Advertisement
E-Paper

মুখ্যমন্ত্রী চাইলে কাউন্সিলর-বিধায়কের পদও ছাড়তে রাজি শোভন

দলের নির্দেশেই এত দিন তিনি কাউন্সিলর, বরো চেয়ারম্যান, মেয়র পারিষদ ও পরবর্তীকালে মেয়র-মন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৮ ০২:৫২
ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে এ বার মুখ খুললেন শোভন চট্টোপাধ্যায়।—নিজস্ব চিত্র।

ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে এ বার মুখ খুললেন শোভন চট্টোপাধ্যায়।—নিজস্ব চিত্র।

মন্ত্রিত্ব ছেড়েছেন। মেয়র-পদও ছাড়লেন। দল নির্দেশ দিলে কাউন্সিলর-বিধায়কের পদও ছাড়তে রাজি শোভন চট্টোপাধ্যায়। কারণ, দলের নির্দেশেই এত দিন তিনি কাউন্সিলর, বরো চেয়ারম্যান, মেয়র পারিষদ ও পরবর্তীকালে মেয়র-মন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন।

বৃহস্পতিবার মেয়রের পদ থেকে ইস্তফার পরে গোলপার্কের আবাসনে প্রথম সাংবাদিক বৈঠকে এমনটাই জানান শোভন। তাঁর প্রস্তাব, কাউন্সিলর হিসেবে তিনি পদত্যাগ করলে নতুন পুর সংশোধনী বিল অনুযায়ী তাঁর শূন্য পদ থেকে পরবর্তী মেয়র ববিকে জিতিয়ে আনা হোক।

প্রসঙ্গত, এ দিনই সকালে শোভন মেয়র হিসেবে পদত্যাগপত্র পুরসভার চেয়ারপার্সন মালা রায়ের কাছে পাঠিয়ে দেন। তার পরে বিকেলে সাংবাদিক বৈঠকে নিজেকে দলের কর্মী, ‘দলের সৈনিক’ হিসেবে দাবি করে শোভন বলেন, ‘‘দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিছু নির্দেশ দিয়েছেন, তা পালন করিনি, এমনটা এখনও হয়নি। দলই আমাকে মেয়র হিসেবে নির্বাচন করেছিল, সেই মতোই কাজ করেছি। দলের নির্দিষ্ট নির্দেশ ছিল মেয়রের পদে ইস্তফা দেওয়ার। সেটাই করেছি। কারণ, আমি দলের বাইরে নই। দলকে বিড়ম্বনায় ফেলা আমার উদ্দেশ্য নয়। তবে পদত্যাগ করতে বলার কারণটা আমার জানা নেই।’’

এ দিন ‘উত্তীর্ণ’-এ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কাউন্সিলরদের যে-বৈঠক ডেকেছিলেন, সেখানে তিনি ডাক পাননি বলে দাবি করেন শোভন। একই সঙ্গে জানান, দল গড়ার জন্য এক সময় প্রাণের ঝুঁকি নিয়েও কাজ করেছিলেন। পদত্যাগ সেখানে অতটা বড় বিষয়ই নয়।

আরও পড়ুন: রত্নার পাশে শোভনের পরিবার

প্রসঙ্গত, ‘বন্ধু’ বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক এবং সেই কারণে সরকারি ও দলীয় কাজে অবহেলা, পারিবারিক সমস্যা-সহ তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন শোভন। জানান, কলকাতা পুরসভার সঙ্গে তাঁর ‘আত্মিক সম্পর্ক’ রয়েছে। শোভনের বক্তব্য, ‘‘যাঁরা বলছেন কলকাতা পুরসভার ফাইল পড়ে রয়েছে, বিধায়ক হিসেবে ফাইল পড়ে রয়েছে, তাঁরা সত্যের অপলাপ করছেন। বৈশাখী আমার শুভানুধ্যায়ী। আমার কোনও ফাইলে আজ পর্যন্ত সে হাত দেয়নি।’’

২০১০ সালে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে কী ভাবে কলকাতা শহরের আলাদা পরিচিতি তৈরি হয়েছে, কী ভাবে সকলের সহযোগিতায় তা সম্ভব হয়েছে, সে-কথাও এ দিন মনে করিয়ে দেন শোভন। রাজনৈতিক মহলের একাংশের বক্তব্য, মেয়র হিসেবে পদত্যাগের কারণ কী, এ প্রশ্নের উত্তর শোভন কৌশলে মুখ্যমন্ত্রীর কোর্টেই ঠেলে দিয়েছেন। কারণ, এ দিনই বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী শোভনের মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগের কারণকে ‘ব্যক্তিগত’ বলেছেন। প্রসঙ্গত, মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দেওয়ার কারণ হিসেবে শোভন জানিয়েছিলেন ‘আন্ডার কম্পালসন’ বা ‘বাধ্য হয়েই’ তিনি পদত্যাগ করেছেন। যদিও এ দিনের ইস্তফাপত্রে তা লেখা ছিল না। এ প্রসঙ্গে শোভন বলেন, ‘‘দু’টো ভাষার পার্থক্য সকলেই বুঝতে পারবেন।’’ তাঁর প্রতি অনাস্থার কারণেই কি তিনি মেয়র পদে ইস্তফা দিতে বাধ্য হয়েছেন? শোভন বলেন, ‘‘আমার এখনও কেন দলের প্রতি আস্থা রয়েছে, সেটা আমি বলতে পারব। আর যাঁদের অনাস্থা তৈরি হয়েছে, তাঁরা সে বিষয়টা বলতে পারবেন। তবে আমার কাজে নিষ্ঠার (সিনসিয়ারিটি) কোনও অভাব ছিল না।’’

আরও পড়ুন: ‘শোভনদার জীবন গুছিয়ে দিয়েছি আমি’, বললেন বৈশাখী


কিন্তু শুধু ‘বন্ধু’ বৈশাখীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্কই নয়, শোভনের রাজনৈতিক জমি হারানোর পিছনে সাংসদ তথা তৃণমূল নেত্রীর ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের ‘রসায়নের’ ভূমিকা রয়েছে বলে রাজনৈতিক মহলের একাংশে দীর্ঘদিন ধরেই চর্চা চলেছে। মেয়র হিসেবে এই পদত্যাগের পিছনে অভিষেকের কোনও ‘চাপ’ ছিল কি? মেয়রের জবাব, ‘‘অভিষেক আমার ছোট ভাইয়ের মতো। সাংসদ হিসেবে অনেক দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছেন। তবে এ ব্যাপারে উত্তর দেব না।’’
তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ, অন্য কোনও দলে যোগদানের সম্ভাবনা রয়েছে কি না, সে প্রশ্নের উত্তরে মৃদু হেসে শোভন উত্তর, ‘‘যা হবে সকলে দেখতে পাবেন।’’

Sovan Chatterjee Mamata Banerjee
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy