প্রতীকী ছবি।
টিকিটের বদলে টোকেন। সরকারি হাসপাতালে ‘টিকিট’-এর বদলে শুরু হতে চলেছে বারকোড লাগানো টোকেন।
ভবিষ্যতে সেই টোকেন মারফত একটি নম্বর তুলে দেওয়া হবে রোগী বা তাঁর আত্মীয়ের হাতে। হাসপাতালের বহির্বিভাগে থাকবে ‘ইলেকট্রনিক ডিসপ্লে বোর্ড’। যে বিভাগের চিকিৎসকের কাছে রোগী যেতে চান, সেই ঘরের নম্বর আর রোগীর নম্বর ফুটে উঠলে সংশ্লিষ্ট রোগী সেই চিকিৎসকের ঘরে ঢুকবেন। বারকোডে ক্লিক করলে চিকিৎসকের সামনে রাখা কম্পিউটারেও ফুটে উঠবে রোগী সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য। সেখানেই ওযুধ লিখবেন চিকিৎসক। বার কোড নিয়ে হাসপাতালের ওষুধের দোকানে গেলে, সেখানেও এক ক্লিকে কম্পিউটার স্ক্রিনে ফুটে উঠবে ওষুধের নাম।
কয়েক বছর আগে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কও ঠিক এ ভাবে টোকেন ব্যবস্থা চালু করেছে। এমনকী, পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্রেও এই ব্যবস্থা রয়েছে।
রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য জানান, নভেম্বরে এই ব্যবস্থা পাইলট প্রকল্প হিসেবে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে চালু করা হয়েছে। এটি সফল হলে প্রথমে কলকাতায় এবং পরে রাজ্যের সব সরকারি হাসপাতালে তা চালু হবে।
দেবাশিসবাবু জানান, টোকেন চালু হলে অনেক সুবিধা হবে। তাঁর কথায়, ‘‘চিকিৎসকদের হাতের লেখা নিয়ে অনুযোগ বহু দিনের। ছোট টিকিটে চিকিৎসকের লেখা ওষুধের নাম বুঝতে অনেক ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। ই-প্রেসক্রিপশন চালু হলে রোগী চাইলে চিকিৎসকের থেকে প্রেসক্রিপশনের প্রিন্ট আউট নিয়ে নেবেন।’’ এমন ব্যবস্থা কিছু বেসরকারি হাসপাতালে এখন চালু রয়েছে।
এত দিন নিয়ম ছিল, বহির্বিভাগে যিনি দেখাতে আসবেন, তিনি ২ টাকা দিয়ে একটি টিকিট করাবেন। রোগীর কী সমস্যা, তাঁকে কী কী পরীক্ষা করাতে হবে, কী ওষুধ খেতে হবে — যাবতীয় তথ্য ওই টিকিটে লিখে দিতেন চিকিৎসকেরা।
ন্যাশনাল মেডিক্যালের সুপার পীতবরণ চক্রবর্তী জানান, দিন দশ আগে তাঁর হাসপাতালের কার্ডিওলজি, নিউরোলজি, ইউরোলজি, ইএনটি-সহ বেশ কয়েকটি বিভাগে নতুন এই ব্যবস্থা চালু হয়েছে। এই সব বিভাগের জন্য এখন টিকিট দেওয়া অবশ্য বন্ধ করা হয়নি। টিকিটের সঙ্গে টোকেনও দেওয়া হচ্ছে। ওই সব বিভাগের বাইরে ডিসপ্লে বোর্ডে টোকেন নম্বর ফুটে উঠছে। চিকিৎসক কম্পিউটার থেকে বার করে ই-প্রেসক্রিপশনও দিচ্ছেন।
সুপারের কথায়, ‘‘এই সব বিভাগে টিকিট কোনও কাজে আসছে না। কিন্তু, যে হেতু সব বিভাগে এখনও এই ব্যবস্থা চালু করা যায়নি, তাই, কিছু বিভাগে টিকিট দেওয়া বন্ধ করা যাচ্ছে না। সব বিভাগে নতুন এই ব্যবস্থা চালু হয়ে গেলে টিকিট দেওয়াটা একেবারে বন্ধ করে দেওয়া হবে।’’
সরকারি হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকদের মতে, এই ব্যবস্থায় অনেকগুলি সুবিধা হবে। এক, বহির্বিভাগে দেখাতে গেলে টিকিট করানোর জন্য এখন সাধারণ মানুষকে যতক্ষণ লাইনে দাঁড়াতে হয়, সেই সময় অনেকটা কমে যাবে। টিকিট লিখতে যত সময় লাগে, তার অনেক আগেই টোকেন বেরিয়ে আসবে।
দুই, টোকেন নিয়ে বহির্বিভাগে ঢুকলে রোগী বুঝতে পারবেন, কতক্ষণ তাঁকে অপেক্ষা করতে হবে। এখন সবাই হাতে টিকিট নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের সামনে লাইন করে দাঁড়িয়ে পড়েন। যে চিকিৎসকেরা রোগী দেখেন, প্রায় তাঁদের ঘাড়ের উপরে গিয়ে দাঁড়িয়ে যান অনেকে। সেটা বন্ধ হবে। ডিসপ্লে বোর্ড দেখলে বোঝা যাবে কখন রোগীর ডাক পড়বে। বহির্বিভাগে ভিড়ও কমবে।
এত দিন বহির্বিভাগে দেখতে আসা রোগীদের কোনও তথ্যভাণ্ডার সরকারি হাসপাতালে রাখা হতো না। নতুন টোকেন ব্যবস্থা চালু হলে বহির্বিভাগে দেখাতে আসা রোগীদের তথ্য ভাণ্ডারও তৈরি করা যাবে।
এক কথায় ‘স্মার্ট’ হচ্ছে সরকারি হাসপাতাল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy