সপরিবার: দুই সন্তান ও দেবীকে নিয়ে পুটকি লায়েক। নিজস্ব চিত্র
সরকারি হাসপাতাল গুরুতর অসুস্থকে প্রত্যাখ্যান করে, রোগীকে অস্ত্রোপচার না–করে ফেলে রাখে, ট্রলিটুকু দিতে চায় না, রোগীর পরিজনেদের সঙ্গে দুর্ব্যহার করে—এমন অভিযোগ ভূরি ভূরি। কিন্তু সেই হাসপাতালই যে মৃত রোগীর অসহায় স্ত্রী-সন্তানদের জন্য অন্ন ও মাথা গোঁজার সংস্থান করে দেয়, তার নজির রাখল এসএসকেএম।
সরকারি হাসপাতালে হাজার রোগীর ভিড়ে মিশেই একটি ‘কেস’ হিসেবে এসেছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরার কানুরাম গ্রামের পিন্টু লায়েক। মাস ছ’য়েক আগে। রাজমিস্ত্রির জোগাড়ে হিসেবে কাজ করা পিন্টু বাড়ি বানানোর কাজ করতে গিয়ে উঁচু জায়গা থেকে পড়ে যান। তাঁর গলার নীচ থেকে শরীরের বাকি অংশ অসাড় হয়ে গিয়েছিল। কোনও রকমে তাঁকে পিজিতে এনেছিলেন স্ত্রী পুটকি লায়েক। কোলের ছেলেটিকেও সঙ্গে এনেছিলেন। সাড়ে তিন বছরের মেয়ে রিয়া ছিল প্রতিবেশীদের কাছে।
পিজি সূত্রে খবর, কপর্দকহীন অবস্থায় এসেছিল পরিবারটি। শিশুটির দুধ কেনার পয়সাও ছিল না। অপুষ্টিতে ভুগছিল মা-শিশু। অসুস্থ রোগীর জন্য দৌড়োদৌড়ি তো দূর, পুটকি এবং তাঁর কোলের সন্তান হাসপাতালের একধারে বসে ধুঁকছিলেন। হাসপাতাল কর্মীদের কয়েক জন বিষয়টি দেখে কর্তৃপক্ষকে জানান।
অসংখ্য রোগীর মধ্যে বিষয়টিতে মন না-ও দিতে পারতেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তা হয়নি। পিন্টুর চিকিৎসার পাশাপাশি তাঁর স্ত্রী-সন্তানের প্রতি দিনের খাবারের ব্যবস্থা করেছিল পিজি। শিশুটিকে নিওনেটাল কেয়ার ইউনিটেও রাখা হয়। দেড় মাস চিকিৎসাধীন থাকার পরে পিন্টু মারা যান। পরিবার ফিরে যায় গ্রামে। কিন্তু তাঁদের সঙ্গে অদ্ভুত আত্মীয়তা তৈরি হয় পিজি কর্তাদের। তাঁরা গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্যদের মাধ্যমে পরিবারটির খোঁজ রেখেছিলেন।
কিছু দিন আগে তাঁরা খবর পান, না খেয়ে মরতে বসেছেন পুটকি আর তাঁর দুই সন্তান। দেরি করেননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সুপার মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘পঞ্চায়েতের সঙ্গে কথা বলে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা মারফত পুটকি, তাঁর সাড়ে তিন বছরের মেয়ে আর ন’মাসের ছেলেকে নিয়ে আসা হয়। সঙ্গে আসে গ্রামেরই আর একটি অনাথ বাচ্চা মেয়ে দেবী। হাসপাতালে সাফাইকর্মীর কাজে নিযুক্ত করা হয় পুটকিকে।’’ তার সঙ্গের তিনটি বাচ্চার থাকার জায়গা হয় হস্টেল চত্বরের পাম্পঘর।
আরও পড়ুন: নবজাতক বিভাগ পঙ্গু পিজিতে
সাড়ে ছ’হাজার টাকা মাসমাইনের কাজ শুরু করেছেন পুটকি। ইএসআইয়ের সুবিধা, পিএফ-ও পাবেন। নতুন জামা গায়ে দিয়ে পুটকি হেসে বলেছেন, ‘‘হাসপাতাল না থাকলে না খেয়ে মরতাম। নিজের জনেরাও এত করে না।’’ পুটকির চাকরির জন্য যিনি সবচেয়ে বেশি উদ্যোগী হয়েছিলেন, পিজির সেই অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার সেবন্তী মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী সরকারি চিকিৎসায় মানবিক মুখের উপর জোর দেন। চিকিৎসার পরিধি ছাড়িয়ে রোগীর পরিবারের সার্বিক কল্যাণে যদি সেই মানবিকতাকে ছড়িয়ে দেওয়া যায়, তার থেকে ভাল আর কী হতে পারে?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy