—ফাইল চিত্র।
আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাঙচুরের ঘটনায় তৃণমূল জড়িত থাকার অভিযোগে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী। এ নিয়ে অসন্তোষও প্রকাশ করেছেন তিনি। তবু নিজেদের অবস্থানে অনড় তৃণমূল ছাত্র পরিষদ।
তৃণমূল সূত্রে খবর, ভাঙচুরের ঘটনায় দলের লোকজন জড়িত থাকার অভিযোগ শুনে বুধবার টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্রকে ডেকে পাঠান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষোভ জানার পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে টিএমসিপি ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক আবদুল রউফ ও সভাপতি গিয়াসুদ্দিন মণ্ডলকে তৃণমূল ভবনে ডাকেন অশোক। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজারহাট-নিউ টাউন ক্যাম্পাসে মঙ্গলবার ভাঙচুর কেন হল, তিন দিনের মধ্যে কারণ দর্শাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ওই দু’জনকে। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে টিএমসিপি-র ছাত্র সংসদটিও ভেঙে দেওয়া হয়েছে বলে জানান অশোক।
এত কিছুর পরেও টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি অবশ্য গোটা ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেই দায়ি করছেন। আগামী দিনে টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে এই ধরনের ভাঙচুর বা কলেজ কর্তৃপক্ষের উপরে হামলার অভিযোগ উঠলে, তা বরদাস্ত করা হবে না জানিয়েও এ দিন অশোকবাবু বলেন, ‘‘ছাত্রেরা বারবার উপাচার্যের কাছে ক্যাম্পাসের উন্নয়নের বিষয়ে তদবির করেছেন। কর্তৃপক্ষ সমাধানের চেষ্টা করেননি। ছাত্রেরা আমাকে জানিয়েছেন, উপাচার্যই রউফের কলার চেপে ধরেন। ছাত্রেরা শান্তিপূর্ণ ভাবেই নিজেদের দাবি নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন।’’ আব্দুল রউফ বলেন, ‘‘আগামীকালই রাজ্য কমিটিকে ঘটনার সম্পূর্ণ বিবরণ জানাব।’’
তবে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন উপাচার্য আবু তালেব খান। তিনি বলেন, ‘‘আব্দুল রউফের থেকে দশ মিটার দূরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। কলার ধরেছি, তার প্রমাণ দিক। কোনও ফুটেজ দেখাক।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘উপাচার্য কখনও কোনও ছাত্রের কলার ধরতে আসেন না। আগে আবদুল নিজের আচরণ ঠিক করুক। এ সব মিথ্যা প্রচার হচ্ছে।’’
এসএফআই-এর রাজ্য সভাপতি মধুজা সেন রায়ের আবার বক্তব্য, ‘‘ছাত্রদের দোষ যদি না-ই থাকে, তা হলে শো-কজই বা করল কেন আর ইউনিটই বা ভাঙল কেন?’’
এ দিকে, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে ‘হেনস্থার’ ঘটনায় সাত জনের বিরুদ্ধে এফআইআর করেছে পুলিশ। বুধবার নবান্নে এই খবর জানিয়েছেন আইজি (আইন-শৃঙ্খলা) অনুজ শর্মা। তিনি বলেন, ‘‘অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ১৪৩ ( বেআইনি জমায়েত), ৪৪৭ (অনধিকার প্রবেশ), ৪২৭ ( সম্পত্তি নষ্ট) ও ৩২৩ ( ইচ্ছাকৃত ভাবে আঘাত করা) ধারা দেওয়া হয়েছে। তল্লাশি চলছে, এখনও কাউকে ধরা যায়নি।’’
মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পুলিশকে জানিয়েছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের ঘরে আসেন তৃণমূল চাত্র সংগঠনের এক দল ছাত্র। কর্তৃপক্ষ জানান, সোমবার স্নাতকের দ্বিতীয় বর্ষের গণিতের ‘সাপ্লিমেন্টারি’ পরীক্ষা ছিল। তাতে সকলকে শুধু পাশ করানোই নয়, ৬৫ শতাংশ করে নম্বরের দাবিও করেন ছাত্রেরা। গণিতের আরও একটি যে সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষা রয়েছে, তাতেও তাঁরা বসবেন না বলে দাবি করেন। উপাচার্য দাবি না মানায় শুরু হয় বচসা। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাংশের বক্তব্য, উপাচার্য সিদ্ধান্তে অনড় থাকায় ছাত্রেরা তাঁর ঘরে ভাঙচুর চালান। গণিত বিভাগের প্রধান মহম্মদ নইমকেও হেনস্থা করা হয়। শিক্ষকদের ঘর, কম্পিউটার রুম ও কনফারেন্স রুমেও ভাঙচুর চলে বলে অভিযোগ। যাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছে, তাঁরা সকলেই কি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র? প্রশ্ন উঠছে তা নিয়ে। অনুজ শর্মার বক্তব্য, এ বিষয়ে তাঁর কিছু জানা নেই।
বারবার শিক্ষাক্ষেত্রে এমন নৈরাজ্যে শঙ্কিত আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকেরা এ দিন একটি বৈঠক করেন। আলোচনার বিষয় নিয়ে অবশ্য মন্তব্য করতে চাননি উপাচার্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy