‘রিহার্স্যাল’ নাটিকায়!’’ ‘রিহার্স্যাল’ শিরোনামে এই ঘোষণাটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৪১-এর ১ অগস্ট, ‘বেতার জগৎ’-এ।

ছবিটিতে বসে আঙুরবালা, তাঁর বাঁ দিকে বেলা দে (মহিলা মহল), ডানে শিশুমহলের ইন্দিরা দেবী।

ছবিটিতে বসে আঙুরবালা, তাঁর বাঁ দিকে বেলা দে (মহিলা মহল), ডানে শিশুমহলের ইন্দিরা দেবী।

শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৫ ০০:০৩
Share: Save:

ইতিহাস বাঁচাতে চাইছে আকাশবাণী

বেতার প্রোগ্রাম আপনারা সবাই শুনে থাকেন। ভাল বা মন্দ লাগলে পত্রাঘাতে জর্জ্জরিত হ’য়ে ওঠেন প্রোগ্রাম পরিচালক! কিন্তু একটি প্রোগ্রাম রচনা ও তা অনুষ্ঠিত হবার পূর্ব্ব মুহূর্ত্তে লেখক প্রযোজক ও আর্টিস্টদের কত বাধা বিপত্তি অসুবিধার সম্মুখীন হ’তে হয়— তারই জীবন্ত চিত্র রস-সঞ্চারে মূর্ত্ত হ’য়ে উঠ্‌বে এই ‘রিহার্স্যাল’ নাটিকায়!’’ ‘রিহার্স্যাল’ শিরোনামে এই ঘোষণাটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৪১-এর ১ অগস্ট, ‘বেতার জগৎ’-এ। ১ নম্বর গারস্টিন প্লেসের আকাশবাণী ভবন কলকাতা থেকে ‘দি ইন্ডিয়ান ব্রডকাস্টিং কোম্পানি’ পাক্ষিক এই পত্রিকাটি প্রকাশ করত, বেতারের যাবতীয় অনুষ্ঠানের খবর শ্রোতাদের কাছে আগাম পৌঁছে দিতে। ১৯২৮-১৯৮৬-র ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রকাশিত এই পত্রিকায় অনুষ্ঠান সূচি ছাড়াও থাকত কথিকা, গান, গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ। প্রকাশিত হত কলাকুশলীদের ছবি।

বেতার জগতের প্রচ্ছদ (বাঁ দিকে) ও গারস্টিন প্লেসের বাড়ি।

শ্রোতারা এত দিন যাঁদের ছবি কেবল কল্পনা করতেন, তাঁদের অনেককেই সেখানে দেখতে পাওয়া যেত। পত্রিকাটি কতখানি জনপ্রিয় ছিল তা বিজ্ঞাপনের বহরে বোঝা যায়। পরে প্রকাশিত হত ঢাকা বেতারের অনুষ্ঠান সূচিও। সম্প্রতি ই-বুক তৈরি করে পত্রিকাটির পুরনো সংখ্যা সবার কাছে পৌঁছে দিতে উদ্যোগী হয়েছে আকাশবাণী কলকাতা। ১৯৩২, ১৯৩৫ ও ১৯৪২-’৪৬, ১৯৪৮, ১৯৬৭ ও ১৯৬৮-র ‘বেতার জগৎ’-এর বেশ কিছু সংখ্যা ওঁদের সংগ্রহে নেই, এ ব্যাপারে ওঁরা চাইছেন সহৃদয় পাঠকের সাহায্য। পুরনো সব আলোকচিত্র, নথিপত্রও ডিজিটাইজ করার কাজ চলছে প্রসার ভারতীর সিইও জহর সরকারের উৎসাহে।

আমার চ্যাপলিন

ছবি করতে আসার আগেই চ্যাপলিনকে নিয়ে বাংলায় বই লিখে ফেলেছিলেন মৃণাল সেন, পঞ্চাশের দশকে। সে বইয়ে ছিল চ্যাপলিনের কাজ আর জীবনের কথা। বছর দুয়েক আগে লিখলেন মাই চ্যাপলিন (নিউ এজ), ইংরেজিতে। তাতে নিজের পথ চলা আর ছবি করার ভিতর দিয়ে যেন ফের নতুন ভাবে চ্যাপলিনকে আবিষ্কার করলেন মৃণাল সেন। আত্মসমীক্ষাময় এ-বইটির অনুবাদ সম্প্রতি প্রকাশ পেল আনন্দ থেকে: আমার চ্যাপলিন। চমৎকার অনুবাদ করেছেন ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষক ও ফরাসিবিদ চিন্ময় গুহ। তাঁর ‘অনুবাদকের কথা’-য় লিখেছেন ‘এক আবহমান খুদে ট্র্যাম্প ঢুকে পড়েছেন মৃণাল সেনের ছবির পর্দায়। নির্জন এক সাঁকোর ওপর এক প্রতিবাদী চিত্রকরের সঙ্গে দেখা হচ্ছে এক জীবনশিল্পীর।’ মৃণালবাবুকে নিয়ে নতুন করে ভাববার অবকাশ এনে দিল বইটি। সঙ্গে বইটির প্রচ্ছদ।

তথ্যচিত্র

‘যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন’ কবিতাটি একটি পত্রিকায় প্রথম দেখে সুর দেন পঙ্কজকুমার মল্লিক। বয়স তখন সবে পনেরো-ষোলো। সেই থেকে রবীন্দ্রনাথের লেখার সঙ্গে একাত্মতা। এমন নানা তথ্য নিয়ে তথ্যচিত্র তৈরি করেছেন শিল্পীর পুত্রবধূ ঝিনুক গুপ্ত ও দৌহিত্র রাজীব গুপ্ত। শিল্পী সম্বন্ধে লতা মঙ্গেশকর, সত্যজিৎ রায়, রবিশংকর প্রমুখের কথা শোনা যাবে তথ্যচিত্রটিতে। ১০ মে পঙ্কজকুমার মল্লিকের ১১০ তম জন্মদিবস। ৭ মে সন্ধে সাড়ে ছ’টায় আইসিসিআর-এ দেখানো হবে এটি। থাকবে পঙ্কজ মল্লিকের স্মৃতিচারণা ও গান। আয়োজনে পঙ্কজ মল্লিক মিউজিক অ্যান্ড আর্ট ফাউন্ডেশন, সহযোগিতায় বেঙ্গল কালচারটি।

অমিতা

পাখির মতো খোলা গলায় গাইতে পারত মেয়েটি। রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন সে গান অন্তরের সম্পদ। গান শিখেছেন দিনেন্দ্রনাথের কাছে। আশ্রমে অমিতা সেন ছিলেন সকলের খুকু। মেধাবী অমিতা সিটি কলেজ থেকে সংস্কৃতে স্নাতক। সে বছরের সেরা মহিলা স্নাতক। বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাপ শম্ভুনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে। প্রণয় পরিণয়ে পৌঁছয়নি। ১৯৩৫ নাগাদ রবীন্দ্রনাথের গান রেকর্ড করেন। সংগীত ভবনে শিক্ষকতায় যোগ দিলেও পরে ছেড়ে দেন। কবির সঙ্গে অমিতার সম্পর্কে শুরু হয় তিক্ততা। অমিতার অপ্রকাশিত এক রেকর্ড প্রচারের উপর জারি হয় নিষেধাজ্ঞা। ১৯৪০-এ মাত্র ২৬ বছরে দুরারোগ্য অসুখে ঢাকায় জীবনাবসান হয় অমিতার। তাঁর জীবন নিয়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন ‘প্রগতি সংহার’। অমিতার জীবন তাঁর গান গাওয়া ও গান থামা নিয়ে গানে-কথায় এক অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে পুনশ্চ, ১০ মে সন্ধে সাড়ে ৬টায় বৈতানিকে। পরিকল্পনায় কৃষ্ণেন্দু সেনগুপ্ত।

জীবনস্মৃতি

রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় গান বা রবীন্দ্রসঙ্গীত বিষয়ক পত্রপত্রিকা আর বইয়ের বিপুল সম্ভার যদি এক সঙ্গে মেলে? এই ভেবেই অডিয়ো ভিসুয়াল ডিজিটাল আর্কাইভ ‘জীবনস্মৃতি’ তৈরি করে ফেলেছেন অরিন্দম সাহা সর্দার। সেখানে থাকছে ইন্দিরা দেবী চৌধুরাণী, শান্তিদেব ঘোষ, শৈলজারঞ্জন মজুমদার, পঙ্কজ মল্লিক, সুচিত্রা মিত্র, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় প্রমুখ শিল্পীর সাক্ষাৎকার, কবির সমসাময়িক ও পরবর্তী রবীন্দ্র বিষয়ক পত্রপত্রিকা ও বইয়ের বিপুল সংগ্রহ, ১৯০৫-১৯৬১-র মধ্যে নানা শিল্পীর রবীন্দ্রসঙ্গীতের রেকর্ড, চলচ্চিত্রে পরিবেশিত রবীন্দ্রসঙ্গীতের ভিডিয়ো ক্লিপিং ইত্যাদি। উত্তরপাড়া বেঙ্গল স্টুডিয়োয় ৮ মে বিকেল পাঁচটায় উদ্বোধন হবে এই আর্কাইভ। অন্য দিকে নিউটাউনের রবীন্দ্রতীর্থে আয়োজিত হয়েছে একমাসব্যাপী ১৫৪তম রবীন্দ্র জন্মোৎসব। ৯ মে প্রভাতী অনুষ্ঠান। শুরু হচ্ছে দুটি প্রদর্শনী। প্রথমটি প্রদর্শশালায়, সৌভিক রায়ের সংগ্রহ থেকে রবীন্দ্রনাথ সংক্রান্ত এ যাবৎ প্রকাশিত ২১টি দেশের ডাকটিকিট, ম্যাক্সকার্ড, দুর্লভ ফটো, বুকলেট, সোয়াপ-কার্ড, দেশলাই এবং মুদ্রার সর্ববৃহৎ প্রদর্শনী। অন্যটি সঙ্গীতকক্ষে, ‘রবিবাবুর গান’। আছে নানা অনুষ্ঠান।

আকস্মিক

ইতিহাস ছিল তাঁর বিষয়। দীর্ঘকাল অধ্যাপনা করেন যোগমায়া দেবী কলেজে। ইতিহাস কংগ্রেসের বিভাগীয় সভাপতি হন একাধিক বার। সুভাষচন্দ্র বসু এবং চিত্তরঞ্জন দাশ বিষয়ে গবেষণা করেছেন। তাঁর বিবিধ প্রবন্ধ নানা সংকলনে স্থান পেয়েছে। কিন্তু অ্যাকাডেমিক জগতের বাইরে এক বৃহত্তর পরিচিতি ছিল মঞ্জুগোপাল মুখোপাধ্যায়ের। দুটি বিষয়ে নিজস্ব উৎসাহে পাঁচ দশক ধরে প্রচুর চর্চা এবং লেখালিখি করেছেন: পুরনো দিনের বাংলা সিনেমা ও প্রথম সত্তর বছরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। বহু পত্রপত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়েছে। সত্তরের দশকে দেশ বিনোদন সংখ্যায় তাঁর ‘উইলো কাঠে সুরের আগুন’ নিবন্ধটি খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল। দুটি বইয়ের পাণ্ডুলিপি তৈরি করছিলেন কিছু দিন ধরে: একটা পুরাতনী ক্রিকেট নিয়ে, অন্যটি নিউ থিয়েটার্স যুগের সিনেমা বিষয়ে। সে কাজ শেষ করা হল না। ব্যাঙ্ক থেকে পেনশন তুলে বাড়ি ফেরার পথে রাসবিহারী কানেক্টরের উপর এক ট্যাক্সি এসে ধাক্কা দেয়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় অচেতন অবস্থায়। সেখানেই বিদায় নেন সম্প্রতি আশি-পেরনো মঞ্জুগোপাল।

শখের থিয়েটার

ওঁরা প্রবাসী বাঙালি। ব্যস্ততার মধ্যেও জোট বেঁধে গড়েছেন নাটকের দল ‘শখের থিয়েটার’। আশির দশকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে পড়ার সময় সুমিতা ঘোষ প্রচুর নাটক করেছেন। সুচিত্রা মিত্রের কাছে গান শিখতেন মধুছন্দা মুখোপাধ্যায়। সে সব ফিরিয়ে আনতেই এই উদ্যোগ। মাস দুই-তিন টানা মহড়ার পর যখন নাটক নামে, সেটি স্ট্রেস বাস্টারের কাজ করে। নিজেরাই স্ক্রিপ্ট লেখেন, নির্দেশনা দেন। দক্ষিণ মুম্বইয়ের একটি বড় পুজোয় নাটক করতে গিয়েই দলটি গড়ে উঠেছিল। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি নাটক নামিয়ে এ বার ‘শখের থিয়েটার’ কলকাতায়। আজ সন্ধে সাতটায় মধুছন্দা মুখোপাধ্যায়ের নির্দেশনায় কলামন্দিরে মঞ্চস্থ হবে রবীন্দ্রনাথের ‘চোখের বালি’। অন্য দিকে বাংলাদেশের নাগরিক চঞ্চল খান এখন পুরোদস্তুর শিল্পী এবং শিক্ষক। এক সময় শিক্ষক হিসেবে পেয়েছেন দেবব্রত বিশ্বাসকে। অস্ট্রেলিয়া ও নেপালে প্রতিষ্ঠা করেছেন রবীন্দ্রসঙ্গীত শিক্ষাকেন্দ্র। নির্মাণ করেছেন দুটি তথ্যচিত্র ‘বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথ’ এবং ‘টাইমলেস গীতাঞ্জলি’। ২৫ বৈশাখ রানিকুঠির অরবিন্দ আশ্রমে শোনাবেন রবিঠাকুরের গান।

বিবেক-বীণায়

চোদ্দো বছরের নরেন গড়ে তুলেছিলেন নাট্যদল। মঞ্চস্থ করেন ‘মহন্তর এই কি কাজ!’ নাট্য-নেপথ্যে ‘আয় গো আয় মহন্তের তেল নিবি’ গেয়ে মঞ্চ মাত করেন নরেন্দ্রনাথ দত্ত। সমকালীন বহু মঞ্চে অভিনীত হত বঙ্কিমচন্দ্রের ‘মৃণালিনী’, সে নাট্যের গান ‘সাধের তরণী আমার’ বিলেতে বসে একান্তে গাইতেন তিনি। শ্রীরামকৃষ্ণ-সমীপে গাইতেন গুরুভাই গিরিশচন্দ্রের নাট্যসংগীত। শ্রোতা ‘শ্রীম’ মহেন্দ্রনাথের অভিজ্ঞতায় ‘সংগীতকালে যেন এক বৈরাগ্যের হিল্লোল চারিদিকে প্রবাহিত হইত’। বিস্মৃতপ্রায় সে-সব নাট্যসংগীত নিয়ে ‘বিবেক-বীণায় নাট্য-সংগীত’ পরিবেশিত হবে ৬ মে, সন্ধে ৬টায় গোলপার্ক রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচার-এ। উপস্থাপনায় দেবজিত বন্দ্যোপাধ্যায়, নিবেদনে অ্যাকাডেমি থিয়েটার। সূচনায় ‘রামকৃষ্ণ কথামৃত’ থেকে পাঠ করবেন স্বামী সুপর্ণানন্দ মহারাজ।

সম্মান

কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে কৃতী শিক্ষার্থীদের হাতে ডিগ্রি তুলে দেওয়ার প্রথা রয়েছে এ দেশে এবং অন্যত্রও। সেই ধারা অব্যাহত রেখে রবীন্দ্রনাথের স্বগৃহে প্রতিষ্ঠিত রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ও তার চল্লিশতম সমাবর্তনের আয়োজন করছে ৮ মে। সভাপতি রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। দীক্ষান্ত ভাষণ দেবেন সমাজতাত্ত্বিক দীপঙ্কর গুপ্ত। সাম্মানিক ডি লিট পাবেন দু’জন। একজন নারায়ণ দেবনাথ। তাঁর কার্টুন চরিত্র হাঁদা-ভোঁদা, নন্টে-ফন্টে কোন বাঙালিকে না আকর্ষণ করেছে কৈশোরে! অন্য জন সম্পূরণ সিংহ কালরা নামে জন্ম নিলেও কালক্রমে গুলজার নামেই তাঁর খ্যাতি। এ দেশে তাঁর মতো সংবেদী চরণ ক’জনই বা লিখেছেন? তাই বিশ্বকবির জন্মদিনের প্রাক্কালে তাঁরই আবাসে সম্মানিত হবেন মানুষটি।

শ্রীরামকৃষ্ণ চর্চা

‘মহাত্মা সুরেন্দ্রনাথের যত্নে ও ব্যয়ে ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামকৃষ্ণদেবের জন্মতিথির দিন প্রথম শ্রীরামকৃষ্ণ জন্মোৎসব সংস্থাপিত হয়।’ শ্রীরামকৃষ্ণের জীবৎকালেই তাঁর ‘রসদদার’ সুরেন্দ্রনাথ মিত্রের উদ্যোগে যার সূচনা, কালে কালে তা মহোৎসব হয়ে ওঠে। ইতিহাসপুরুষ হিসেবে শ্রীরামকৃষ্ণকে দেখাতে চেয়ে সমকাল থেকে সাম্প্রতিক পর্যন্ত সাময়িকপত্রের দুর্লভ পৃষ্ঠা থেকে খুঁজে একটি মূল্যবান সংকলন তৈরি করেছেন অর্ণব নাগ: শ্রীরামকৃষ্ণচর্চা/ ১৮০-র অভিমুখে (সূত্রধর)। ষোলোটি প্রবন্ধের সঙ্গে আছে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি সংযোজন। সুতানুটি বইমেলা কমিটি ও সূত্রধরের যৌথ উদ্যোগে ৬-৯ মে ছাতুবাবু-লাটুবাবুর বাড়িতে রোজ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে ৯টা শ্রীরামকৃষ্ণকে কেন্দ্র করেই নানা অনুষ্ঠান। সূচনায় এই বইটি ছাড়াও প্রকাশিত হবে স্বামী শিবপ্রদানন্দের অন্তবিহীন শ্রীরামকৃষ্ণ। ৭-৯ আছে তিনটি স্মারক বক্তৃতা।

যোগাযোগ

রবীন্দ্রনাথের ক্লাসিক থেকে ছবি বানানো, আমি কেন, যে কোনও পরিচালকের কাছেই চ্যালেঞ্জ। আগেও দিকপাল পরিচালকেরা তাঁর গল্প-উপন্যাস নিয়ে ছবি করেছেন।’ শেখর দাশ তাঁর নতুন ছবি ‘যোগাযোগ’ নিয়ে বলছিলেন, ‘তবে আমি কাহিনির কাল-কে আমাদের ধরাছোঁয়ার মধ্যে এনে ফেলেছি। আসলে পিরিয়ড-এর মধ্যে দিয়ে সমকালের সংকট খোঁজাটাও একটা চ্যালেঞ্জ।’ পুরনো-নতুন মূল্যবোধের সংঘাত ছেয়ে আছে ছবিটাতে। যে দিকে চলেছে সারা দুনিয়া, তারই প্রতিনিধি যেন ব্রাত্য বসু অভিনীত মধুসূদন চরিত্রটি, আর ঠিক তার বিপরীতে দাঁড়িয়ে দ্বন্দ্বময় কুমুদিনী, ‘এ দেশটাকে বাঁচানোর আত্মিক লড়াই যেন তার মধ্যে। আমি তাই নতুন মুখ খুঁজছিলাম, অভিনেতা হিসেবে যে গভীর এবং সংবেদনশীল হবে। সম্পূর্ণ অপরিচিত ছিল শুভলগ্না (সঙ্গের ছবি), ফোন করে অভিনয়ের ইচ্ছা প্রকাশ করায় কোনও মেকআপ ছাড়াই আসতে বলেছিলাম, উপস্থিত হওয়া মাত্রই আমার মনে কুমুদিনীর ছবিটার সঙ্গে মিলে গেল। গানও করে চমৎকার।’ শুভলগ্না ‘প্রেমের হাতে ধরা দেব তাই রয়েছি বসে’ গানটি গেয়েছেন ছবির জন্যে, এসরাজ বাজানোও শিখেছেন। ‘দারুণ অভিজ্ঞতা!’ জানালেন তিনি, ‘কঠিন কাজ, জটিল চরিত্র, আর সে জন্যেই চ্যালেঞ্জিং। শেখরদা খুব ভাল ভাবে চরিত্রটা বুঝিয়েছিলেন, চমৎকার বোঝাপড়া তৈরি হয়েছিল আমাদের। ব্রাত্যদার বিপরীতে কাজ করার অভিজ্ঞতাও খুব ভাল। আমার কাছে এটা একটা জার্নি।’ ৮ মে কলকাতায় মুক্তি পাচ্ছে ছবিটি।

একটি স্বপ্ন

খা টো ধুতি আর সাদা ফতুয়া গায়ে গাছতলায় ছড়িয়ে বসে শ’খানেক মানুষ। কিছু পরেই উর্দিধারীর খোঁচানি শুরু। তারও কয়েক ঘণ্টা পরে মুক্তি মিলত। প্রায় আশি বছর আগের ছবি। জেলখানায় জায়গা নেই, বন্দিদের স্থান গাছতলা বা মাঠে। টেলিগ্রাফের তার কাটা, ডাকঘরে লুঠপাট, থানা ঘেরাও করাই ছিল আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য। তিনিও ছিলেন শরিক। অজস্র বার জেল খেটেছেন আরামবাগের একেন্দ্রনারায়ণ বাগ। সদ্য শতায়ু মানুষটি বর্তমানে বরাহনগরবাসী। ‘আরামবাগের গাঁধী’ প্রফুল্লচন্দ্র সেনের অনুপ্রেরণায় স্বাধীনতা আন্দোলনে। স্মৃতি এখন বিদ্রোহ করে। কিন্তু দেখে বয়স বোঝার উপায় নেই। তবে একেন্দ্রবাবুকে আজ আর রাজনীতি টানে না। ‘পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি। তখন সালেপুর ইউনিয়ন বোর্ডে সভাপতি। বিরোধীরা পদে পদে হেনস্থা করায় পদ ছাড়তে চেয়েছিলাম। প্রফুল্লদা বললেন, ‘বিরোধীরা তাঁদের কাজ করবেন। তুই তোর কাজ করবি। অন্য বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাস না।’ আজকের রাজনীতিবিদদের মধ্যে এই সহিষ্ণুতাই নেই।’ তাঁর স্বগতোক্তি। আরামবাগের ১৮-২০টা গ্রামে মেয়েদের কোনও স্কুল ছিল না। তাই বড়ডোঙ্গলে প্রফুল্লবাবুর দান করা জমিতে স্ত্রীর গয়না বেচা টাকায় স্ত্রীর নামেই স্কুল করেন আশির দশকে। কয়েক বছর যেতেই রাজনৈতিক চাপে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সেই স্কুল। এখন তা পোড়ো বাড়ি। দু’চোখে একটাই স্বপ্ন তাঁর, ‘যদি আবার বেজে ওঠে স্কুলের ঘণ্টা! শত কণ্ঠে আবারও ধ্বনিত হয় প্রার্থনা সঙ্গীত ! তবেই আমার একশো বছর বাঁচার সার্থকতা।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE