Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
কঙ্কাল-কাণ্ড

পার্থর নার্কো পরীক্ষা চাইল পুলিশ, প্রশ্নে মানবাধিকার

রবিনসন স্ট্রিটের কঙ্কাল-কাণ্ডে ধৃত পার্থ দে-র নার্কো অ্যানালিসিস হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। পার্থবাবুর কাছ থেকে আরও কিছু না বলা তথ্য পাওয়ার আশায় পুলিশ ইতিমধ্যেই ওই পরীক্ষার অনুমতি চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে। কিন্তু আদালত এ বিষয়ে কিছু জানানোর আগেই সরব হয়েছেন চিকিৎসক ও মানবাধিকার কর্মীরা।

পার্থ দে

পার্থ দে

সোমা মুখোপাধ্যায় ও কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৫ ০০:২৯
Share: Save:

রবিনসন স্ট্রিটের কঙ্কাল-কাণ্ডে ধৃত পার্থ দে-র নার্কো অ্যানালিসিস হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। পার্থবাবুর কাছ থেকে আরও কিছু না বলা তথ্য পাওয়ার আশায় পুলিশ ইতিমধ্যেই ওই পরীক্ষার অনুমতি চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে। কিন্তু আদালত এ বিষয়ে কিছু জানানোর আগেই সরব হয়েছেন চিকিৎসক ও মানবাধিকার কর্মীরা। তাঁদের মতে, ওই পরীক্ষায় পার্থবাবুর মানসিক স্বাস্থ্যের আরও অবনতি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। পাশাপাশি, এই পরীক্ষা তাঁর মানবাধিকারেও হস্তক্ষেপের সামিল।
গত ২৮ দিন ধরে পাভলভ মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন পার্থবাবু। নতুন কিছু সূত্রের আশায় তাঁর নার্কো অ্যানালিসিসের অনুমতি চেয়ে আদালতে আবেদন জমা দিয়েছে তারা।
কিন্তু তার আগেই এ নিয়ে আপত্তি তুলেছেন পাভলভের চিকিৎসকদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, কোনও মানসিক রোগীর এই ধরনের পরীক্ষা চিকিৎসা শাস্ত্রের সম্পূর্ণ বিরোধী। এর ফলে পার্থবাবুর বড় ধরনের মানসিক বিপর্যয় হতে পারে। এই ধরনের পরীক্ষার জেরে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মৃত্যুর নজিরও রয়েছে বলে জানান তাঁরা। এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘মানসিক হাসপাতালের কোনও রোগীর এই ধরনের পরীক্ষা শুধু যে মানবাধিকারে হস্তক্ষেপ করা তা-ই নয়, মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনেরও সামিল।’’

যদিও এ ব্যাপারে নীরব থেকেছেন পাভলভের সুপার গণেশ প্রসাদ। পার্থবাবুর নার্কো অ্যানালিসিসের ব্যাপারে পুলিশ তাঁকে জানিয়েছে কি না, প্রশ্ন করা হয় তাঁকে। তিনি বলেন, ‘‘এখনও জানায়নি।’’ যেহেতু পার্থবাবু হাসপাতালে ভর্তি, সুপারকে জানানো কি বাধ্যতামূলক? তিনি বলেন, ‘‘আমি এ ব্যাপারে কিছু জানি না। কিছু বলারও নেই।’’

নার্কো অ্যানালিসিস বলতে ঠিক কী বোঝায়? পুলিশ সূত্রে খবর, এই পরীক্ষার ক্ষেত্রে সোডিয়াম পেন্টোথাল নামে একটি রাসায়নিক, যা সাধারণত অস্ত্রোপচারের সময় অচেতন করতে ব্যবহার করা হয়, সেটি একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় শিরার মাধ্যমে শরীরে ঢোকানো হয়। তার ফলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মস্তিষ্ক হিপনোটিক স্তরে চলে যায়। তার ফলে কোনও তথ্য সে লুকিয়ে রাখতে পারে না। অর্থাৎ, মিথ্যা বলার মতো মানসিক স্থিতিও তার থাকে না।

ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে কলকাতা পুলিশ এবং মানবাধিকার কমিশনকে চিঠি দিয়েছে কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন। তাদের বক্তব্য, ২০১০ সালের ৫ মে সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি কে জি বালাকৃষ্ণনের নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ একটি রায়ে জানায়, নার্কো অ্যানালিসিস, পলিগ্রাফ টেস্টের মতো পরীক্ষার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অনুমতি প্রয়োজন। সেই অনুমতি কোনও বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে নথিভুক্ত করতে হবে। ওই ব্যক্তির আইনজীবীকে আদালতে হাজির থাকতে হবে। আইনজীবীরা জানাচ্ছেন, এ ধরনের পরীক্ষা ভারতীয় সংবিধানের ২০ (৩) ধারার বিরোধী। সেখানে বলা রয়েছে, কোনও অপরাধে অভিযুক্তকে তাঁর নিজের বিরুদ্ধে সাক্ষী হতে বাধ্য করা যাবে না।

বিভিন্ন মহলেই রবিনসন স্ট্রিটের কঙ্কাল-কাণ্ডের অন্যতম চরিত্র পার্থ দে-র মানসিক সুস্থতা নিয়ে এখনও সংশয় রয়েছে। ফলে নার্কো অ্যানালিসিস পরীক্ষার ক্ষেত্রে পার্থের অনুমতি আদালতে গ্রাহ্য হবে কি না, সে প্রশ্নও উঠেছে। সে ক্ষেত্রে কেন এই পরীক্ষার আর্জি জানানো হল, তার কোনও সদুত্তর পুলিশের কাছে মেলেনি। তদন্তকারীদের একাংশের অবশ্য ব্যাখ্যা, পার্থকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময়ে নানা তথ্য উঠে এসেছে। কিন্তু কোনওটির সম্পর্কেই নিশ্চিত হতে পারছে না পুলিশ। পার্থ কিছু তথ্য চেপে যাচ্ছেন বলেও সন্দেহ করা হচ্ছে। এর ফলেই নার্কো পরীক্ষা করতে চাইছেন তদন্তকারীরা। কেন তাঁরা হাসপাতালের অনুমতি চাইলেন না? পুলিশের বক্তব্য, পার্থবাবু আদালতের হেফাজতে রয়েছেন। তাই আদালতের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। পুলিশের একটি সূত্রে খবর, শুধু নার্কো পরীক্ষাই নয়, পার্থের মনের ফরেন্সিক পরীক্ষা করানোরও তোড়জোড় করছেন তদন্তকারীরা।

পাভলভের রোগীদের নিয়ে কাজ করে যে সংগঠন তাদের তরফে রত্নাবলী রায় বলেন, ‘‘পার্থবাবুকে মানসিক রোগী হিসেবে গণ্য করা হয়েছে বলেই মানসিক হাসপাতালে রাখা হয়েছে। কোনও মানসিক রোগীর এই ধরনের পরীক্ষা খুবই ক্ষতিকর। যদি পুলিশ মনে করে তিনি এক জন অপরাধী এবং ইচ্ছাকৃত ভাবে সত্য গোপন করছেন, তবে তাঁকে মানসিক হাসপাতালে কেন রাখা?’’ একই প্রশ্ন তুলেছে মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর-ও। মানবাধিকার কমিশন এই চিঠির প্রাপ্তিস্বীকার করলেও এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি কমিশনের কর্তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE