Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

জব্দ হল না শব্দ, বন্যা অভিযোগের

রাত ৮টা বাজতে তখনও ঢের বাকি। বেজে উঠল পরিবেশপ্রেমী সংগঠনের ফোন। ও পারে কসবার এক বাসিন্দা। আতঙ্কিত গলায় জানালেন, দেদার শব্দবাজি ফাটছে ওই এলাকায়।

দেদার: ভবানীপুরের রাস্তায় ফাটছে বাজি। মঙ্গলবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

দেদার: ভবানীপুরের রাস্তায় ফাটছে বাজি। মঙ্গলবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৮ ০২:১৪
Share: Save:

রাত ৮টা বাজতে তখনও ঢের বাকি। বেজে উঠল পরিবেশপ্রেমী সংগঠনের ফোন। ও পারে কসবার এক বাসিন্দা। আতঙ্কিত গলায় জানালেন, দেদার শব্দবাজি ফাটছে ওই এলাকায়।

সেই ফোন রাখতেই আবার ফোন এল ওই কন্ট্রোল রুমে। এ বার অভিযোগ ভবানীপুর থেকে। পরের ফোন সরশুনা থেকে।

৯০ ডেসিবেলের বেশি মাত্রার শব্দবাজি আগেই নিষিদ্ধ হয়েছিল। এ বার সুপ্রিম কোর্ট দেশে বাজি পোড়ানোর জন্য দিনে দু’ঘণ্টা সময় ধার্য করেছে। এ রাজ্যে রাত ৮টা থেকে ১০টার মধ্যেই বাজি পো়ড়ানোর ‘আইনি’ সময়। কিন্তু মঙ্গলবার, কালীপুজোর সন্ধ্যায় মহানগরীর একাংশ দেখিয়ে দিল, শীর্ষ আদালত যতই নির্দেশ দিক, তারা চলবে তাদের মর্জিতে। এ দিন সন্ধ্যা হতেই বিভিন্ন এলাকায় দেদার বাজি ফাটতে শুরু করে। আতসবাজির সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে ফাটানো হয়েছে শব্দবাজি। সন্ধ্যার মধ্যেই কলকাতা পুলিশ ও সবুজ মঞ্চ— দু’পক্ষের খাতাতেই শব্দদূষণের প্রচুর অভিযোগ জমা পড়ে যায়। বৌবাজার, গড়িয়াহাট, রবীন্দ্র সরোবর, কসবার মতো একাধিক থানা নিজেদের এলাকায় বাজি পোড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট জায়গা করে দিয়েছিল। কিন্তু সর্বত্রই তা মানা হয়েছে, এমন নয়। অভিযোগ, রাত ১০টার পরে শহরের বিভিন্ন এলাকায় শব্দবাজির দাপট কমার বদলে আরও বাড়তে থাকে।

পরিবেশকর্মীদের যৌথ সংগঠন সবুজ মঞ্চের আহ্বায়ক নব দত্ত জানান, সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত কলকাতা ও লাগোয়া এলাকা থেকে ১৮টি অভিযোগ এসেছে তাঁদের কাছে। এর মধ্যে তিনটি অভিযোগ ডিজে বক্স ও মাইক বাজানো নিয়ে। বাকিগুলি শব্দবাজি সংক্রান্ত। সব থেকে বেশি শব্দবাজি ফাটার অভিযোগ মিলেছে সোনারপুর-গড়িয়া এলাকা থেকে। তার পরেই রয়েছে কসবা-হালতু অঞ্চল। অভিযোগ মিলেছে বেদিয়াডাঙা লেন, ভবানীপুর, শেক্সপিয়র সরণি, সরশুনা, বেলেঘাটা, পাটুলি থেকেও।

নববাবু জানান, সন্ধ্যার শুরুতেই এত অভিযোগ গত কয়েক বছরেও দেখা যায়নি। তাঁর কথায়, ‘‘রাত ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত আতসবাজি পোড়ানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মনে হচ্ছে, যেন বিকট শব্দের বাজিও অনুমোদন পেয়ে গিয়েছে।’’ রাতে বাজি পোড়ানোর পরিস্থিতি সরেজমিন খতিয়ে দেখতে বেরোন সবুজ মঞ্চের সদস্যেরা। আজ, দীপাবলিতেও সবুজ মঞ্চের কন্ট্রোল রুম (৯৮৩১৩১৮২৬৫/ ৯৮৩০৮২৮৫৬০) খোলা থাকবে।

পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাত ৮টা নাগাদ শ্যামবাজার থেকে অভিযোগে আসে, সেখানে একের পর এক শব্দবাজি ফাটছে। দক্ষিণের বিজয়গড়, বাঘা যতীন-সহ বিস্তীর্ণ এলাকা থেকেও একই অভিযোগ আসতে থাকে। রাতের দিকে জানা যায়, ভিআইপি রোডের কয়েকটি আবাসনের ছাদে বাজি পোড়ানো রুখতে তালা মেরে দেয় পুলিশ।

হরিদেবপুরে অসুস্থ বাবাকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান এক তরুণী। সেখানে পরপর শব্দবাজি ফাটছিল। সোদপুর, ঘোলার মতো শহরতলিতেও একই অবস্থা। পানিহাটি, ঠাকুরপুকুর থেকে অভিযোগ পেয়েছে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। দেদার শব্দবাজি ফাটার অভিযোগ এসেছে মধ্য হাও়ড়া থেকেও। পর্ষদের ৬টি দল শহরের বিভিন্ন প্রান্তে বেরিয়েছিল। আজ, দীপাবলিতেও তাদের কন্ট্রোল রুম খোলা থাকবে। নাগরিকেরা ২৩৩৫-৮২১২/৩৯১৩ নম্বরে (‘২২৩৫’ নয়) ফোন করে অভিযোগ জানাতে পারবেন।

কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, বাইপাস লাগোয়া এলাকা থেকেই সব চেয়ে বেশি ফোন এসেছে। সল্টলেকের কিছু বাসিন্দাও লালবাজারে ফোন করেন। সেগুলি বিধাননগর পুলিশকে জানানো হয়েছে। গাড়ির পাশাপাশি অটো ও মোটরবাইকে চেপে পুলিশকর্মীরা অলিগলিতে টহল দিয়েছেন। পুলিশের একটি সূত্রের অবশ্য দাবি, মানুষ সচেতন হয়েছেন বলেই অভিযোগ বেশি মিলেছে।

লালবাজার সূত্রে জানানো হয়েছে, রাত ৮টা পর্যন্ত ২৫টি অভিযোগ জমা পড়েছে সেখানে। নাগরিকদের প্রশ্ন, দফায় দফায় নিষিদ্ধ বাজি ধরপাক়়ড় করা সত্ত্বেও এত বাজি ফাটল কী করে? পরিবেশকর্মীদের ব্যাখ্যা, বাজেয়াপ্ত করা বাজি নেহাতই হিমশৈলের চূড়া। ফাঁক গলে বহু শব্দবাজি বাজারে এসেছে এবং বিকিয়েছে। তাই এ বারও বদলাল না শব্দবাজির ছবিটা!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pollution Crackers Fire Crackers Sound Crackers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE