আয়োজন: ক্লাসেই সাজানো নানা বই। মায়ের সঙ্গে দেখছে এক বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু। বৃহস্পতিবার, দমদমে। নিজস্ব চিত্র।
ছবি আঁকার হরেক বই ও রঙিন গল্পের বই দেখে আনন্দ ধরছিল না বছর আটেকের শ্রেয়ানের। বই ভীষণ পছন্দ তার। বাবার হাত ছেড়ে দিয়ে সে নিজেই ক্লাসের এ ঘর-ও ঘর ঘুরে বই নেড়েচেড়ে দেখছিল।
দমদমের উন্মেষে বৃহস্পতিবার বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু-কিশোরদের জন্য আয়োজন করা হয়েছিল এক দিনের বইমেলার। সেখানে চেনা ক্লাসরুমের বেঞ্চে সাজানো ছিল ছোটদের জন্য বাছাই করা রঙিন গল্পের বই, আঁকার বই, হাতের লেখা ও ‘অ্যাক্টিভিটি’র বই। সে সব বেছে নিতে সাহায্য করছিলেন স্কুলের বিশেষ শিক্ষকেরা। ভিড় নেই, তাই ভয় নেই হারিয়ে যাওয়ার। নেই অচেনা শব্দ, তাড়াহুড়ো, বাবা-মায়ের বকুনি, অজানা লোকের অস্বাভাবিক দৃষ্টি। নিজের মতো করে ঘুরে-দেখে বই পছন্দ হলে চেয়ার-টেবিলে বসে পড়ার সুযোগও ছিল।
বই বাছতে ব্যস্ত এক অভিভাবক তনুশ্রী ঘোষ বললেন, ‘‘বইমেলায় কখনও যায়নি মৌবনী। ওর অটিজ়ম আছে। তাই ভিড়ে নিয়ে যাওয়ার সাহস করিনি। এখানে ও নিজেই একটা বই বেছে নিয়েছে। এটাই সব চেয়ে আনন্দের।’’ বছর দশেকের অনুস্মিতার আবার তর সয় না। পছন্দের বই নিয়ে পাশের ঘরে টেবিল-চেয়ারে বসে পাতা ওল্টাতে থাকে। সেই ফাঁকে মা জয়শ্রী সেন সরকার অন্য বই কিনে ফেলেন। জয়শ্রীর কথায়, ‘‘বইমেলা কী, ধারণা ছিল না মেয়ের। এ বছর মেলায় গান-বাজনা শুনে মুক্তমঞ্চের পাশে কিছু ছেলেমেয়ের সঙ্গে নেচেছে। আজ তো দেখি নিজেই বই বেছে এনেছে।’’
বিশেষ শিক্ষিকা কাকলি কর জানাচ্ছেন, এত ভিড়, শব্দে বইমেলায় গিয়ে বেশির ভাগ বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ছেলেমেয়ের অসুবিধা হয়। তার উপরে সামান্য নিরিবিলি জায়গাও থাকে না, যেখানে ওরা নিজেদের মতো থাকতে পারে। সে সব ভেবেই চেনা জায়গায় এই মেলার আয়োজন। তাঁর কথায়, ‘‘এতে ওদের বইমেলায় অনেক বই থেকে একটা বেছে নেওয়ার ধারণা যেমন তৈরি হয়, তেমনই মায়েরাও বুঝতে পারবেন ছেলেমেয়ের পছন্দ।’’ অভিভাবকদের দাবি, বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের সুবিধার কথা ভেবে এ রকম বইমেলার আয়োজন করা হলে ওদের পড়ায় উৎসাহিত করা যেতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy