Advertisement
E-Paper

SSKM: বিদ্রুপ সহ্য করে অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে লড়াই, ‘জয়ী’ দম্পতি

ঘাটালের বাসিন্দা দিব্যেন্দু মাইতি পেশায় সোনার গয়না তৈরির কারিগর। কর্মসূত্রে থাকেন মুম্বইয়ে। মাইতি দম্পতির আর একটি ছেলে রয়েছে।

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২১ ০৬:৫৮
অস্ত্রোপচারের পরে হাসপাতালে মায়ের সঙ্গে রোহন। (ইনসেটে) অস্ত্রোপচারের আগে।

অস্ত্রোপচারের পরে হাসপাতালে মায়ের সঙ্গে রোহন। (ইনসেটে) অস্ত্রোপচারের আগে। নিজস্ব চিত্র।

‘তোমার গর্ভ ভাল নয়, তাই তো ছেলেটার এমন অবস্থা’— প্রতিনিয়ত প্রতিবেশীদের থেকে এমন কথা শুনতে শুনতে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল ঘাটালের অঞ্জনা মাইতির। স্বামী পেশার তাগিদে ভিন্ রাজ্যে থাকেন। তাই মনের কষ্ট কাউকে বলতে না পেরে ঘরের কোণে লুকিয়ে চোখের জল ফেলতেন রোহনের মা। কাউকে বোঝাতে পারতেন না, একরত্তি ছেলের জন্মগত ভাবে ঠোঁট থেকে শুরু করে দু’চোখ পর্যন্ত কাটা থাকার সমস্যাটি আসলে একটি রোগ।

দিনের পর দিন গঞ্জনা সহ্য করে অঞ্জনা দিন গুনতেন ছেলের সুস্থতার। সম্প্রতি দ্বিতীয় অস্ত্রোপচারের পরে আড়াই বছরের রোহনের চোখের কাটা অংশও জোড়া লাগিয়ে দিয়েছেন এসএসকেএম হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকেরা। এখন ছোট্ট রোহনকে নিয়ে বাড়ি ফেরার অপেক্ষার ফাঁকেই অঞ্জনা বললেন, ‘‘কিছু মানুষ এখনও কুসংস্কারে বিশ্বাস করেন। তাঁদের বোঝা উচিত, সব রোগেরই চিকিৎসা রয়েছে। ছেলেকে নিয়ে আর কোনও চিন্তা নেই।’’

ঘাটালের বাসিন্দা দিব্যেন্দু মাইতি পেশায় সোনার গয়না তৈরির কারিগর। কর্মসূত্রে থাকেন মুম্বইয়ে। মাইতি দম্পতির আর একটি ছেলে রয়েছে। রোহন তাঁদের ছোট ছেলে। অঞ্জনা জানান, জন্মের পরেই ছেলের এমন অবস্থা দেখে তাঁরা ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, শিশুটি ‘রেয়ার ফেশিয়াল ক্লেফ্ট’-এ আক্রান্ত ছিল। ঠোঁট থেকে শুরু করে গালের দু’পাশ দিয়ে দুই চোখ পর্যন্ত তার কাটা ছিল। এসএসকেএমের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক গৌতম গুহ বলেন, ‘‘প্রতি এক হাজারে এক জন শিশুর ঠোঁট কাটা থাকার সমস্যা হয়। কিন্তু, এমন বিরল ফেশিয়াল ক্লেফ্ট-এ আক্রান্তের সংখ্যা প্রতি এক লক্ষে এক জন। আমার চাকরি জীবনে এখনও পর্যন্ত মাত্র চার-পাঁচটি এমন ঘটনা পেয়েছি।’’

অঞ্জনা জানাচ্ছেন, ছ’মাসের রোহনকে প্রথম পিজিতে নিয়ে আসেন তাঁরা। তখন প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে প্রথম অস্ত্রোপচার করে তার ঠোঁট ঠিক করা হয়। এর পরে করোনার কারণে আর হাসপাতালে আসতে পারেননি ওই দম্পতি। সম্প্রতি ফের রোহনকে পিজি-তে নিয়ে আসেন পরিজনেরা। চিকিৎসকেরাও অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন। সিটি স্ক্যানে দেখা যায়, শিশুটির দু’চোখের ঠিক নীচে হাড় নেই। তখন কোমর থেকে হাড় কেটে সেখানে বসানোর পাশাপাশি জ্যামিতিক পদ্ধতিতে টিসুগুলি পুনরায় নির্দিষ্ট জায়গায় প্রতিস্থাপন করে চোখের কাটা অংশটি জুড়ে দেন প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকেরা।

গৌতমবাবুর নেতৃত্বে শিক্ষক-চিকিৎসক সন্দীপ বসু, রবি বিলুনিয়া, রুপাল নন্দা এবং অ্যানাস্থেটিস্ট চৈতি মাজি প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে অস্ত্রোপচারটি করেন। গৌতমবাবু, সন্দীপবাবুরা জানাচ্ছেন, গর্ভাবস্থায় যখন ভ্রূণের বৃদ্ধি ঘটে তখন বিভিন্ন অংশ জুড়ে মুখমণ্ডল তৈরি হয়। সেই সময়ে দু’টি অংশ না জোড়ার ফলেই এমন পরিস্থিতি দেখা দেয়। তাঁদের কথায়, ‘‘জিনগত কারণ-সহ গর্ভাবস্থায় ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, আয়রন ও ফলিক অ্যাসিডের ঘাটতি, অপুষ্টির কারণেও ভ্রূণের বৃদ্ধির সময়ে এমন বাধা তৈরি হতে পারে।’’

এখন প্রতিদিন ভিডিয়ো-কলে ছেলের সঙ্গে কথা বলছেন দিব্যেন্দু। মাইতি দম্পতির মুখে জয়ের হাসি। আর হাসপাতালের শয্যায় বসে পুতুল নিয়ে খেলায় মেতে তাঁদের সন্তান। ‘তুমি কি দুষ্টুমি করছ?’ মায়ের কথা শুনে হেসে লুটিয়ে পড়ে রোহন। তা দেখে কান্না চেপে অঞ্জনা বলেন, ‘‘এই হাসিই তো আমাদের সব অপমানের উত্তর।’’

SSKM Rare Disease
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy