দেখতে সুশ্রী। চলনে-বলনে স্মার্ট। কথা বলার মাধ্যম সাধারণত হিন্দি। কিন্তু ইংরেজিতেও খই ফোটে।
এরা সকলেই ভিন্ রাজ্য থেকে আসা এক দল তরুণী। পেশা কেপমারি করা। এ রাজ্যে উৎসবের মরসুম হলেই এরা এসে পৌঁছয় হাওড়া স্টেশনের মতো ভিড়ে ভরা স্টেশন চত্বরে। কাজ মূলত ভিড়ে মিশে গিয়ে পুরুষদের নানা ভাবে আকর্ষণ করে তাঁকে সর্বস্বান্ত করা। সুযোগ বুঝে যাত্রীদের থেকে হাত সাফাই করাটাও জলভাত। এ বছরও পুজোর মরসুমে এরা হাওড়া স্টেশনে এসে হাজির হওয়ায় ঘুম উড়ে গিয়েছে রেলপ্রশাসন ও রেল পুলিশের। ওই কেপমারদের পাকড়াও করতে গোটা স্টেশন চত্বর জুড়ে সাদা পোশাকের পুলিশ ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
রেলপুলিশ সূত্রে খবর, এই তরুণীরা সাধারণত আসে দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে। সকলেই যথেষ্ট শিক্ষিত ও কেপমারিতে দক্ষ। বিভিন্ন উৎসবের আগে এই তরুণীরা এসে ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে। আরও জানা গিয়েছে, এই কেপমারেরা মূলত ঘোরাঘুরি করে হাওড়া স্টেশনের নতুন কমপ্লেক্সের ১, ২, ৩ ও ১৩, ১৪, ১৫ নম্বর প্ল্যাটফর্ম-এ। কারণ ওদের লক্ষ্য লোকাল ট্রেনে করে হাওড়া স্টেশনে আসার পরে দূরপাল্লার ট্রেন ধরতে আসা যাত্রীরা।
রেল পুলিশের খবর, ওই তরুণীরা এ ক্ষেত্রেও যাত্রী বিচার করে ‘কাজ’ হাসিল করে। যেমন, কোনও মফস্বল বা গ্রাম থেকে আসা যুবক বা মধ্য বয়স্ককে চিহ্নিত করার পর তাঁকে অনুসরণ করে ‘শিকারে’ নামে। বা স্টেশনে এসে ইতস্তত ঘোরাফেরা করা একা মহিলা বা যুবক দেখলেও জিনিসপত্র হাতানোর চেষ্টা করে।
কী ভাবে যাত্রীদের থেকে কেপমারি করে ওই তরুণীরা?
রেল পুলিশের এক কর্তা জানান, ওই তরুণীরা প্রথমে লোকাল ট্রেন একাধিক ব্যাগ-পত্তর নিয়ে নামা কোনও পরিবারকে অনুসরণ করে দেখে নেয় তাঁরা কোনও দূরপাল্লায় ট্রেন ধরার জন্য যাচ্ছেন কিনা। কোনও কারণে পরিবার কর্তা স্ত্রী-শিশু সন্তানকে প্ল্যাটফর্মে দাঁড় করিয়ে রেখে দূরপাল্লার ট্রেনের খোঁজ নিতে গেলে সেই সুযোগটাকেই কাজে লাগায় কেপমারের দল। ওই কর্তার অপেক্ষারত স্ত্রীর কাছে গিয়ে তারা যেচে আলাপ করে গল্প জমায়। এরই ফাঁকে কেপমারের দলের কেউ মহিলার সঙ্গে থাকা একাধিক ব্যাগের মধ্যে কোনও একটা ব্যাগ নিঃশব্দে সরিয়ে নিয়ে কেটে পড়ে।
ওই পুলিশ কর্তা বলেন, ‘‘এর আগে এই ভাবে অনেক মহিলার কাছ টাকার ব্যাগ সরিয়ে নিয়েছে। পাশাপাশি, পুরুষদের নানা ভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করে পকেট থেকে মানিব্যাগও উধাও করে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। অনেক সময়ে কোনও যুবকের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ তুলে ওই তরুণীরা তাঁকে ঘিরে ফেলে তার জিনিসপত্র বা মানিব্যাগ উধাও করে দেয়।’’
হাওড়ার রেল পুলিশ সুপার নীলাদ্রি চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পুজোর সময়ে এই সব ঘটনা এড়াতে সব রকমের প্রস্তুতি নিয়েছি। নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। স্টেশনের ভিতরে সাদা পোশাকের পুলিশ ছাড়াও অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।’’
হাওড়ায় আরপিএফের সিনিয়র ডেপুটি কম্যান্ড্যান্ট সৌরভ ত্রিবেদী বলেন, ‘‘এই ধরণের কেপমারির ঘটনা ঘটলে সাধারণ রেল পুলিশ দেখে। তবু আমরা স্টেশনের ভিতর থাকা সিসিটিভি ক্যামেরা ও আমাদের ক্রাইম ইনটেলিজেন্স ব্রাঞ্চের মাধ্যমে নজরদারি চালাচ্ছি। এ রকম ঘটনা ঘটলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy